দেশে বন্যায় ১৩২৩ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি: কৃষিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২০, ১৪:৪৮
-5f3ce74ea1878.jpg)
ছবি: স্টার মেইল
চলতি বছর তিন দফা বন্যায় দেশের ৩৭ জেলায় এক হাজার ৩২৩ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ৮২ কোটি ৫৪ লাখ টাকার পুনর্বাসন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।
আজ বুধবার (১৯ আগস্ট) বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, তিন দফার বন্যায় ৩৭টি জেলায় সব মিলিয়ে এক হাজার ৩২৩ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ২ লাখ ৫৭ হাজার ১৪৮ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়, এর মধ্যে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮১৪ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় ১২ লাখ ৭২ হাজার ১৫১ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
তিনি বলেন, এবার ৩২ হাজার ২১৩ হেক্টর জমির ৩৩৪ কোটি টাকার আউশ ধান, ৭০ হাজার ৮২০ হেক্টর জমির ৩৮০ কোটি টাকার আমন ধান এবং সাত হাজার ৯১৮ হেক্টর জমির আমন বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ২৩৫ কোটি টাকার সবজি এবং ২১১ কোটি টাকার পাটের ক্ষতি হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, প্রথম দফায় ২৫ জুন থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত ১৪ জেলায় বন্যায় ৪১ হাজার ৯১৮ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রথম দফার বন্যায় ৩৩৯ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি এবং তিন লাখ ৪৩ হাজার ৭৫৭ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় ১১ জুলাই থেকে ১২ অগাস্ট পর্যন্ত ৩৭টি জেলায় ৩৪টি ফসলের এক লাখ ১৬ হাজার ৮৯৬ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ৯৭৪ কোটি টাকা আর নয় লাখ ২৯ হাজার ১৩৯ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, প্রতি বছর বর্ষা ঋতুতে খরিপ-১ ও খরিপ-২ মৌসুমে অতিঝড়, বন্যা, পাহাড়ি ঢলের কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন ধরনের ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এবার বন্যায় ফসলের জমি প্লাবিত হয়। এ বছর বন্যার পূর্বাভাস পাওয়ার সাথে সাথে কৃষি মন্ত্রণালয় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাসহ সকলেই ছিলেন সতর্ক। এছাড়া ফসলের ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হয়েছিল।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দেয়ার বিষয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারেন, সেজন্য বিভিন্ন প্রণোদনা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে প্রায় ১৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচি হিসেবে দুই লাখ ৩৯ হাজার ৬৩১ জন ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মধ্যে বিতরণ শুরু হয়েছে এবং আরো প্রায় ৬৫ কোটি টাকার কর্মসূচি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি বলেন, এই অর্থ দিয়ে নয় লাখ ২৯ হাজার ১৯৪ জন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে গম, সরিষা, চিনাবাদাম, সূর্যমুখী, খেসারি, পেঁয়াজ, মরিচ, টমেটো ইত্যাদি ফসল আবাদের জন্য বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ সরবরাহ করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী জানান, ১৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকার কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষকদের মধ্যে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি বিভিন্ন সবজি চাষের জন্য বিনামূল্যে বীজ বিতরণ, কমিউনিটি ভিত্তিক বীজতলা তৈরির মাধ্যমে চারা উৎপাদন ও বিনামূল্যে বিতরণ, ভাসমান বেডে ধানের চারা উৎপাদন ও বিনামূল্যে বিতরণ, রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে রোপণের জন্য ট্রেতে নাবী জাতের আমন ধানের চারা উৎপাদন ও বিনামূল্যে বিতরণ এবং মাসকলাই বীজ ও সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলায় বীজ, সারসহ বিভিন্ন প্রণোদনামূলক কার্যক্রম বেগবান, তদারকি ও সমন্বয়ের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত ও যুগ্ম-সচিবদের নেতৃত্বে ১৪টি কমিটিতে ৭০ জন কর্মকর্তা কাজ করছেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা বন্যার ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছি, আবার বন্যা না হলে ক্ষয়ক্ষতি বহুলাংশে কাটিয়ে ওঠা যাবে এবং এই ক্ষয়ক্ষতি আমাদের খাদ্য উৎপাদনে তেমন প্রভাব পড়বে না বলে আশা রাখি।