Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

টাঙ্গাইলে সবকয়টি নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে

Icon

নওশাদ রানা সানভী, টাঙ্গাইল

প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২০, ২১:৩১

টাঙ্গাইলে সবকয়টি নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে

টানা বৃষ্টিপাতের কারণে টাঙ্গাইলের যমুনা, ধলেশ্বরীসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়া অব্যাহত রয়েছে। 

শুক্রবার (১৭ জুলাই) সকাল থেকে ওই তিনটি নদ–নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে চরাঞ্চল ও নদীর তীরবর্তী অন্তত ১৪১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন ৮৪ হাজার ৭১২ মানুষ।

জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, শুক্রবার সকাল থেকে ধলেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ১৪০ সেন্টিমিটার, যমুনা নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র জানান, ভারী বর্ষণের ফলে নতুন করে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। 

জেলা প্রশাসনের জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় জানায়, জেলায় এখন পর্যন্ত টাঙ্গাইল সদর, নাগরপুর, দেলদুয়ার, ভূঞাপুর, কালিহাতী ও গোপালপুর উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নের অন্তত ১৪১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ দিকে কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভা আংশিক এলাকা ডুবে গেছে। এতে প্রায় ৮৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। নদীতে পানি বাড়ায় গত জুন মাস থেকে এ পর্যন্ত ৬০১টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আর ১ হাজার ২৯৯টি ঘরবাড়ির আংশিক নদীতে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া নাগরপুরে একটি স্কুল নদীর গর্ভে চলে গেছে।

জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, নতুন করে নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়া অব্যাহত রয়েছে। সোমবার পর্যন্ত ৬ হাজার ৫০৮ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। 

গাবসারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির জানান, প্রতিদিন পানি বাড়ছে গাবসারা ইউনিয়নের সবকয়টি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। এতে ১৩ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া অর্জুনা ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম এবং গোবিন্দাসি ইউনিয়নের তিনটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দ্বিতীয় দফা বন্যার কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন চরাঞ্চলের মানুষ। গবাদিপশু উঁচু স্থানে নিয়ে রাখছেন। অনেকে ঘরের মধ্যে মাচা তৈরি করে থাকছেন।

সূত্র মতে, মানুষ প্রথম দফায় বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে না উঠতেই দ্বিতীয় দফায় নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিচ্ছে। প্রথম দফা বন্যার পর পানি কমতে থাকায় চরাঞ্চলের যে সব মানুষ বাড়িতে ফিরছিলেন তারা আবার নিরাপদ আশ্রয়ে খুঁজছেন।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্র জানায়, জেলায় এ পর্যন্ত টাঙ্গাইল সদর, নাগরপুর, দেলদুয়ার, ভূঞাপুর, কালিহাতী এবং গোপালপুর- এ ছয়টি উপজেলার ১৬২ বর্গকিলোমিটার এলাকায় পানি ঢুকে ২৪টি ইউনিয়নের ন্যূনতম ১৩৭টি গ্রাম গ্লাবিত হয়েছে। অপরদিকে জেলার উপ-শহর খ্যাত এলেঙ্গা পৌরসভার আংশিক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফলে ২১ হাজার ১৭৮টি পরিবারের প্রায় সোয়া লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।


১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৯ জন মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পানি বাড়ার সঙ্গে ভাঙনের শিকার হয়ে ৫৮৬টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ও ১ হাজার ৭৫টি ঘরবাড়ি আংশিক নদীতে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া নাগরপুরে একটি স্কুল ভবন সম্পূর্ণ নদীতে ধসে পড়েছে এবং দুইটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, নতুন করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসলী জমি নিমজ্জিত হওয়ার পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত ৫ হাজার ৯২৮ হেক্টর ফসলী জমি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে বোনা আমন ২৩ হেক্টর, রোপা আমন (বীজতলা) ৩ হেক্টর, পাট ৭৬৫ হেক্টর, আউশ ৮৯৬ হেক্টর, সবজি ২৮৫ হেক্টর, তিল ১ হাজার ৬৫২ হেক্টর পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আহসানুল বাশার জানান, ফসলী জমিগুলোতে পানি স্থিতিশীল থাকায় ৫০ ভাগ ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাকি ৫০ ভাগ ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না। জেলা কৃষি বিভাগ বন্যার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে থেকে সংকট কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ফের জেলার নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। দ্বিতীয় দফায় নদীতে পানি বাড়ায় বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। 

তিনি আরো জানান, যে সব নদীর তীর ভাঙনের শিকার হচ্ছে তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫