Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

মেঘনার ভাঙনে গৃহহারা ১০ হাজার পরিবার

Icon

আকাশ মো. জসিম

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৪:৫৮

মেঘনার ভাঙনে গৃহহারা ১০ হাজার পরিবার

মেঘনার জোয়ারের প্রবল প্রভাবে অব্যাহত ভাঙনের কবলে নোয়াখালীর হাতিয়া ও সুবর্ণচরের বিস্তীর্ণ এলাকায় ঘর বাড়ি হারিয়েছে কমপক্ষে ১০হাজার পরিবার। ইতোমধ্যে অবিরাম বর্ষণ ও মেঘনার ভরা জোয়ারে বাড়ি, ঘরসহ আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ পরিবারগুলো।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এ বর্ষায় মেঘনার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে হাতিয়ার হরণির বয়ারচর, চানন্দির কেরিংচর এবং সুবর্ণচরের চরউরিয়ার কালাদুর ও ছোলেমান বাজারসহ বেশকিছু জনপদ।

২০০১ সালের পর থেকে হাতিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল কয়েক দফায় মেঘনার ভাঙনের কবলে পড়েছে। আবার চরও জেগে ওঠেছে। আর জেগে ওঠা সেই চরে আদি বসতিহারা মানুষগুলো নতুন করে নীড় গড়তে ব্যস্ত হওয়ার পথে আবারো শুরু হয়েছে মেঘনার ভাঙনের হিং¯্র খেলা।

মেঘনার দখলের থাবায় ক্ষতিগ্রস্ত বেশকিছু পরিবার বসতি হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বেড়ির পাশে। জানা যায়, গত ২ বছর ধরে হরণি ইউনিয়নের টাংকির বাজার এলাকায় ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়। অব্যাহত ভাঙনে এলাকাটির ঝাউবাগান,পানি উন্নয়ণ বোর্ডের বেড়িবাঁধসহ সিংহভাগ অংশ বসতিঘন ভূমি সম্পূর্নরূপে মেঘনার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

ভাঙনের অব্যাহত কবলে ঘরহারা দিশেহারা মানুষগুলো আশপাশের গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নেন। আবার, কেউ নিজ এলাকা ছেড়ে জেলার সদর, সুবর্ণচরসহ দেশের বিভিন্ন শহর বন্দরে চলে যান।

দিদার বাজার এলাকার ভুক্তভোগী আবদুর রহমান জানান, অনেকেই অন্যত্র মাথা গোঁজার জায়গা না থাকায় চরে বসতি গড়ে কষ্টের জীবন ধারন করছেন। মেঘনার পেট থেকে জেগে বসতি স্থাপনসহ চাষাবাদের উপযোগী হয়ে ওঠেছিল চানন্দি মানচিত্রের কিছুভূমি। সেখানেও শুরু হয় বসতি স্থাপনসহ কৃষি আবাদ। কিন্তু, সুখের জীবন শুরু হলেও সুখটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

এ ইউনিয়নের কেরিংচরের ছুট্টু মিয়া এবং আবুল খায়ের খায়ের জানান, ২০০৪ সালের পর মেঘনার  পেটে জেগে ওঠা ছোট ছোট চরগুলো একত্রিত হয়ে বিশাল উঁচু চরে রূপান্তরিত হয়। এতে ইউনিয়নের সিংহভাগ ভূমি বসতি স্থাপন ও চাষের উপযোগী হয়ে ওঠে। তখন থেকেই এখানে আবারো শুরু হয় নতুন করে বসতি স্থাপন।

কালাদুর বাজারের ওমর ফারুক মিয়া বলেন, কিছু বছর মেঘনায় ভাঙনের গতিধারার স্বাভাবিকতা বজায় থাকলেও হালে শুরু হয়েছে উন্মত্ততা। আর ইতোমধ্যে এর ছোবলেই ভাঙনের শিকার হয়ে অনেকগুলো পরিবার আবারো রাতারাতি এলাকা ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।

জনতা বাজার এলাকার আবুল হোসেন বলেন, ফের নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম ও বিস্তীর্ন ফসলি জমি। এবার নদী এখানে পূর্ব থেকে শুরু করে ভেঙে গভীর হয়ে পশ্চিম দিকেই সরে যাচ্ছে।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে ভাঙন রোধের চেষ্টা করলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারছেনা মেঘনার প্রবল জোয়ারের আঘাতে। স্থানীয়দের মতে, একমাত্র সিমেন্টের ব্লক বাঁধাই হাতিয়া ও সুবর্ণচরের ভাঙন কবলিত জনপদগুলোকে রক্ষার সহায়ক হতে পারে।

অবশ্য নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন বলেছেন, এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট মহলে পাঠনো হয়েছে।

এলাকার বাসিন্দা বাহার বলেন, মেঘনার নদীর ভাঙা গড়ার সাথে যুদ্ধ করেই তার বাপ দাদাও এক চর থেকে পার্শ্ববর্তী আরেক চরে বসবাস করেছেন। এভাবেই যুগযুগ ধরে সুখে দুঃখে আবর্তীত হচ্ছে হাতিয়ার দুর্গম চরাঞ্চলের নদীভাঙা অসহায় মানুষগুলোর জীবনযাত্রা।

হাতিয়া উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আলী বলেন, নদী ভাঙনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান অপরিমেয়। তবে, ইতোমধ্যে সরকারিভাবে একটি তালিকা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫