Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

চিরনিদ্রায় শায়িত ভাষা সৈনিক জাহিদ হোসেন মুসা

Icon

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২০, ১৯:২৪

 চিরনিদ্রায় শায়িত ভাষা সৈনিক জাহিদ হোসেন মুসা

মহিশাকুণ্ডের বটতলায় পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন রাজনীতিবিদ, বিশিষ্ট সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী ভাষা সৈনিক মো. জাহিদ হোসেন মুসা মিয়া।

বুধবার (১৮ নভেম্বর) বাদ যোহর ঝিনাইদহ কেন্দ্রীয় ঈদগা ময়দান ওয়াজীর আলী হাই স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে তার দ্বিতীয় জানাজা সম্পন্ন হয়। পরে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাদ এশা ধানমন্ডির ঈদগাহ মসজিদে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

ঝিনাইদহ কেন্দ্রীয় ঈদগা ময়দানে দ্বিতীয় জানাজায় জাহিদ হোসেন মুসা মিয়ার জ্যেষ্ঠ ছেলে জাহেদী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী ও তার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় আরো উপস্থিতি ছিলেন- জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার সাইদ, পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মশিউর রহমান প্রমুখ।


এর আগে দেশের ও ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভাষা সৈনিক জাহিদ হোসেন মুসার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে এসেছিলেন হাজারও মানুষ।

এ সময় ঝিনাইদহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার মরদেহে শ্রদ্ধা জানান- বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাসানুজ্জামান কল্লোল, ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাস, সদর ইউএনও বদরুদ্দোজা শুভ, পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্ট, হরিণাকুন্ডু উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হুসাইন, জেলা বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট এএসএম মশিউর রহমান প্রমুখ।

মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৯ বছর।

গত ১৩ অক্টোবর বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতার কারণে ভাষা সৈনিক জাহিদ হোসেন মুসাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ছয় পুত্র, এক কন্যা এবং নাতি-নাতনি রেখে গেছেন। তার জ্যেষ্ঠ পুত্র মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী রেডিয়েন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান।

জাহিদ হোসেন মুসা রেডিয়েন্ট গ্রুপ অব কোম্পানিজ ও সাম্প্রতিক দেশকালের সম্মানিত উপদেষ্টা ছিলেন।

ভাষা সৈনিক মো. জাহিদ হোসেন মুসা ১৯৩২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নানার বাড়ি যশোর জেলার ঝিনাইদহ (বর্তমানে জেলা) মহকুমার কালিগঞ্জের পাইকপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তৎকালীন বৃটিশ ভারতে জন্ম নেয়া এই মানুষটি বেড়ে উঠেছেন পাকিস্তানে, দেখেছেন মুক্তিযুদ্ধ। মওলানা ভাসানীর এই রাজনৈতিক সহচর দীর্ঘ সময় ঢাকা ও কলকাতায় কাটিয়েছেন।


বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পূর্ব থেকে ঝিনাইদহের নারিকেলবাড়িয়ায় তার পৈতৃক বাড়িতে অসংখ্য গুণী রাজনীতিবিদের আগমন ঘটেছে। বিশেষত মওলানা ভাসানী ঝিনাইদহে গিয়ে তার বাড়িতেই থাকতেন। সে সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গেও ছিলো তার সুসম্পর্ক।

প্রবীণ এই রাজনীতিক, মওলানা ভাসানীর নির্দেশে ১৯৭৩ ঝিনাইদহ মহকুমার ন্যাপ সভাপতির দায়িত্বে থাকার সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন ঝিনাইদহ থেকে।

রাজনৈতিক জীবনে ১৯৫৫-৫৭ পর্যন্ত ঝিনাইদহ মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাথে যুক্ত ছিলেন।

জাহিদ হোসেন মুসা অসংখ্য গান ও কবিতা রচনা করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের নাম ‘অনেক দেরিতে’।


প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে ভাষা সৈনিক জাহিদ হোসেন মুসার সভাপতিত্বে গড়ে তোলা হয় জাহেদী ফাউন্ডেশন নামে এক সমাজসেবামূলক সংস্থা। বাংলাদেশে নারী শিশু ও দুঃস্থদের জন্য খাদ্য কর্মসূচি, শিক্ষাখাতে বৃত্তিমূলক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, স্বাস্থ্যখাতে প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা ও ক্রীড়া উন্নয়নে এই সংস্থাটি সমাজে ভূমিকা পালন করে আসছে। তার পৃষ্ঠপোষকতায় যশোর কালেক্টরেট স্কুলে গড়ে উঠে ‘জাহানারা হুদা একাডেমিক ভবন’। এছাড়াও নিজ গ্রাম নারিকেলবাড়িয়ায় আমেনা খাতুন কলেজে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘মুসা মিয়া একাডেমিক ভবন’। ঝিনাইদহ শহরে তার নামে গড়ে তোলা হয় বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের স্কুল ‘মুসা মিয়া বুদ্ধি বিকাশ বিদ্যালয়’। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত করা হয় ‘মুসা মিয়া ডায়াবেটিক সেন্টার’।

বর্ণাঢ্য জীবনে নানা সামাজিক অবদান ও ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনস্বরূপ তার নামে ঝিনাইদহ পৌরসভার একটি সড়কের নামকরণ করা হয়।


Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫