
প্রতিবছরের মতো এবারো বরিশালের কাউনিয়া আদি মহাশ্মশানে আয়োজন করা হয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশের ‘সর্ববৃহৎ’ দীপাবলি উৎসব। লগ্ন অনুযায়ী, শুক্রবার বিকেল ৪টা ৩২ মিনিটে শুরু হওয়া এই আয়োজন চলবে শনিবার দুপুর ২টা ২৮ মিনিট পর্যন্ত। তবে করোনার কারণে খুব সল্প পরিসরে পালন হচ্ছে এই উৎসব। তোরণ নির্মাণ, আলোকসজ্জা ও মেলার আয়োজন থেকে পিঁছু হটেছে আয়োজকরা। এমনকি প্রার্থনায় যেন স্বাস্থবিধি উপেক্ষিত না হয়, সে ব্যাপারেও তদারকি করা হচ্ছে।
কাউনিয়া মহাশ্মশান ঘুরে দেখা গেছে, ‘দীপাবলি উৎসবের জন্য মহাশ্মশানের মঠসহ সমাধিস্থলগুলো সাঁজানো হয়েছে নতুন রূপে। সামাধিতে জ্বালানো হয়েছে মোমবাতি। প্রয়াতদের পছন্দের খাবার সাঁজিয়ে রেখেছেন স্বজনরা।
প্রতি বছর এই দিনটির অপেক্ষায় থাকেন প্রয়াতদের হিন্দু ধর্মাবলম্বী স্বজনেরা। এ লক্ষ্যে নগরীর কাউনিয়ায় ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মহাশ্মশানে নির্মাণ করা হয় একাধিক তোরণ এবং নজরকারা আলোকসজ্জা। দীপাবলি উৎসব ঘিরে আয়োজন করা হয় মেলার। দেশ-বিদেশ থেকে হাজারো পুণার্থী এবং দর্শনার্থী আসেন এই মহাশ্মশানে। তবে এবারের আয়োজনে এর কোনোটিই নেই। মহামারি করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সরকারি নির্দেশনা এবং স্বাস্থবিধি মানতেই এবারের আয়োজনে নেই সাজসজ্জা।
বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সভাপতি মানিক মুখার্জি কুন্ডু বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, কালিপূজার আগের দিন ভূত চতুর্দশী পূণ্য তিথিতে পূজা অর্চনা করলে মৃত ব্যক্তির আত্মা শান্তি লাভ করে। তাই প্রিয়জনদের আত্মার শান্তি কামনার পাশাপাশি প্রয়াতের সামাধিস্থলে নিবেদন করা হয় তার পছন্দের নানা ধরনের খাবার। সব কিছু করা হয় তিথি মোতাবেক। এছাড়া সামাধির পাশে মোমবাতি প্রজ্বলন করে স্বজনরা’।
সর্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির বরিশাল মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক সুরঞ্জিত দত্ত লিটু জানান, করোনার প্রকোপ বিবেচনা করে এবার সংক্ষিপ্ত পরিসরে আয়োজন করা হয়েছে শ্মশান দিপাবলী উৎসব। এ কারণে বিগত দিনে জাঁকজমকপূর্ণ যে মেলা, তোরণ এবং আলোকসজ্জার আয়োজন করা হতো; তা এবার করা হয়নি।
তাছাড়া করোনা সতর্কতায় মাস্ক ছাড়া কাউকে শ্মশানে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। জীবাণুনাশক দুটি টানেল বসানো হয়েছে শ্মশানের প্রবেশ মুখে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য সার্বক্ষণিক করা হচ্ছে মাইকিং।
এদিকে, ‘সংক্ষিপ্ত পরিসরে হলেও দীপাবলি উৎসব নির্বিঘ্ন এবং শান্তিপূর্ণ করতে সব বাহিনীর সমন্বয়ে নানা পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. খাইরুল আলম। তিনি জানিয়েছেন, ‘নিরাপত্তার কাজে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকধারী, গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাব সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছে।
শ্মশান কমিটি সূত্রে জানা গেছে, ‘প্রায় ৬০০ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা মহাশ্মশানে প্রায় ৬১ হাজার সমাধি (মঠ) রয়েছে। এর মধ্যে ৫০ হাজারের অধিক পাকা, ১০ হাজার কাঁচা মঠ এবং ৮০০ মঠ রয়েছে যাদের স্বজনরা এই দেশে থাকেন না। সেসব মঠ হলুদ রং করা হয়েছে।
ভারত উপমহাদেশে এত বড় সমাধিস্থল আর নেই বলেও জানিয়েছেন তারা। পাশাপাশি ১৯২৭ সাল থেকে এখানে দীপাবলির আয়োজন করা হয় বলে দাবি কমিটির।