ডিমলার ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ

নীলফামারী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৭:১০

নীলফামারীর ডিমলা খাদ্যগুদামে পোকে ধরা চালের মজুদ গড়ে তোলার অভিযোগ মিলেছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা (ওসি এলএসডি) খগেন্দ্র নাথ বর্মণকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। নোটিশ দিয়েছেন ডিমলা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আব্দুল মালেক খন্দকার।
এর আগে গত মার্চ মাসে ওই খাদ্যগুদামে চালের মজুদের ঘাটতি ছিলো ২৩১ মেট্রিক টন। সেই সময় নীলফামারী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ ২৩ মার্চ গুদাম পরিদর্শনে গেলে চালের ঘাটতি নজরে আসে। পরদিন ২৪ মার্চ তিনি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। বর্তমানেও ওই তদন্ত অব্যাহত আছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা হিমাংশু কুমার রায়কে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। জেল জরিমানার ভয়ে ওই কর্মকর্তা বর্তমানে গা ঢাকা দিয়ে আছে।
এরপর খাদ্য গুদামে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব দেয়া হয় খগেন্দ্রনাথ বর্মনকে। এ সময় ঊর্ধ্বতন খাদ্য কর্মকর্তাদের নজরে আসে আমন মওসুমে মিলারদের কাছে সরবরাহকৃত ধানের চাল বোরো মওসুমেও সরবরাহ করা হয়নি। এ নিয়ে শুরু হয় তোলপাড়। পরে অনুসন্ধানে কর্তৃপক্ষ জানতে পারে উপজেলার নাউতারা ইউনিয়নের সোনামনির ডাঙ্গা গ্রামের অধিবাসী অলিয়ার রহমানের মালিকানাধীন ভাই ভাই অটো ও অয়ন হাসকিং মিলের নামে ৩১ মার্চ আমন মওসুমে ১০০ মেট্রিক টন ধান দেয়া হয়েছে চাল ছাটাই করার জন্য। কিন্তু অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে মিল মালিক যথা সময়ে চাল খাদ্যগুদামে সরবরাহ করেনি। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের অর্থ সাশ্রয়ে খাদ্য দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মিল মালিককে চাল সরবরাহ করতে উপর্যপুরি চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এমন অবস্থায় মিল মালিক অলিয়ার রহমান খাদ্য দপ্তরের স্থানীয় কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অনেক দিনের গুদামজাত করে রাখা চাল কালো বাজার থেকে কিনে তা খাদ্যগুদামে সরবরাহ করেন। গত ঈদ-উল-আজহার আগে ২৩ ও ২৪ জুলাই ৬৬ মেট্রিক টন চাল ডিমলার তিন নম্বর খাদ্যগুদামে সরবরাহ করা হয়।
তবে অলিয়ার রহমানের মিলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মিল দুইটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। মিলের চাতালে মানুষের কোন ছাপ নেই। এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে কথা হয় অলিয়ার রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রায় ৯ মাস ধরে তাদের মিল চাতাল বন্ধ আছে। চাল খাদ্যগুদামে সরবরাহ করলেন কিভাবে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, দুই মিলের বিপরীতে ১০০ মেট্রিক টন ধান আমন মওসুমে ধান দেয়া হয়েছিল। তা ক্রাসিং করে খাদ্যগুদামে চাল দেয়া হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা খগেন্দ্র নাথ বর্মণ বলেন, আমন মওসুমের চাল বোরো মওসুমে নেয়া হলেও তা পোকা ধরা ছিলো না। তাছাড়া চাল নেয়ার সময় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল মালেক খন্দকার ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আরেফিন উপস্থিত ছিলেন।
পোকা ধরা চাল গুদামে মজুদের ব্যাপারে কথা হয় মুঠোফোনে কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আরেফিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, তিন নম্বর গুদামের ৫৪ নং খামালে আগে থেকেই পোকা ধরা ৬৬০ বস্তা চাল ছিলো। সেই খামারে অলিয়ার রহমানের চাল রাখায় পোকার আক্রমণ হতে পারে। তবে কীটনাশক প্রয়োগ করা হলে পোকা আর থাকে না। তার মতে দুই-তিন মাসের বেশি চাল গুদামে মজুদ থাকলে সমস্যার সৃষ্টি হয়।
এদিকে রংপুর থেকে নিয়মিত কাজের অংশ হিসাবে পরিদর্শনে আসেন উপজেলা কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক জাকির হোসেন। তিনি ডিমলার তিন নম্বর খাদ্য গুদামে ৫৪ নং খামালে মজুদ চালে পোকা ধরার বিষয়টি দেখতে পান। এ বিষয়টি তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেন।
এরই প্রেক্ষিতে ডিমলা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল মালেক খন্দকার ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা খগেন্দ্র নাথ বর্মণকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেন। এ সময় তার কাছে জানতে চাওয়া হয় ওই পোকা ধরা চাল মজুদ করার সময় আপনি উপস্থিত ছিলেন। এমন কথার প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, তিন নম্বর খাদ্যগুদামটি সবসময় স্যাত স্যাতে থাকে। এ কারণে চালে পোকা লাগে। তবে ওষুধ প্রয়োগ করা হলে চালে আর পোকা থাকে না।
তবে খাদ্যগুদাম সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে কথা হলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওই পোকার চালের কারণে গুদামে মজুদ ভালো মানের আরো ৫০০ মেট্রিক টন চালেও পোকার আক্রমণ শুরু হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ এসব চাল খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি উপলক্ষে ডিলারদের মাঝে দেয়া হবে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানতে চাইলে উপজেলা কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক জাকির হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন পুরাতন চাল মিলারের কাছে নিয়ে ওই সরকারি কর্মকর্তা সরকারের আর্থিক ক্ষতি করেছে। যা পুরোপুরি দুর্নীতি বলে আমি মনে করি। ডিমলা খাদ্যগুদামে চাল কেলেঙ্কারি বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে কথা হয় নীলফামারী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাজমুল হক ভুঁইয়ার সঙ্গে।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এ মুহূর্তে কিছু বলা যাবে না। রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুস সালাম মুঠোফোনে বলেন মিল মালিক কর্তৃক সরবরাহকৃত পুরাতন ও পোকাক্রান্ত চালের বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
খাদ্য দপ্তরের মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই এমন হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।