ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে তিন শতাধিক বসতভিটা বিলীন

জামালপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০১:০২

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে ব্রহ্মপুত্র নদীতে ভয়াবহ ভাঙন চলছে। ইতিমধ্যেই তিন শতাধিক পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দেওয়ানগঞ্জ সদর ইউনিয়নের তিলকপুর, কাউনেরচর, গুচ্ছগ্রাম, বেপারীপাড়া, সরকারপাড়া, শেখপাড়ার এসব বাড়িঘর ও হাজার হাজার একর ফসলি জমি হারিয়ে গেছে। সম্পত্তি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, দেওয়ানগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের পুরোটাই ও ৬নং ওয়ার্ডের অধিকাংশ অঞ্চল এখন নদীগর্ভে। এ অঞ্চলের কাউনের চর, গুচ্ছগ্রাম, বেপারীপাড়া, সরকারপাড়ার আট শতাধিক পরিবারের বসতভিটা, আবাদি জমি, বিদ্যালয় ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে বিলীন হয়েছে। একই ইউনিয়নের গায়েনপাড়ার অধিকাংশসহ চরখড়মা, নান্দেকুড়া গ্রাম দু’টির ৫০টি পরিবারের বসতভিটা ও আবাদী জমি ইতোমধ্যেই ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। ফলে এ অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ বকশীগঞ্জ উপজেলার কলকিহারা, মাইছানিরচর, দুর্গাপুর এবং ইসলামপুর উপজেলার গোয়ালেরচর, ফকিরপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, বছরের পর বছর এ অঞ্চলটিতে নদী ভাঙনের ফলে শত শত বসতবাড়ি ও হাজার হাজার একর আবাদি জমি বিলীন হলেও প্রতিকারের কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে এলাকায় গণমানুষের মনে ক্ষোভ বেড়েই চলছে। ভাঙনের শিকার মানুষ বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। তারা জীবন জীবিকার তাগিদে দিগ্বিদিক ছুটছেন। এক সময় যাদের জমিজমা-বসতবাড়ি সবই ছিলো ভাঙনের ফলে এখন তারা অভাব অনটনে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
কাউনের চর গ্রামের মাহবুবুর রহমান ঘুটু বলেন, ‘এক সময় আমার বসতভিটা ও স্বাচ্ছন্দে দিন চলার মতো ফসলি জমি ছিলো। সর্বনাশা ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে আজ আমি নিঃস্ব। এ অঞ্চলে আমার মতো হাজার হাজার মানুষ আজ বসতভিটা ও আবাদি জমি হারিয়ে পথে বসেছেন। তাদের দুর্দশার শেষ নেই। এমনকি দেখারও কেউ নেই।’
দেওয়ানগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আশরাফুল আলম, নুর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, আব্দুস সাত্তার, মো. হারুনুর রশিদ ও সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের সদস্য ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘এ অঞ্চলে প্রতিবছরই ব্রহ্মপুত্র বসতবাড়ি, ফসলি জমি ভেঙে নিচ্ছে। এ বছর বর্ষার শুরু থেকে এ পর্যন্ত তিন শতাধিক পরিবারের বসতভিটা ও শত শত একর ফসলি জমি হারিয়ে গেছে। জনপ্রতিনিধি হয়েও সাধ্য না থাকায় আমরা মুখ বন্ধ করে থাকতে বাধ্য হচ্ছি।’ ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন থেকে এ অঞ্চলের মানুষগুলোকে রক্ষার দাবি তাদের।
এ ব্যাপারে দেওয়ানগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ছামিউল হক বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা জুড়ে বছরের পর বছর নদী ভাঙন চলছে। হাজার হাজার মানুষ তাদের বসতভিটা ও আবাদি জমি হারিয়ে অভাব-অনটনে মানবেতর দিনাতিপাত করছে। আমি এ দুরাবস্থার দ্রুত অবসান চাই।’