ইরফান সেলিমের টর্চার সেলে মানুষের হাড়, হ্যান্ডকাফ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২০, ২১:৪৬

পুরান ঢাকার চকবাজারে সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের মালিকানাধীন মদিনা আশিক টাওয়ার ভবনের ছাদের একটি রুম থেকে মানুষের হাড় পাওয়া গেছে। র্যাবের দাবি, ১৬ তলা ভবনের ছাদের ওপরের এই কক্ষটি হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করতেন।
র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিল এই কক্ষটি টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এরপর আমরা অভিযান চালিয়েছি। টর্চার সেল থেকে হাড়, হ্যান্ডকাফ, দড়ি, চাকুসহ আরো বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে।
তবে মানুষের হাড়ের বিষয়ে নিশ্চিত করে কোনো মন্তব্য করেননি কেউ। ফরেনসিক করার পর এবিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে বলে জানিয়েছে র্যাবের কর্মকর্তারা।
এর আগে সন্ধ্যায় র্যাবের মুখপাত্র আশিক বিল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের বাড়ির পাশে চকবাজারে আরো একটি টর্চার সেলের সন্ধান পেয়েছে র্যাব। হাজী সেলিমের ছেলে কাউন্সিলর ইরফান সেলিম এবং তার সহযোগী জাহিদুল ইসলামকে এক বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। মাদক ও অবৈধভাবে ওয়াকিটকি রাখার অপরাধে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের দুজনকে একবছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। হাজী সেলিমের বাড়ি থেকে উদ্ধার অস্ত্র ও মাদকের ঘটনায় র্যাব বাদী হয়ে দুটি মামলা করবে বলে জানিয়েছেন আশিক বিল্লাহ।
সোমবার (২৬ অক্টোবর) বেলা ১টা থেকে পুরান ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের চকবাজারের ২৬ দেবীদাস লেনের বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। ইতোমধ্যে হাজী সেলিমের ছেলে ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী জাহিদকে র্যাবের হেফাজতে নেয়া হয়েছে। অবৈধভাবে মদ ও ওয়াকিটকি রাখার দায়ে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের দুইজনকে এক বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, সোমবার (২৬ অক্টোবর) হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা হয়েছে। নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদ খান বাদী হয়ে সোমবার ভোরে মামলাটি করেছেন। মামলায় তিন জন নামীয় এবং অজ্ঞাত আরও দুই-তিন জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা হলো, ইরফান সেলিম, তার বডিগার্ড মোহাম্মদ জাহিদ, হাজি সেলিমের মদিনা গ্রুপের প্রটোকল অফিসার এবি সিদ্দিক দিপু এবং গাড়িচালক মিজানুর রহমানসহ অজ্ঞাত আরও দুই তিন জন। গাড়িচালক মিজানুর রহমানকে ঘটনার পরই গ্রেফতার করা হয় বলেও জানান তিনি।
রবিবার (২৫ অক্টোবর) রাতে কলাবাগানের ট্রাফিক সিগন্যালে হাজী সেলিমের একটি গাড়ি থেকে দুই-তিন জন ব্যক্তি নেমে ওয়াসিম আহমেদ খানকে ফুটপাতে ফেলে এলোপাতাড়ি মারধর করে। পরে ট্রাফিক পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে। পথচারীরা এই দৃশ্য ভিডিও করেন, যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
এজাহারে বলা হয়েছে, ইরফানের গাড়ি ওয়াসিফকে ধাক্কা মারার পর তিনি সড়কের পাশে মোটরসাইকেলটি থামিয়ে গাড়ির সামনে দাঁড়ান ও নিজের পরিচয় দেন। তখন গাড়ি থেকে আসামিরা একসাথে বলতে থাকেন, ‘তোর নৌবাহিনী/সেনাবাহিনী বের করতেছি, তোর লেফটেন্যান্ট/ক্যাপ্টেন বের করতেছি। তোকে এখনি মেরে ফেলব’ বলে কিল-ঘুষি মারেন ও আমার স্ত্রীকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। তারা আমাকে মারধর করে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে যায়। পরে আমার স্ত্রী, স্থানীয় জনতা ও পাশে ডিউটিরত ধানমন্ডি থানার ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে উদ্ধার করে আনোয়ার খান মডেল হাসপাতালে নিয়ে যায়।