Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

বাড়ছে ধর্ষণ, প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে আইনের শাসন

Icon

লোকমান তাজ

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২০, ২১:৩৩

বাড়ছে ধর্ষণ, প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে আইনের শাসন

সারাদেশে ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ধর্ষকের কবল থেকে শিশু ও বৃদ্ধারা কেউই রেহাই পাচ্ছে না। এমনকি প্রতিবন্ধী, ভবঘুরে এবং পাগলও ধর্ষণের অসহায় শিকার হচ্ছে। সামাজিক অবক্ষয়, নৈতিকতার অধঃপতন, ক্ষমতার অপব্যবহার, আইন-শৃংখলার অবনতিসহ  সামাজিক অস্থিরতাকে ধর্ষণের কারণ হিসেবে চিাহ্নত করছেন সচেতন মহল। ক্রমর্বধমান ধর্ষণের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে দেশের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি।


পাশাপাশি বিশ্লেষকরা আইন প্রয়োগেকারী সংস্থার তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতাও ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে মনে করেন। ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধির পেছনে মাদকের বিস্তার, বিচারহীনতারহীনতার সংস্ক্তি, বিচারিক প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা, ক্ষমতাসীনদের হস্তক্ষেপে বিচার কাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরির মতো ঘটনাও সমান মাত্রায় দায়ী বলেও অভিজ্ঞমহল ধারণা করেন।


সম্প্রতি কিছু আলোচিত ধর্ষণের ঘটনা
প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) খাগড়াছড়িতে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নারীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। মধ্যরাত আড়াইটার দিকে সদর উপজেলার গোলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন বলপেয়ে আদম এলাকায় দরজা ভেঙে বাড়িতে ঢুকে এক প্রতিবন্ধী নারীকে (২৬) গণধর্ষণ করা হয়।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) বিকেলে স্বামীর সঙ্গে এমসি কলেজে প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন নববধূ। সন্ধ্যায় তাদের কলেজ থেকে ছাত্রাবাসে ধরে নিয়ে যায় ছাত্রলীগের ৬-৭ জন নেতাকর্মী। এরপর দুইজনকে মারধর করা হয়। একই সঙ্গে স্বামীকে আটকে রেখে তার সামনে স্ত্রীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে তারা।

সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড়ের মধ্যে এবার নগরের দাড়িয়াপাড়া এলাকায় এক কিশোরীকে (১৪) ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) কিশোরীকে ছাত্রলীগ কর্মি রাকিবুল হোসেন নিজু ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ উঠে।

রাজধানীতে এক গৃহপরিচারিকার ধর্ষণ মামলায় ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ উত্তরের সহ-সভাপতি সবুজ আল সাহবাকে গ্রেফতার করে মিরপুর মডেল থানা পুলিশ। সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে এ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ‘প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে’ এক তরুণী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১২ টায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্ট সংলগ্ন বিজিবির উর্মি রেস্তোরার পাশে নির্জন স্থানে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানান কক্সবাজার সদর থানার ওসি শেখ মুনীর-উল গীয়াস।

মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার পূর্ব শীলমন্দী এলাকায় ৭০ বছরের এক বিধবা বৃদ্ধা ঘর থেকে ওজু করতে বের হয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে ওজু করতে ঘর থেকে বের হয় বিধবা বৃদ্ধা। অভিযুক্ত কাদির শেখ তাকে পেছন দিক থেকে মুখ চেপে ধরে। এ সময় বসতঘরে কেউ না থাকায় বৃদ্ধার ঘরেই তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।

কক্সবাজারের টেকনাফে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে মাদ্রাসা শিক্ষক মৌলানা নুরুল হককে (২০) আটক করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) বিকালে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের উত্তর শীলখালী আলহেরা ইবতেদায়ি নুরানি মাদ্রাসায় শিক্ষকের কক্ষে ধর্ষণের এই ঘটনা ঘটে।

চলতি বছরে নয়মাসে ৯৭৫ ধর্ষণ
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয়মাসে দেশে ৯৭৫ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে একজনের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৬২ জন এবং গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২০৮ নারী। এছাড়া ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৩ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ১২ নারী। বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায় বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।

সংগঠনটি আরো জানায়, গত ৯ মাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৬১ নারী। এর মধ্যে যৌন হয়রানি কারণে ১২ নারী আত্মহত্যা করেছেন। আর যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৩ নারী এবং ৯ পুরুষ নিহত হয়েছেন। এ সময়কালে দেশে যৌন হয়রানি ও সহিংসতা, ধর্ষণ ও হত্যা, পারিবারিক নির্যাতন, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, গৃহকর্মী নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপসহ নারী নির্যাতনের অনেক ঘটনা ঘটেছে।

তবে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে নারী ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনার সংখ্যা ও এর ভয়াবহতা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ৯ মাসে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪৩২ নারী। এর মধ্যে হত্যার শিকার হন ২৭৯ নারী এবং পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৭৪ নারী। যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ১৬৮ নারী। এর মধ্যে যৌতুকের কারণে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৭৩ জন। যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ৬৬ জনকে এবং নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ১৭ জন নারী। এছাড়া স্বামীর গৃহ থেকে বিতাড়িত হয়েছেন ১২ নারী। এ সময়ের মধ্যে ১১ জন গৃহকর্মী হত্যার শিকার হন এবং ৩২ জন গৃহকর্মী বিভিন্ন ধরণের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এছাড়া ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ২ জন। এছাড়া এ সময়কালে এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ২১ নারী। শিশু নির্যাতন ও হত্যার  গত ৯ মাসের পরিসংখ্যানও অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ সময়কালে ১০৭৮ শিশু শারীরিক নির্যাতনসহ নানা সহিংসতার শিকারসহ হত্যার শিকার হয়েছে ৪৪৫ শিশু। এছাড়া ৬২৭ শিশু ধর্ষণ ও ২০টি বলাৎকারের ঘটনা ঘটেছে।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে এক হাজার ৪১৩জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিলো ৭৩২জন৷ অর্থাৎ, গত বছরের তুলনায় ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে দ্বিগুণ যা ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি৷ ২০১৭ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮১৮ জন নারী৷ এদিকে ২০১৯ সালে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৭৬জনকে৷ আর আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ১০জন নারী৷


Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫