মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি নিষেধাজ্ঞা চেয়ে রিট

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২০, ১৯:১৩

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রগুলো বিক্রি-হস্তান্তর থেকে বিরত রাখতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। আজ রবিবার (১৫ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না এবং মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র এ রিট করে।
বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চে আগামী সপ্তাহে এ রিটের আবেদনে ওপর শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন রিটের পক্ষের আইনজীবী শাহীনুজ্জামান ও সৈয়দা নাসরিন।
আইনজীবীরা জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত অস্ত্র–আগ্নেয়াস্ত্রগুলো বিক্রি–হস্তান্তরের কার্যক্রম কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এ মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত অস্ত্র–আগ্নেয়াস্ত্রগুলো জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষণে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না—এ বিষয়েও রুল চাওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি ওই সব অস্ত্র–আগ্নেয়াস্ত্র জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে বা মুক্তিযুদ্ধসংশ্লিষ্ট অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে হস্তান্তরের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না—এ মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে রিটে। রুল হলে তা বিচারাধীন অবস্থায় একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত অস্ত্র–আগ্নেয়াস্ত্রগুলো জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষণে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনাও চাওয়া হয় রিটে। প্রতিরক্ষাসচিব, অর্থসচিব, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিব ও বাণিজ্যসচিবকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
গত ৫ অক্টোবর একটি জাতীয় দৈনিকে ‘মুক্তিযুদ্ধের অস্ত্র বেচতে চায় সরকার’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত হয়েছে, এমন আগ্নেয়াস্ত্রগুলো সরকার বিক্রি করতে চায়। সরকারের যুক্তি হচ্ছে- এগুলো পুরোনো, অপ্রচলিত ও যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে অকার্যকর। ফলে এগুলো রাখার কোনো দরকার নেই। প্রাচীন নিদর্শন বা স্মৃতিচিহ্ন (অ্যান্টিক সুভ্যেনির) হিসেবে অস্ত্রগুলো কিনে নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি ও সুইজারল্যান্ডের একটি অস্ত্র আমদানিকারক কোম্পানি।
এদিকে পুরোনোর পাশাপাশি নতুন অস্ত্র ও গোলাবারুদ রপ্তানির উদ্যোগ রয়েছে সরকারের। প্রথম উদ্যোগটি নেয়া হয় ১৬ বছর আগে। এ নিয়ে আবারো নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
রপ্তানি করতে চাওয়া পুরোনো অস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্যে তৈরি ০.৩০৩ রাইফেল নম্বর-৪ এমকে-১; ৯ এমএম স্টেন এসএমজি এমকে-২ ও সিএম ৯ এমএম স্টেন এ১; ভারতে তৈরি ৭.৬২ এমএম এসটিআর এল১ এ১ /১ এ ১ ও রাইফেল জি-৩; পাকিস্তানে তৈরি ৪৪ এমএম হ্যান্ড লঞ্চার এম-৫৭; যুক্তরাষ্ট্র/রাশিয়া/জাপানে তৈরি পিস্তল ও রিভলবার ৭০০ এবং জার্মানি/যুক্তরাজ্য/ভারতে তৈরি এলএমজি এইচকে ১১ এ১ সিএএল ৭.৬২ * ৫১।
আট শ্রেণি মিলিয়ে অস্ত্রের মোট সংখ্যা ২৭ হাজার ৬৬২। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৪ হাজার ৪৫৪টি হচ্ছে ০.৩০৩ রাইফেল নম্বর-৪ এমকে-১। আর সবচেয়ে কম ১১৫টি হচ্ছে ৪৪ এমএম হ্যান্ড লঞ্চার এম-৫৭।
বিদ্যমান রপ্তানিনীতি ২০১৮-২১ অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে নতুন, পুরোনো বা অচল কোনো ধরনের অস্ত্র রপ্তানিরই সুযোগ নেই। পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সব সময় ‘অস্ত্র ছাড়া সবকিছু’ (এভরিথিং বাট আর্মস) নীতি অনুসরণ করে আসছে।
তারপরও এগুলো রপ্তানির একটি পথ বের করার চেষ্টা চলছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানা (বিওএফ) ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মিলে এ নিয়ে কাজ করছে কয়েক বছর ধরেই।