ক্যান্সার হাসপাতালের তিন কর্মকর্তার ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের রায়

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২০, ২০:৫২

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চরম অব্যবস্থাপনা এবং কর্তা ব্যক্তিদের কর্তব্যে অবহেলাকে নিন্দনীয় ও উদ্বেগের বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ৬ কর্মকর্তাকে ৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছেন।এনআইসিআরএইচ কর্মকর্তারা হলেন- এএমএম শরিফুল আলম, মোল্লা ওবায়দুল্লাহ, ও আইসিইউতে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা মানস কুমার বসু। প্রথম দুজন এরই মধ্যে অবসরে গেছেন।
হাসপাতালের ভেন্টিলেটর মেশিন স্থাপনে অবহেলার বিষয়ে জারি করা রুলের রায়ে মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) এমন মন্তব্য করেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ।
রায়ে আদালত বলেন, দেশের একমাত্র ক্যান্সার রিচার্স ইনস্টিটিউট এবং হাসপাতালে চরম অব্যবস্থাপনা, দ্বায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কর্তব্যে অবহেলা শুধুমাত্র দুঃখজনকই নয়, তা নিন্দনীয় ও উদ্বেগের বিষয়।
২০২০ সালের ২ জানুয়ারিতে একটি ইংরেজি দৈনিকে ‘আইসিইউ অন সিকবেড’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ১২ বছর আগে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) জন্য আটটি অত্যাধুনিক আর্টিফিশিয়াল রেসপিরেটরি ভেন্টিলেটর (এআরভি) মেশিন কেনা হয়েছিল।
আইসিইউর জন্য অতি প্রয়োজনীয় এই যন্ত্রগুলোর প্রত্যেকটি ৭০ লাখ টাকায় কেনা হলেও আশ্চর্যজনকভাবে একবারের জন্যও সেগুলো ব্যবহার করা হয়নি। আইসিইউর ভেতরে এক কোণায় অযত্নে ফেলে রাখা হয়েছে যন্ত্রগুলো। এখন হাসপাতালটির আইসিইউতে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থা নেই। অক্সিজেন সরবরাহের জন্য হাসপাতালটিতে একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা তিন বছর আগে চালু হলেও ভেন্টিলেটরগুলো এখনও বসানো হয়নি। আরও খারাপ খবর হল, এর মধ্যেই ভেন্টিলেটরগুলোর মাদারবোর্ড চুরি হয়ে গেছে। ফলে এ যন্ত্রগুলো এখন পুরোপুরি অকেজো।
এ প্রতিবেদন নজরে নিয়ে একই দিন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) জন্য আটটি অত্যাধুনিক আর্টিফিশিয়াল রেসপিরেটরি ভেন্টিলেটর (এআরভি) মেশিন স্থাপন রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহারে অবহেলার অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি রুলও জারি করেন। একই সঙ্গে অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে থাকা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মো. মোয়াররফ হোসেনের অবসরকালীন সুবিধা স্থগিতের নির্দেশ দেন আদালত।
রাষ্ট্রীয় অর্থ যথাযথভাবে ব্যয়ের লক্ষ্যে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য দেশের সব পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি ক্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণে কয়েকটি নিয়মনীতি দিয়ে তা অনুসরণ করতে বলেছেন আদালত। এছাড়া স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিরোধে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো দুদকের সুপারিশমালার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার, সারওয়ার হোসেন বাপ্পী, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সামীউল আলম সরকার ও উর্বষী বড়ুয়া সীমি। ডা. মোয়াররফ হোসেনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুশফিক উদ্দিন বখতিয়ার। ওই ইংরেজি দৈনিকের পক্ষে ছিলেন কাজী ইরশাদুল আলম।