Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

আতঙ্ক বাড়াচ্ছে করোনা সুরক্ষা সামগ্রীর বর্জ্য

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২০, ১১:৪১

আতঙ্ক বাড়াচ্ছে করোনা সুরক্ষা সামগ্রীর বর্জ্য

করোনাকালিন বর্জ্য মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে। ব্যবহৃত মাস্ক, পিপিই, হ্যান্ড গ্লাভস, সার্জিক্যাল মাস্ক ফেলে দেয়া হচ্ছে যত্রতত্র। করোনায় মৃত ব্যক্তিদের ব্যহৃত সামগ্রি, জামাকাপড়ও ফেলা দেয়া হচ্ছে এখানে সেখানে। অন্য সাধারণ আবর্জনার মতোই মনে করা হচ্ছে অতিসংক্রমণ ভাইরাসসমৃদ্ধ করোনা আবর্জনাকে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে আসা যে কোনো কিছু থেকেই এই রোগের সংক্রমণের ঝুঁকি আছে। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য আক্রান্তদের ব্যবহৃত, হাসপাতাল ও বাড়িতে সৃষ্ট বর্জ্য আলাদাভাবে সংগ্রহ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তা পুড়িয়ে ফেলা বা মাটিতে পুঁতে ফেলার কথা বলে থাকেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

তবে দেশের করোনা চিকিৎসায় নির্ধারিত কোনো হাসপাতালে বর্জ্য শোধনের ব্যবস্থা নেই। সারা দেশে একশর বেশি হাসপাতালে করোনাক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালগুলোর বিপুল পরিমাণের চিকিৎসা বর্জ্য অস্বাস্থ্যকরভাবে ফেলে দেয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে মিশছে গৃহস্থালি আবর্জনা। হাসপাতাল ও বাসাবাড়ির ময়লা মিশে ক্লিনিক্যাল বর্জ্যে পরিণত হচ্ছে। এতে সারা দেশে সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। প্রতিনিয়ত এসব বর্জ্য পানি, খাবার, মাটি, বাতাস, পশু-পাখির মাধ্যমে মানুষ ও পরিবেশের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, করোনা সংক্রমণের পর থেকে দেশে প্রায় ১৫ হাজার টনের বেশি বর্জ্য তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ১ হাজার ৩১৪ টন সার্জিক্যাল হ্যান্ড গ্লাভস বর্জ্য ও ৪৪৭ টনের বেশি সার্জিক্যাল মাস্কের বর্জ্য তৈরি হয়েছে। এ ধরনের বর্জ্যরে সঠিক ও যথাযথ ব্যবস্থাপনা না থাকার ফলে পরিবেশের ক্ষতিসাধন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ দেশের মানুষ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

জানা গেছে, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে রাজধানীতে পাঁচ শতাধিক হাসপাতাল আছে। এর মধ্যে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউট ছাড়া অন্য কোথাও আধুনিক মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তির মেডিকেল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সলিউশন নেই। তবে এখানে করোনা চিকিৎসা হয় না। এর আগে ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি হাসপাতালে ইনসিনারেটর মেশিনের মাধ্যমে এসব বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলা হতো। কিন্তু বর্তমানে সেগুলোও প্রায় অকেজো হয়ে পড়ে আছে। ঢাকার বাইরে ছয়টি বিভাগীয় শহরের এ ধরনের বর্জ্য শোধনে নেই আধুনিক কোনো ব্যবস্থা। ফলে হাসপাতালগুলো থেকে ময়লা নিয়ে কোথাও মাটিতে পুঁতে ফেলা হচ্ছে। কোথাও ফেলে দেয়া হচ্ছে ময়লার ভাগাড়ে। কোথাও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে বাতাস বিষাক্ত করে তোলা হচ্ছে। সঠিক প্রক্রিয়ায় মেডিকেল বর্জ্য জীবাণুমুক্ত করে অপসারণ করা যাচ্ছে না। এতে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও সংক্রমণের শঙ্কা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মান অনুযায়ী পিপিই একবার ব্যবহার করার পর তা বিপজ্জনক বর্জ্য হিসেবে গণ্য হয়। পিপিই ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের বিপজ্জনক বর্জ্য যেমন ফেসিয়াল টিস্যু, গজ, ব্যান্ডেজ, মুখোশ, রোগীদের ব্যবহৃত অক্সিজেন মাস্ক, ন্যাসোফেরিঞ্জিয়াল সোয়াবের টেস্ট টিউব, স্যালাইন ব্যাগ, ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ, সূচ ইত্যাদি। কভিড-১৯ মোকাবেলায় বিশেষভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ব্যবহারের পর ধ্বংস না করায় এগুলোই নতুনভাবে সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, ১৯ জুন পর্যন্ত সরকার দেশের হাসপাতালগুলোতে ২৩ লাখ ৪১ হাজার ৬০৫ সেট পিপিই বিতরণ করেছে। যা থেকে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ লাখ কেজি বিপজ্জনক চিকিৎসা বর্জ্য উৎপাদিত হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরাও সরকারি সরবরাহ ছাড়াই ব্যক্তিগতভাবে পিপিই ব্যবহার করছেন। যার ফলে অদ্যাবধি বিভিন্ন কভিড হাসপাতালগুলোতে যে পরিমাণ চিকিৎসা বর্জ্য উৎপাদন হয়েছে এবং হচ্ছে তার জন্য মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিক প্রযুক্তি হিসেবে মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তি স্থাপন করা এখন সময়ের দাবি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

পরিবেশবাদী বেসরকারি সংস্থা এনভায়রমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-এসডো এক মাসে উৎপাদিত প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে গবেষণা করেছে। তারা বলছে, ২৬ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হয়েছে সাড়ে ১৪ হাজার টন। যার মধ্যে শুধু গ্লাভসই ছিলো ৫ হাজার ৮৭৭ টন। এসব বর্জ্য পরিশোধনে গুরুত্ব না দিলে মাটি ও পানির মাধ্যমে জীবাণু প্রবেশ করতে পারে খাদ্যচক্রে। তাই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সাধারণ বর্জ্যরে সঙ্গে না মিশিয়ে আলাদা ব্যাগে এসব বর্জ্য সংগ্রহ করার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা। তারা বলছেন, এভাবে যত্রতত্র ফেলা নিরাপত্তা সামগ্রীর মাধ্যমে মাটি ও পানিতে ছড়াচ্ছে জীবাণু। যা খাদ্যচক্রে প্রবেশ করে ঘটাতে পারে রোগের ভয়াবহ বিস্তার। 


ঝুঁকির বিষয়ে জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, মাস্ক, গ্লাভসসহ যে কোনো ধরনের মেডিকেল বর্জ্য বাইরে ফেলা উচিত নয়। সরকারি-বেসরকারি যে প্রতিষ্ঠানই হোক, তাদের মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার যে গাইডলাইন আছে, সেগুলো অনুসরণ করে কাজ করা উচিত। করোনার এই সময়ে যেভাবে মাস্ক, গ্লাভস যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে, তাতে সংক্রমণ মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। মেডিকেল বর্জ্যগুলো অটোক্লেভস মেশিনের মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত করে তা বায়োসেফটিক্যাল ব্যাগে ভরে রাখা উচিত। পরে এসব বর্জ্য উচ্চ তাপমাত্রায় পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আর বাসাবাড়িতে যারা এসব সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করছেন, তাদের নিয়ম অনুযায়ী এসব সামগ্রী আলাদা ব্যাগে রেখে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের হাতে তুলে দিতে হবে।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস একটি বৈশ্বিক সমস্যা। আমাদের বাংলাদেশও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও দেশীয় বিশেষজ্ঞদের মতে এ ভাইরাস ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি এবং এক জনগোষ্ঠি থেকে অন্য জনগোষ্ঠিতে সংক্রমিত হয়। অধিকন্তু করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তির ব্যবহৃত ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি থেকেও এ ভাইরাস সংক্রমিত হয়। কিন্তু দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ব্যবহৃত ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি (পিপিই), হ্যান্ড গ্লাভস, সার্জিক্যাল মাস্ক নির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থাপনা ছাড়াই সাধারণ বর্জ্যরে সঙ্গে যত্রতত্র ফেলায় দিন দিন স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫