Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

ওরা ১১ জন!

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২০, ০৯:০৮

ওরা ১১ জন!

সম্প্রতি ১১ জন সংসদ সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে সংঘটিত দুর্নীতি, অনিয়মসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের ফলে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে সরকার। 

আর এসব ঘটনা ক্রমেই যেন বাড়ছে। প্রকাশ্যে অপরাধী যেই হোক, ছাড় নেই- এমন বক্তব্য দিলেও ক্ষমতাসীন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা সংসদ সদস্যদের এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যাপক হতাশ বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ও একই দলের সংসদ সদস্য নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরীর জামাতা মো. ইরফান সেলিম নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে বেদম মারধর করে এ বিতর্কে ঘি ঢাললেন। ইরফান নিজেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর।

নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে প্রহারের পরপরই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আবিষ্কার করেন ইরফানের টর্চার সেল। ২৬ অক্টোবর অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় দুটি বিদেশি পিস্তল, বিপুল পরিমাণ ইয়াবা, বিদেশি মদ, ১০ ক্যান বিয়ার, হ্যান্ডকাফ ও অনুমোদনহীন ৩৮টি ওয়াকিটকি।

এদিকে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সাত মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায় সত্তরোর্ধ্ব এক ব্যক্তির সাথে জনৈক নারীর শারীরিক মেলামেশার দৃশ্য। ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ক্যাপশনে অনেকেই দাবি করছেন, এটি ময়মনসিংহ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. নাজিমুদ্দিন আহমদের। অনেকে এমনও দাবি করছেন যে, এমপি নাজিমুদ্দিনের কণ্ঠ ও চেহারার সাথেও মিল পাওয়া যাচ্ছে ভিডিওর পুরুষ ব্যক্তির। তবে এ বিষয়ে কোনো পক্ষ থেকেই আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

গত ১৫ অক্টোবর, নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মুজিবর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসককে (ডিসি) হুমকি ও নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের গালাগাল করার অভিযোগ উঠেছে নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে।

ইসি সূত্র জানায়, ১০ অক্টোবর ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের হুমকি ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের গালাগাল করেন নিক্সন চৌধুরী। এ ঘটনায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে অশোভন আচরণের বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে নির্বাচন কমিশনেও চিঠি দেয়া হয়। সূত্র আরো জানায়, ওই চিঠি পর্যালোচনা করে কমিশন সচিবালয় উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা অনুযায়ী মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে সর্বোচ্চ ছয় মাস কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। তবে নিক্সন চৌধুরীর অভিযোগ, তিনি কাউকে হুমকি দেননি; সুপার এডিট করে হুমকির ভিডিও প্রচার করা হয়েছে তাকে হেনস্তা করতে।

এছাড়াও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে জানা গেছে, সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীসহ আট এমপির সম্পদের অনুসন্ধান চালাচ্ছে রাষ্ট্রীয় এই দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা। এরই মধ্যে তাদের নিজ নামে ও স্ত্রী-সন্তানদের নামে বিপুল সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছে সূত্র। দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘সম্পদের বৈধ উৎস দেখাতে ব্যর্থ হলে মামলা করা হবে এসব সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে।’

এই আটজনের মধ্যে পাঁচ সংসদ সদস্যের নাম আসে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর। তারা হলেন- জাতীয় সংসদের হুইপ চট্টগ্রামের শামসুল হক চৌধুরী, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, নারায়ণগঞ্জ-২-এর নজরুল ইসলাম বাবু, ভোলা ৩-এর নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এবং বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ। 

অন্যদিকে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য শহীদ ইসলাম পাপুল ও তার স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলামসহ পরিবারের আরো কয়েক সদস্যের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। 

সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। তার বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য রয়েছে দুদকের হাতে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই শেষ হলে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানা গেছে। 

এ প্রসঙ্গে দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘ইতিমধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা অভিযুক্তদের ইনকাম ট্যাক্স ফাইল সংগ্রহ করছেন এবং সংসদ সদস্য শহীদ ইসলাম পাপুলসহ কয়েকটি অভিযোগের অনুসন্ধান একবারে শেষ পর্যায়ে রয়েছে।’ এর মধ্যে ক’জন সংসদ সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিসও করা হয়েছে বলে জানা গেছে। আরো কয়েকজন সংসদ সদস্যের ওপর সক্রিয় নজর রাখছে দুদকের গোয়েন্দা ইউনিট. এমন তথ্য পাওয়া গেছে দুদক সূত্রে। জানা গেছে, এই সন্দেহভাজনদের মধ্যে কয়েকজন মন্ত্রীও রয়েছেন।

এর আগে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনের সময় বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য মনোনয়নবঞ্চিত হন নানারকম বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য। বাদ পড়াদের এই তালিকায় ছিলেন- জাহাঙ্গীর কবির নানক (ঢাকা-১৩), বিএম মোজাম্মেল হক (শরীয়তপুর-১), আমানুর রহমান খান রানা (টাঙ্গাইল-৩), আব্দুর রহমান বদি (কক্সবাজার-৪), খন্দকার আজিজুল হক আরজু (পাবনা-২) ও এটিএম আব্দুল ওহাব (মাগুরা-১)। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাদপড়াদের স্থলে পরিবারের অন্য সদস্যদের মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫