Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

ভালো নেই ডেকোরেটর মালিক-শ্রমিকরা

Icon

লোকমান তাজ

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২০, ২২:১১

ভালো নেই ডেকোরেটর মালিক-শ্রমিকরা

মহামারি করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) সংক্রমণের কারণে সব ধরনের সামাজিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান প্রায় বন্ধ থাকায় ডেকোরেটর ব্যবসায়ীদের কাঁধে চেপেছে লোকসানের বোঝা। দেশে সাধারণ ছুটির পর সবকিছু খুলে দিয়েছে সরকার। তবে করোনা সংক্রমণ এড়াতে জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। বিভিন্নভাবে ঘোষণা দিয়ে ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ফলে প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও কাজ নেই ডেকোরেটর ব্যবসায়ীদের।

ডেকোরেটর শ্রমিক নজরুল বলেন, কাজ-কাম নাই চার মাস হয়। এক বেল খেয়ে আর এক বেলা না খেয়ে দিন কাটছে। কথাগুলো বলতে গিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিলো তার। একইভাবে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে মুন্সীগঞ্জের ডেকোরেটর শ্রমিকদের। ভালো নেই ডেকোরেটর মালিকরাও। 

রিকশা ভ্যানচালক মতিন ডেকোরেটর দোকানের মালামাল বহন করেন। তিনি জানান, করোনার আগে ডেকোরেটর থেকে যা আয় হোত তা দিয়ে ভালোই চলছিল সংসার। এখন রোজগার বন্ধ। অসুস্থ স্ত্রীর জন্য ওষুধ কিনতে পারছেন না। 

ডেকোরেটর শ্রমিক আশরাফুল আক্ষেপ করে বলেন- দুই সন্তানকে কি খেতে দেবো আর স্ত্রীর জন্য কিভাবে ওষুধ যোগার করবো সে চিন্তায় মাথায় কাজ করে না। আম কিনে ব্যবসা করতে গিয়ে সামান্য যা পুঁজি ছিলো তা-ও হারিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন তিনি। 

মালিরঅংক বাজারের মর্ডান ডেকোরেটরের মালিক মিলন ঢালী বলেন, মুন্সীগঞ্জ জেলার ৬ উপজেলায় প্রায় তিন শতাধিক ডেকোরেটর মালিক রয়েছেন। করোনার কারণে গত ২০ মার্চ থেকে ডেকোরেটর ব্যবসা একবারে বন্ধ। এ অবস্থায় মালিক, শ্রমিক, বাবুর্চি, ভ্যানশ্রমিক সবাই পড়েছেন বিপাকে। 

ঝর্ণা ডেকোরেটরের মালিক রাকিব জমাদ্দার বলেন, ডেকোরেটর ব্যবসায়ীদের সমস্যার কথা তুলে ধরার কেউ নেই। দেশে সব কিছু চলছে কিন্তু বিয়ের অনুষ্ঠান বন্ধ। এতে করে আমাদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। ছোট পরিসরে অনুষ্ঠান করতে দিলেও আমরা চলতে পারতাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত সারা পওয়া যায়নি। আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। 

করোনা দুর্যোগের কারণে সব ধরনের সামাজিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান প্রায় বন্ধ থাকায় কুমিল্লার লালমাই উপজেলার ডেকোরেটর ব্যবসায়ীদের কাঁধেও চেপেছে লোকসানের বোঝা। 

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তাতে ব্যবসাতো দূরের কথা, নিজেদের টিকে থাকাই কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। টানা বন্ধে ডেকোরেটর সরঞ্জাম গুদামে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রায় চার মাস ধরে উপজেলার অর্ধ-শতাধিক ব্যবসায়ীর আয় রোজগার বন্ধ থাকায় কয়েকশ মালিক-শ্রমিক মানবেতর জীবনযাপন করছেন। 

লালমাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নজরুল ইসলাম  জানান, ডেকোরেটর ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সহায়তা চেয়ে কোনো আবেদন পাইনি।

একইভাবে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে নওগাঁর প্রায় ৯০০ ডেকোরেটর শ্রমিকের। জেলা ডেকোরেটর মালিক কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি সোলায়মান তালুকদার টিপু গণমাধ্যমকে বলেন, নওগাঁ সদরে ৪০টিসহ জেলার ১১ উপজেলায় ৩২০ জন ডেকোরেটর মালিক রয়েছেন। করোনার কারণে ডেকোরেটর ব্যবসা একবারে বন্ধ। এ অবস্থায় মালিক, শ্রমিক, বাবুর্চি, ভ্যানশ্রমিক সবাই পড়েছেন বিপাকে। 

জেলা ডেকোরেটর মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি রাশেদুল আলামিন রন্টু বলেন, ডেকোরেটর ব্যবসায়ীদের সমস্যার কথা তুলে ধরে সহযোগিতার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছিলাম। এখন পর্যন্ত সারা পওয়া যায়নি। আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। 

জেলা প্রশাসক হারুন অর রশীদ বলেন, ইতিমধ্যে ডেকোরেটর শ্রমিকদের মধ্যে কিছু খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছি। ডেকোরেটর মালিকদের মধ্যে কেউ বেশি সমস্যায় পড়লে বিশেষভাবে তাদের সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে।

করোনা পরিস্থিতিতে দেশের সব জেলার ডেকোরেটর মালিক-শ্রমিকদের একই অবস্থা। অনুষ্ঠান আয়োজন বন্ধ থাকায় বড় বিপাকে পড়েছে ডেকোরেটর খাত। শ্রমিকরা কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫