Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

একাধিক অভিযানেও মুন্সীগঞ্জে চলছে কারেন্ট জাল উৎপাদন

Icon

কাজী সাব্বির আহমেদ দীপু, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২১:০৯

একাধিক অভিযানেও মুন্সীগঞ্জে চলছে কারেন্ট জাল উৎপাদন

মুন্সীগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠ মুক্তারপুর, ফিরিঙ্গিবাজার, ডিঙাভাঙ্গা, মিরেশ্বর, বাগবাড়ীসহ আশপাশ এলাকার তিন শতাধিক সুতার কারখানায় অবৈধ কারেন্ট জাল উৎপাদন ও বিক্রি অব্যাহত রয়েছে। বর্ষা মৌসুম শুরুর পর থেকে অসাধু ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে গোপনে চালাচ্ছে কারেন্ট জাল উৎপাদন ও বিক্রিতে।

দীর্ঘ বছর ধরে মৎস্য বিভাগ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অবৈধ কারেন্ট জাল উৎপাদন বন্ধে যৌথ অভিযান চালিয়ে কোটি কোটি মিটার কারেন্ট জাল জব্দ, আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট, কারখানা সিলগালা, জেল-জরিমানা করলেও অবৈধ কারেন্ট জাল উৎপাদন বন্ধ করা যাচ্ছে না। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত গত ৮ মাসে একাধিক অভিযানে ১১ কোটি ৯৮ লাখ ২৯ হাজার মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা। তারপরও অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার লোভে গোপনে অবৈধ কারেন্ট জাল উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে।

চলতি বর্ষা মৌসুম শুরুর পর থেকে বিপুল পরিমাণের কারেন্ট জাল জব্দ করা হলেও সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কারেন্ট জাল উৎপাদন ও বিক্রি থেমে নেই। এমনকি উৎপাদিত কারেন্ট জাল প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে সড়ক ও নৌপথে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় চলে যাচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের জেলা গুলোতে যাত্রীবাহী লঞ্চে করেও বস্তায় বস্তায় কারেন্ট জাল নিয়ে যাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। নৌপথের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সড়ক পথেও যাচ্ছে অবৈধ কারেন্ট জাল।

পুলিশ ও ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি সদরের ধলেশ্বরী নদীর তীরে মুক্তারপুর এলাকার ৯টি ফ্যাক্টরি থেকে ৪ কোটি ১ লাখ ৫০ হাজার মিটার কারেন্ট জব্দ করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে টাকার অবৈধ কারেন্ট জাল পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়। ১২ জানুয়ারিও অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ কারেন্ট জাল জব্দ করে। ৩ এপ্রিল সদরের কমলাঘাট বন্দর এলাকায় নৌ-পুলিশ অভিযান চালিয়ে খমি এগ্রো ফেব্রিক্স কারখানা থেকে ৪ লাখ ১৪ হাজার মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল এবং মনোফিলামেন নেট জাল ও ১৫ বস্তা মনোফিলামেন সুতার ববিন জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ২ জনকে ১০ হাজার টাকা জরিমানার দণ্ডাদেশ দেন।

মুক্তারপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২ কোটি ৫০ লাখ মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করে মুক্তারপুর নৌ-পুলিশ। ১০ জুন সদরের মালিপাথর এলাকায় ইউপি সদস্য ইমরান হোসেনের আয়রন মিল থেকে ১ কোটি ১০ লাখ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়। অন্যদিকে গত ১২ জুন সদরের সিপাহীপাড়া এলাকার ৩টি কারখানায় অভিযান চালিয়ে ৬ লাখ ৬০ হাজার মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করা হয় বলে জানান ডিবি পুলিশের ওসি মোজাম্মেল হক।

তিনি জানান, গত ২২ জুন শহরের উপকণ্ঠ নয়াগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২ লাখ ৫ হাজার মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল ও জাল তৈরীর ১৫০০ সুতার ববিন জব্দ করা হয়। গত ২৫ জুলাই সদরের দূর্গাবাড়ী এলাকায় হাজী গোলাম কিবরিয়ার ওয়াশিং ও ইস্ত্রি কারখানায় অভিযান চালিয়ে ৪৫ বস্তা ভর্তি ৪০ লাখ মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করে মুক্তারপুর নৌ পুলিশ। গত ১৯ আগস্ট মিরকাদিম নৌ পুলিশ লাইন্স মাঠে একাধিক অভিযানে ১১টি মামলার আলামত ৩ কোটি ৪ লাখ মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার মুক্তারপুর, জোরপুকুরপাড়, নয়াগাওঁ, মিরেশ্বরাই, দয়ালবাজার ফিরিঙ্গিবাজার, হাতিমাড়া, সিপাহীপাড়াসহ কয়েকটি এলাকায় ছোট বড় তিন শতাধিক জাল তৈরীর কারখানা রয়েছে। মনো ফিলামেন্ট জাল উৎপাদনে খরচ কম এবং বিক্রি বেশী হয়। তাই অবৈধ মনো ফিলামেন্ট জাল বা কারেন্ট জাল উৎপাদনে আগ্রহী ব্যবসায়ীরা। ২০০২ সালে এই অবৈধ মনো ফিলামেন্ট কারেন্ট জাল উৎপাদন ও বিক্রি নিষিদ্ধ করে আইন প্রণয়ন করা হয়। এতে উচ্চ আদালতে রিট করে দীর্ঘদিন কারেন্ট জাল উৎপাদন ও বিক্রির সুযোগ পায় ব্যবসায়ীরা। এছাড়া জেলা মৎস্য উপকরণ মালিক সমবায় সমিতি নামে কারেন্ট জাল তৈরীর সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতে নানা কৌশল গ্রহণ করে।

মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, বর্ষা মৌসুম শুরুর পর থেকে অসাধু ব্যবসায়ীরা আবারো কারখানাগুলোতে গোপনে কারেন্ট জাল তৈরী করার তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। একাধিক সোর্সের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের পরই অভিযান চালানো হয়। এরপরও গোপনে কারেন্ট জাল উৎপাদন করে যাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।

নৌ-পুলিশের ঢাকা অঞ্চলের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো ফরিদুল ইসলাম জানান, নৌ-পুলিশের পৃথক অভিযানে ১১টি মামলার আলামত হিসেবে সংরক্ষণে রাখা ৩ কোটি ৪ লাখ মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল গত ১৯ আগস্ট আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়েছে। গত ৮ মাসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা পৃথক অভিযানে জব্দ করা প্রায় ১২ কোটি মিটার কারেন্ট জাল ধলেশ্বরী নদীর তীরে পৃথক পৃথকভাবে আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়। তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, একের পর এক অভিযানে বিপুল পরিমাণের কারেন্ট জাল জব্দ, জরিমানা, দণ্ডাদেশ দেয়া হলেও এখনো থেমে নেই অবৈধ কারেন্ট জাল উৎপাদন ও বিক্রি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫