Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

নোয়াখালী পাসপোর্ট অধিদপ্তরে সক্রিয় দালাল চক্র

Icon

নোয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৯:০৫

নোয়াখালী পাসপোর্ট অধিদপ্তরে সক্রিয় দালাল চক্র

নোয়াখালী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অধিদপ্তরে দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ করেছেন সেবাগ্রহীতারা।

ভুক্তভোগীরা জানান, এ দপ্তরে দালাল ছাড়া কোনো গ্রাহক পাসপোর্ট নামের সোনার হরিণ সহজে হাতে পায় না।
জেলার সদরের ধর্মপুরের আবু তাহের জানান, বিগত ২০১৯ সালে নভেম্বরে পাসপোর্টের আবেদন ফরম জমা দিয়েও এ পর্যন্ত বই পাননি। দপ্তরে একাধিকবার যোগাযোগ করলে বলা হয় দালালের মাধ্যমে করেননি কেন! তবে একাধিক দালাল জানান, নাম তাদের, কাম কিন্তু পাসপোর্ট অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

জানা গেছে, প্রতিটি সাধারণ পাসপোর্ট প্রার্থীকে অতিরিক্ত ১১শত টাকা বেশি দিয়ে আবেদন ফরম জমা দিতে হয়। এ টাকার সিংহভাগই চলে যায় অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মীদের পকেটে।

সূত্র জানায়, প্রতিদিন এ দপ্তরে ন্যূনতম ৩০০টি বই জমা হলেও সাধারণভাবে দপ্তরের কর্মকর্তাদের পেটে ঘুষ বাবত ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা পকেটস্থ হচ্ছে। এ হিসেবে প্রতিমাসে কমপক্ষে এক কোটি টাকার ওপরে হাতিয়ে নিচ্ছে দপ্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা।

এক দালাল জানান, তাদের মাধ্যমে জমা দেয়া প্রতিটি ফরমের গায়ে একটি করে সাংকেতিক চিহ্ন থাকে। সে অনুযায়ী দপ্তরের কর্মকর্তারা দালালদের কাছ থেকে সুবিধা ভাগিয়ে নেন। এক্ষেত্রে প্রায় দালাল আবেদনপত্রে নিজ নামের বিপরীতে একটি ভুয়া সত্যায়ন সীল দিয়ে দায় সারেন। পাসপোর্ট কর্মকর্তারা সীল অনুযায়ী বুঝে নেয় এ আবেদনপত্রটি কোন দালালের দখলে। সে অনুযায়ী ওই দালালের কাছ থেকে চুক্তিকৃত বাড়তি অর্থ হাতিয়ে নেয় তারা।

অভিযোগ রয়েছে, দালালের মাধ্যমে কোনো ফরম জমা দিলে তা যতই ত্রুটিপূর্ণ হোক না কেন তা নিয়ে কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না গ্রাহককে। বিপরীতে কোনো গ্রাহক দালালের দ্বারস্থ না হয়ে ফরম পূরণ করে নিজে জমা দেয়ার সময় নানা দোষত্রুটি ধরে আবেদনটি সহজে জমা নেয় না দপ্তরের দায়িত্বশীলরা।

অভিযোগ রয়েছে, দালালের মাধ্যমে যে ফরম জমা হয় তার সত্যায়নের অধিকাংশই ভুয়া ও বানোয়াট সিল-স্বাক্ষরে সম্পাদিত।

নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি বখতিয়ার সিকদার জানান, পাসপোর্ট ফরমেই পরিষ্কার বলা রয়েছে সরকার অনুমোদিত যে কোনো দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক যে কোনো পাসপোর্ট ফরমে গ্রাহকের পক্ষে সত্যায়ন করতে পারবেন। এর আগে এর ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ থাকলেও বর্তমান উপ পরিচালক যোগদানের পরই সে ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়েছে।

সেবাপ্রত্যাশী আ স ম হোসান উদ্দিন জানান, এর আগে জেলার দৈনিক দিশারীর সম্পাদকের স্বাক্ষরে দুই শতাধিক পাসপোর্ট সম্পাদিত হয়েছে; কিন্তু বর্তমান উপপরিচালক মাহবুবুর রহমান যোগদানের পর তাতেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

দৈনিক নয়া সংবাদের সম্পাদক মনিরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, কোন সংবাদপত্রের সম্পাদকদের হাতে পাসপোর্টের আবেদন ফরম সম্পাদিত হলে পাসপোর্ট দপ্তর ঘুষ লাভে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করছে। যে কারণে দালালনির্ভর প্রতিষ্ঠানকে আরো দালালবান্ধব করার খায়েসেই বর্তমান উপপরিচালক নোয়াখালীর সংবাদপত্রের সম্পাদকদের ব্যতিরেখে কাজ করছেন।

হাতিয়া থেকে পাসপোর্ট করতে আসা ওমর ফারুক অভিযোগ করেন, তিনি হজ পালনের লক্ষ্যে সোনালী ব্যাংকে জরুরি ছয় হাজার ৯০০ টাকা জমা দিয়ে পাসপোর্ট ফরম পূরণ করে জমা দিতে গেলে বলা হয় কোন পত্রিকার সম্পাদকের সত্যায়ন গ্রহণযোগ্য নয়। ফারুক মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, পাসপোর্ট ফরম জমা প্রদানে ভোগান্তির কারণে আজকের সারাদিনটি তার কাছে ব্যর্থতায় পরিণত হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, পাসপোর্ট আবেদন ফরম জমা দিতে যদি এত সমস্যায় পড়তে হয়, তাহলে বই পেতে তো আরো হয়রানির সীমা ছাড়িয়ে যাবে। যে কারণে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে হাতে বই পাবেন কি না, তা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

তবে এ বিষয়ে নোয়াখালী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক মাহবুবুর রহমান দাবি করেন, তিনি সরকারি আইন মোতাবেক সবই করছেন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫