
যশোরের মণিরামপুরে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে আপন ভাই ও ভাতিজাদের হামলার ভয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটছে রোহিতা গ্রামের শেখ মাহাবুর রহমানের। গত দুই মাস ধরে স্ত্রী, তিন মেয়ে ও নিজের নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশসহ স্থানীয় মাতবরদের কাছে ধরনা দিয়েও কোনো প্রতিকার না পেয়ে নিরাপত্তার জন্য পাহারাদার নিযুক্ত করেছেন এই কৃষক।
মাহাবুর জানান, ২৩ বছর আগে তিনি মায়ের কাছ থেকে তিন শতক জমি কেনেন। কিন্তু মায়ের হঠাৎ মৃত্যু হওয়ায় তিনি জমিটি নিজের নামে দলিল করে নিতে পারেননি। এরপর ছয় ভাই বোনের মধ্যে পাঁচজন মাহাবুরকে সেই জমি ছেড়ে দেন। কিন্তু তার সেজো ভাই মুজিবর রহমান জমির দাবি ছাড়েননি। অবশেষে তিনি (মুজিবর) নিজের অংশ বুঝে নেন। এরপর মাহাবুর তার অংশে ইটের ঘর তোলেন। এক পর্যায়ে মুজিবর তার ছেলে মেহেদী হাসানের নামে গোপনে মাহাবুরের ঘরভিটার অংশ থেকে তিন শতক জমি রেজিস্ট্রি করে দেন। এই নিয়ে মুজিবর ও মাহাবুরের দ্বন্দ্ব। যার জের ধরে দুইমাস আগে সংঘর্ষে দুই পক্ষের লোকজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই সময় মুজিবরের দায়ের করা মামলায় মাহাবুর জেল খাটেন।
মাহাবুর আরো জানান, জেল থেকে আসার পর আমার পরিবারকে হুমকি দিয়ে আসছে মুজিবর এবং তার তিন ছেলে সোহাগ হোসেন, মেহেদী হাসান ও জাহিদ হাসান। আমি স্ত্রী সুফিয়া খাতুন এবং তিন মেয়েকে সোনিয়া (একাদশ শ্রেণি), মনিরা (৮ম) ও রিয়া (২য়) নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় আছি। ভয়ে দিনে রাতে আমার মেয়েরা বাইরে বের হতে পারে না। ঘরের জানালা দরজা মজবুত না। রাতে ঘুমাতে পারিনা, প্রায় সারারাত জেগে থাকতে হয়। যে কোনো সময় আমার মেয়েদের ওপর হামলা হতে পারে। এমনকী এসিড নিক্ষেপ করতে পারে ওরা। সেই ভয়ে মাসিক দেড় হাজার টাকা বেতনে মদন শেখ নামে একজনকে রাতে পাহারাদার নিযুক্ত করেছি। দেড় মাস ধরে সে ডিউটি করছে। যে দিন পাহারাদার আসে না সেই দিন সবাইকে নিয়ে জেগে থাকতে হয়। বিষয়টি নিয়ে অনেকবার থানায় এবং স্থানীয় মাতবরদের কাছে গিয়েছি। কেউ সমাধান করে দেয়নি। কয়দিন আগে থানা থেকে পুলিশ এসে সব জেনেশুনে স্থানীয় মাতবর শেখ রাসেদকে বিষয়টি মিটিয়ে দেয়ার জন্য দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। তিনি আজ না কাল করে শুধু দিন দিচ্ছেন।
সরেজমিন সোমবার রাতে গিয়ে মাহাবুরের বাড়িতে পাহাদারকে দায়িত্বরত অবস্থায় পাওয়া গেছে। পাহারাদার মদন শেখের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মারামারির পর থেকে মাহাবুরের পরিবারের মধ্যে ভয় ঢুকেছে। তাই তারা আমাকে দেড়হাজার টাকা মাসিক চুক্তিতে রেখেছেন। আমি সন্ধ্যার পর আসি সকালে লোকজন ঘুম থেকে উঠলে চলে যাই।
অভিযুক্ত মুজিবর শেখ বলেন, জমি নিয়ে আমাদের বিরোধ। সেই বিরোধ নিয়ে আমার স্ত্রী ও ছেলেকে মাহাবুর ও তার মেয়েরা মেরেছে। তাই নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। আমার ছেলেরা বাইরে কাজে গেছে। আমরা কাউকে আদৌ কোনো হুমকি দেইনি।
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ রাসেদ হোসেন বলেন, মাহাবুর বাড়িতে পাহারাদার রেখেছে কি না, জানি না। আমরা মঙ্গলবার বিকেলে বিষয়টি নিয়ে গ্রামে বসব।
মণিরামপুর থানার এসআই খান আব্দুর রহমান বলেন, জমি নিয়ে মূলত মাহাবুর ও তার ভাইয়ের বিরোধ। জমির সমস্যা মিটলে সব সমাধান হয়ে যাবে। আমি সরেজমিন গিয়ে বিষয়টি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রাসেদকে সমাধানের জন্য দায়িত্ব দিয়েছি। সে যে সিদ্ধান্ত নেয়, সেটা আমাদের জানাতে বলেছি।
মাহাবুরের বাড়িতে নৈশপ্রহরি রাখার ব্যাপারে জানতে চাইলে এসআই আব্দুর রহমান বলেন, ওটা মাহাবুরের মনের দুর্বলতা।