
মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের নিম্নগতির সঙ্গে জীবনযাত্রায় জড়িত সব কিছু প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এলেও এখনো ঢাকাসহ দেশের ২৬টি জেলায় রেড জোনের মতো সংক্রমণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সরকারসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে মিলেছে এমন তথ্য। ঢাকায় এখনো রয়েছে সর্বোচ্চ সংক্রমণ।
এদিকে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৮১২ জন। সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতির এই সর্বশেষ তথ্য জানানো হয়।
দেশে করোনাভাইরাসে রবিবার পর্যন্ত মোট শনাক্ত হওয়া তিন লাখ ৩৭ হাজার ৫২০ জনের মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে শনাক্ত হয় ৮৫ হাজার ৯৩৮ জন। মোট শনাক্তকৃতদের মধ্যে ৭১.৩ শতাংশ সুস্থ হয়ে গেছে। মারা গেছে ১.৪ শতাংশ। বাকি ২৭.৩ শতাংশ বা ৯১ হাজার ১৪৪ জন এখনো রোগী হিসেবেই রয়েছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিসংখ্যান অনুসারে এখন ঢাকায় পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ২৪ হাজারের বেশি। তবে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, এখন ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরে রোগীর সংখ্যা বেশি।
অন্যদিকে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি পজিটিভ রোগী আগের মতোই মিরপুর এলাকায়। এ সংখ্যা এখন এক হাজার জনের কাছাকাছি। প্রতিদিন এখনো মিরপুরেই বেশি রোগী শনাক্ত হয়।
আইইডিসিআরের গত শনিবারের হিসাবে ঢাকা মহানগরীর মধ্যে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার হিসাবে ২৭ জন শনাক্ত হয়েছিল মিরপুরে। এরপর ১৫ জন শনাক্ত হয় রমনা, ১৪ জন করে গুলশান ও রামপুরা এলাকায়, ১১ জন ধানমণ্ডি, ১০ জন করে উত্তরা ও ভাটারায় শনাক্ত হয়। বাকি এলাকাগুলোতে শনাক্তের সংখ্যা ১০-এর নিচে।
অন্যদিকে এলাকাভিত্তিক মোট শনাক্তকৃতদের মধ্যে গড়ে ২৭ শতাংশ হিসেবে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি পজিটিভ রোগী ছিলো মিরপুরে ৯০৯, উত্তরায় ৪৪২, ধানমণ্ডিতে ৩৭১, যাত্রবাড়ীতে ২৪৩, গুলশানে ২২৪, রামপুরায় ২২৫, খিলগাঁওয়ে ২২৩ ও মহাখালীতে ২১৭ জন।
একই হিসাব অনুসারে ঢাকা বাদে সারা দেশে পজিটিভ রোগী রয়েছে প্রায় ৬৭ হাজার। ঢাকার পরেই এখনো পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বগুড়া, ফরিদপুর, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট ও খুলনায় সর্বোচ্চ পজিটিভ রোগী রয়েছে। এসব হিসাবের সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে কিছুদিন আগেও সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর রাখা জোনিং সূচকের তুলনা করলে এখনো ঢাকার অনেক এলাকা এবং ঢাকার বাইরের বেশ কিছু জেলা কার্যত অঘোষিত রেড জোন বা সংক্রমণের জন্য বিপজ্জনক অবস্থানে রয়েছে।
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, আমি নিজেও আইইডিসিআরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখলাম ঢাকাসহ ২৬টি জেলা এখনো রেড জোনের উপযুক্ত, আর ২৫টি জেলা ইয়োলো জোনের এবং বাকিগুলো গ্রিন জোনের আওতায় পড়ে। যদিও এখন অফিশিয়ালি জোনিং সিস্টেম থেমে গেছে অজ্ঞাত কারণে।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, জোনিং পলিসি অনুসারে ঢাকায় প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে পেছনের ১৪ দিনে যদি ৬০ জন পজিটিভ রোগী থাকে, আর ঢাকার বাইরে যদি প্রতি লাখে ১০ জন থাকে, তবেই তা রেড জোনের আওতায় পড়ে। আর প্রতি লাখে যদি তিনজনের নিচে আক্রান্ত থাকে তবে তা গ্রিন জোনের আওতায় পড়বে। মাঝের অংশ থাকে ইয়োলের আওতায়।
ফলে আমরা বলতেই পারি, সংক্রমণ আগের তুলনায় কমে গেলেও বিপদ কিন্তু আমাদের ছেড়ে যাচ্ছে না।
দেশে করোনাভাইরাসে গতকাল নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১,৪৭৬ জন। এই সময়ের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩১ জনের। এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হলেন মোট ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫২০ জন। আর কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মোট মারা গেলেন ৪,৭৩৩ জন। রবিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এ হিসেবে বলা যায় দিন দিন শনাক্তের হার কমে আসছে।
আগের সপ্তাহের তুলনায় গত সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা প্রায় ৬ শতাংশ বাড়লেও, নতুন রোগী শনাক্তের হার ১৪.৭৬ শতাংশ কমেছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে। নতুন আক্রান্ত রোগীর তুলনায় সুস্থ রোগীর সংস্থাও বেড়েছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ২,৩৭২ জন। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট সুস্থ হয়েছেন ২ লাখ ৪০ হাজার ৬৪৩ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় ১২,৯৯৯ টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন শনাক্তের এই সংখ্যা পাওয়া গেছে। পরীক্ষার অনুপাতে কভিড-১৯ রোগী শনাক্তের হার ১১.৩৫ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৭ লাখ ২৮ হাজার ৪৮০ টি। যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে পুরুষ ২৫ জন এবং নারী ৬ জন।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি এন্ড মেডিসিনের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বিশ্বে আক্রান্ত হয়েছেন ২ কোটি ৮৭ লাখ ৬৪ হাজার ১৮৩ জন। কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে মৃত্যু হয়েছে ৯ লাখ ২০ হাজার ২৮৩ জন।
সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত এবং মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। আক্রান্তের দিক থেকে এরপরে রয়েছে ভারত, যদিও মৃত্যুর দিক থেকে তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্রাজিল। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের তালিকায় বাংলাদেশে রয়েছে ১৫ নম্বরে।