Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

৩ মাস ধরে ড্রেজিং, কমছে না নাব্যতা সংকট

Icon

কাজী সাব্বির আহমেদ দীপু

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:৫৪

৩ মাস ধরে ড্রেজিং, কমছে না নাব্যতা সংকট

শিমুলিয়া-কাঠাঁলবাড়ী নৌরুটে নাব্য সঙ্কট নিরসনে গত ৩ মাস ধরে বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজারগুলো পলি কেটে তা ফেলা হচ্ছে পদ্মার চরের ধারে ও চ্যানেলের আশেপাশেই। এতে কোনো উপকারই হচ্ছে না, বরং কয়েকদিন যেতে না যেতেই আবারও পলি জমে নাব্য সঙ্কট দেখা দিচ্ছে।

দীর্ঘ ৩ মাস ধরে পর্যবেক্ষনের পর বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং কার্যক্রম নিয়ে এমন অভিযোগ তুলেছেন শিমুলিয়া-কাঠাঁলবাড়ী নৌরুটে চলাচলরত ফেরির একাধিক চালক ও বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা।

তাদের মতে, চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না সিনোহাইড্রোর ড্রেজিংয়ে কাটা পলিমাটি পদ্মা চরের মাঝখানে ফেলার কারণে সেগুলো নদীর পানিতে মিশতে সুযোগ পায়না। কিন্তুু বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজার গুলো পলিমাটি ফেলার কাজ সম্পূর্ন উল্টো। তারা যেখানে ড্রেজিং করে তার পাশেই পলিমাটি ফেলে, যা প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছেও প্রশ্নবিদ্ধ।

এদিকে, এ অভিযোগ প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটিএ’র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি, নদী খননের পর পলিমাটি ফেলার জায়গা নেই, তাই নদীর পাড়েই পলিমাটি ফেলতে হচ্ছে। তবে এতে কোন সমস্যাও নেই বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসির এজিএম শফিকুল ইসলাম জানান, বর্তমানে  নৌ-চ্যানেলে ৯টি ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং করছে বিআইডব্লিউটিএ। তার মতে, ড্রেজিং করে পলিমাটি গুলো দূরে ফেলা হলে ভালো হয়। কিন্তুু তারা তা না করেই পাশেই ফেলে দেয়। তিনি আরও জানান, লৌহজং চ্যানেলের প্রবেশ মুখে ও আশপাশ এলাকায় ৯টি ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং করা হচ্ছে।

এদিকে, নাব্য সঙ্কটের কারনে গত রোববার দ্বিতীয় দফায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে লৌহজং টার্নিং চ্যানেলে ড্রেজিং করা হচ্ছে। ফলে এখন ছোট ফেরিসহ লঞ্চ চলাচল করছে পদ্মা সেতুর নিজস্ব চ্যানেল দিয়ে। 

রো রো ফেরি বীর শ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গির এর মাস্টার আসাদুজ্জামান মিয়া বলেন, যে পরিমান পলি আসছে, সেই পরিমান পলি অপসারণ করা না হলে নাব্য সঙ্কট থাকবেই।

বিআইডব্লিউটিএ’র একাধিক প্রকৌশলী (ড্রেজিং) জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজে অধিগ্রহন করা জায়গায় চীনা প্রতিষ্ঠান ড্রেজিংয়ের পলিমাটি ফেলছে। সেখানে তাদের পলিমাটি ফেলতে দেওয়া হয়না। আর মাটি ফেলতে বিআইডব্লিউটিএ’র নিজস্ব উঁচু কোন জায়গাও নেই। নৌযান চলাচলের বৃহত্তর স্বার্থে প্রতিবছরই চরের পাশেই পলি ফেলতে হয়। 

জানা যায়, শিমুলিয়া-কাঠাঁলবাড়ী নৌরুটে নাব্য সঙ্কট নিরসন করতে গত জুন থকে আগষ্ট পর্যন্ত ৩ মাসে ৫ লাখ ৬০ হাজার ঘনমিটার পলি অপসারণ করেছে বিআইডব্লিউটিএ। এতে খরচ হয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকা। কিন্তুু সরকারের বিপুল পরিমানের টাকা খরচ হলে কোন উপকারই হয়নি। তাই ¯্রােতের সঙ্গে ভেসে আসা পলিমাটি বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়ে আবারও নাব্য সঙ্কট দেখা দেওয়ায় ড্রেজিং কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং কাজ গতকাল মঙ্গলবারও অব্যাহত রযেছে। চ্যানেলটির নাব্যতা সঙ্কট নিরসনে ৯টি ড্রেজার দিয়ে সাড়ে ৩ লাখ ঘন মিটার পলি অপসারণ করতে বর্তমানে দিন-রাত কাজ চলছে। আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই রুটের ৩৩ লাখ ঘনমিটার পলি অপসারণ করতে হবে বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।

বিআইব্লিউটিসির শিমুলিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক সাফায়েত আহমেদ জানান, পালিমাটির কারণে নাব্য সংকট থাকায় গত ২৯ জুন লৌহজং টার্নিং চ্যানেল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে ৫ কিলোমিটার অদূরের ভাটির বিকল্প চ্যানেল দিয়ে ফেরিগুলো দ্বিগুণ সময় নিয়ে চলাচল করছে। এর মধ্যে বিকল্প চ্যানেলেও নাব্য সঙ্কট দেখা দেওয়ায় ফেরি চলাচল মারাত্বক ভাবে বিঘিœত হয়।

বিআইডব্লিউটিসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, লৌহজং টার্নিং চ্যানেলের মুখে বারবার পলি জমে নাব্যতা দেখা দেওয়ায় ইঞ্জিনে অতিরিক্ত চাপ দিয়ে চালাতে হয়। তাই লৌহজং চ্যানেলের প্রবেশমুখ প্রশস্থ ও গভীর করা হলে ফেরি চলাচলে সুবিধা হয়। বিষয়টি তাদের জানানো হয়েছে। তারা জানান, চায়না সিনোহাইড্রো কোম্পানী নিজেদের ড্রেজার দিয়ে খনন করার সময় নদীর তলদেশ দিয়ে পাইপ ঢুকিয়ে পলিমাটি মেশানো পানি পদ্মার চরের মাঝখানে ফেলে। তাই ফেরি চলাচলে কোন অসুবিধা হয় না। দেখলে মনে হবে, তাদের ড্রেজিং কাজ সঠিক। কিন্তুু  বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজারগুলো পলি কেটে তা ফেলে দিচ্ছে ড্রেজিং স্থানের আশেপাশেই। ফলে কোন উপকারই হচ্ছে না। কয়েকদিন যেতে না যেতেই আবারও পলি জমে নাব্য সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। তাদের ড্রেজিং কাজ যে কেউই স্বচক্ষে দেখলে, তাদের মনেও প্রশ্ন জেগে উঠবে। 

তবে বিআইডব্লিউটিএ’র সহকারি প্রকৌশলী হাসান আহম্মেদ জানান, একটি প্রাকৃতিক সমস্যা। নাব্য সঙ্কট নিরসণে চেষ্টার কোন কমতি নেই। একই কথা জানালেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো সাইদুর রহমানও। তিনি আরও জানান, নৌ-চ্যানেলে ৩৩ লাখ ঘন মিটার পলি মাটি অপসারণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ড্রেজিং কাজ চলছে। ৩৩ লাখ ঘনমিটার পলি অপসারণ করতে আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় লাগবে বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫