Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা

Icon

লোকমান তাজ

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২০, ১৪:২৮

পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা নিয়ে  বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা

মহামারি করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) পরিস্থিতিতে কোরবানির ঈদের পশুর হাটে শারীরিক দূরত্ব বজায় ও স্বাস্থ্যবিধি কতটুকু রক্ষা হবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ার শঙ্কা রয়েছে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা। কারণ এসব রক্ষা করা না গেলে, ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হতে পারে। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাকালে সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষকে শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানাতে প্রশাসন যখন গলদঘর্ম। তখন ব্যাপক জনসমাগম হয় এমন পশুর হাটে কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা যাবে তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। 

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসমাগমে না যাওয়াই হচ্ছে করোনা থেকে বাঁচার প্রথম শর্ত। সেখানে পশুর হাটে মানুষ কীভাবে নিরাপদ থাকবে। এমনিতেই মানুষের মধ্যে হাত ধোয়া, শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা বা মাস্ক পরার মতো বিষয়ে উদাসীনতা রয়েছে। আর গরুর হাটে কোনোভাবেই করোনা প্রতিরোধের এই তিন নিয়ম মেনে চলা সম্ভব নয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ভয়াবহ পরিস্থিতি এখনো আমরা যাইনি। সেখানে এমন পরিস্থিতিতে পশুর হাট না বসাতে অনুরোধ করেছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। বিকল্প পন্থায় সেটি করা যায় কিনা সরকারকে তা ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ করেছেন।

কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি পালন না করা হলে কোরবানির পশুর হাট করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, যেখানে-সেখানে পশুর হাটের অনুমতি দেওয়া যাবে না। কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন না করলে কোরবানির পশুর হাট করোনা ঝুঁকিকে ভয়ানক মাত্রায় নিয়ে যেতে পারে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও কভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের সেই সক্ষমতা নেই, এক হাতিরঝিলেই জনসমাগম বন্ধ করতে পারিনি। তাহলে কী করে আমরা পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানবো।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঠে কোরবানির পশুর হাট বসিয়ে শারীরিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি মানানো অসম্ভব৷ গত রোজার ঈদেও দোকানপাট খোলার সময় একই কথা বলা হয়েছে৷ ব্যক্তিগত পরিবহণের নামে মানুষকে ঢাকা ছাড়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে৷ এর কারণে ঈদের পরে করোনার প্রাদুর্ভাবও বাড়তে শুরু করে৷ এবার খোলা মাঠে গরুর হাট বসানো হলে আরো বড় সর্বনাশ হতে পারে বলে মনে করেন তারা৷


অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গ্রামীণ অর্থনীতির সাথে কোরবানির পশুর হাটের একটা যোগ আছে৷ বাংলাদেশের চামড়া শিল্পও অনেকটা নির্ভরশীল কোরবানির ওপরে৷ তাই দুই দিক রক্ষা করতে এবার কোরবানির পশুর হাটের জন্য অনলাইন হাট এবং ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেয়া উচিত৷

এবার ঢাকার দুই সিটি মিলিয়ে পশুর হাট বসবে মোট ২৪টি৷ এর মধ্যে উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১০টি এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় হবে ১৪টি৷ সারা দেশের জেলা উপজেলায়ও পশুর অস্থায়ী হাট বসানোর অনুমতি দেয়া হয়েছে৷ বাস্তবে অনুমোদনের বাইরেও কোরবানিতে আরো অনেক হাট বসে৷ সব মিলিয়ে এই হাটের সংখ্যা সারাদেশে পাঁচ হাজারের কম হবে না৷

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন গণমাধ্যমকে জানান, কোরবানির পশুর হাটের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ একটি গাইডলাইন তৈরি করছে৷ চূড়ান্ত হলে সেটা অনুসরণ করেই পশুর হাট বসবে৷ আমাদের নিজস্ব টিম এবং মোবাইল কোর্ট থাকবে যাতে স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দূরত্ব মানা হয়৷

অন্যদিকে শুধু পশুর হাট নয়, প্রচলিত পদ্ধতিতে পশু কোরবানিও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াবে৷ কিন্তু ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের এখনো এ বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই৷ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, আমরাতো কোরবানির জন্য আলাদা জায়গা করে দেই৷ এর বাইরে কোরবানি করাতো নিষেধ৷ তাই নতুন করে আর কোনো ব্যবস্থার প্রয়োজন নেই৷

জানা গেছে, সারাদেশে কোরবানির হাটের জন্য একটি স্বাস্থ্যবিধি তৈরি করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কাজ করছে৷ তারা বলছেন, পশুর হাটের এখনো অনেক বাকি৷ তার আগেই চূড়ান্ত হবে স্বাস্থ্যবিধি৷ সাধারণত কোরবানির চার-পাঁচদিন আগে পশুর হাট বসে৷ কিন্তু সারাদেশ থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন হাটে পশু নেয়া শুরু হয় তারও এক সপ্তাহ আগে৷ চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৩১ জুলাই বা ১ আগস্ট বাংলাদেশে ঈদুল আযহা উদযাপিত হতে পারে৷

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও প্রিভেনটিভ মেডিসিনের চিকিৎসক ডা. লেলিন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক কারণে কোরবানি ও কোরবানির পশু বিক্রি বাদ দেয়া যাবে না৷ কিন্তু হাট বসিয়ে পশু বিক্রির ব্যবস্থা করে স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সোনার পাথর বাটি৷ এটা যদি করা হয় তাহলে আমি এই করোনায় পশুর হাটেই সর্বনাশের ষোলকলা পূর্ণ হবে বলে মনে করছি৷

অন্যদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পরিকল্পনা করে করোনায় অর্থনীতি সচল রাখা যেতে পারে৷ কিন্তু এভাবে হাট বাজার খুলে দিলে শেষ পর্যন্ত অর্থনীতিও বাঁচবে না, মানুষও বাঁচবে না৷ তাই বিকল্প ব্যবস্থার কথা বলেন ড. নাজনীন আহমেদ৷ এই অর্থনীতিবিদ বলেন, এখনো সময় আছে, তাই পরিকল্পনা করে কোরবানির পশুর অনলাইন বাজার শক্তিশালি করতে হবে৷ কৃষক এবং ব্যাপারীদের কাছ থেকে গরু সংগ্রহের চেইন গড়ে তুলতে হবে৷ যেভাবে এবার শাক-সবজি, খাদ্য শস্য সংগ্রহ করা হয়েছে৷ যতদূর সম্ভব কসাইখানার ব্যবস্থা করতে হবে৷ 


কোরবানির হাটকে ঘিরে চলে বড় ধরনের বাণিজ্য৷ এরসাথে বিপুল মধ্যস্বত্বভোগী জড়িত৷ হাটের ইজারা, হাসিল, গরুর ট্রাক বা ট্রলার থেকে চাঁদা আদায়ে প্রভাবশালীরা জড়িত থাকেন৷ হাট না বসলে বা কম বসলে তাদের আয়ে টান পড়বে৷ তাই হাট বসানোতে আগ্রহ অনেকের৷

বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরেই অনলাইনে কোরবানির পশুর হাট চালু হয়েছে৷ এছাড়া মাংস বাজারজাত করার আধুনিক প্রতিষ্ঠান এবং খামার গড়ে উঠছে৷ এবার তা আরো সম্প্রসারিত বা জোরদার করা নিয়ে মন্ত্রণালয় ও সিটি কর্পোরেশনের কোনো আগ্রহ নেই৷ সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার বার্ষিক একটি বড় আয়ও আসে কোরবানির গরুর হাট ইজারা দিয়ে৷ স্থানীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরাও এই হাট থেকে বেশ আয় করেন৷ ঢাকার দুই সিটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অনলাইন গুরুর হাট নিয়ে তারা চিন্তা করেননি৷

তবে এর মধ্যেও ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এরই মধ্যে কোরবানির অনলাইন পশুর হাট নিয়ে কাজ শুরু করেছে৷ একশরও বেশি অনলাইন হাট আছে৷ তবে যাতে প্রতারণা না হয় সেদিকেও তারা জোর দিচ্ছেন৷ সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, এবার আমরা অনলাইন হাট ছাড়াও চেষ্টা করছি কোরবানির পশু জবাই যেন যত্রতত্র না হয় তার ব্যবস্থা করতে৷ হাট বসলে সেখানেই কসাইখানা৷ আর অনলাইনে পশু বিক্রি করলেও তাদের মাধ্যমেই কোরবানির ব্যবস্থা করা৷

দেশে প্রতিবছর এক কোটিরও বেশি পশু কোরবানি হয়৷ গত বছর এক কোটি ১০ লাখ পশু কোরবানি হয়েছে৷ তবে এবার কম হতে পারে৷ গরুর ব্যাপারীরা সংশয়ে আছেন৷ 

একদিকে পশু কেনা-বেচা, এরপর চামড়া কেনা -বেচাসহ ঈদ-উল-আযহা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে সে জায়গায় একটি বড় ধাক্কা আসতে যাচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা আশংকা করছেন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫