২০২২ সালের মধ্যে সব ভোটারের হাতে স্মার্ট কার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২০, ২১:৪৫

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি) মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেছেন, নতুন প্রকল্পে ২০২২ সালের মধ্যে দেশের সব ভোটারের হাতে স্মার্ট কার্ড দেয়া হবে। এছাড়া জন্মের পরপরই প্রত্যেক শিশুকে দেয়া হবে ইউনিক আইডি নম্বর।
মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
এনআইডি মহাপরিচালক বলেন, আপনারা সবাই এরইমধ্যে জেনেছেন, আজ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১০ হাজার ৭০২ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সাতটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। একনেক সভায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) (২য় পর্যায়)’ প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিয়েছেন। যার খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮০৫ কোটি ৯ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। যারা ভোটার নন, এমন ১০ বছর বয়স থেকে ১৭ বছর বয়সীদের দেয়া হবে পেপার লেমিনেটিং কার্ড।
একসেস টু সার্ভিসেস দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পে যেসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে তা হলো-
১. নতুন ভোটার নিবন্ধন, স্থানান্তর, কর্তন, তথ্যের ভুল সংশোধন সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং অধিকতর দক্ষতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে নাগরিক সেবা।
২. ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণ এবং অনুর্ধ্ব ১৮ (১০+) নাগরিকদের নিবন্ধনের জন্য গাইডলাইন প্রস্তুতকরণ ও কর্মপ্রক্রিয়া সুনির্দিষ্টকরণ।
৩. রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রে সকল পরিসেবা যথাযথভাবে নিশ্চিত করার মাধ্যমে শান্তি শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, সরকারি সেবায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ।
৪. ডাটাসেন্টার (ডিসি) এবং ডিজাস্টার রিকভারি সিস্টেম (ডিআরএস) এর সার্ভার, হার্ডওয়্যার, কম্পিউটার সামগ্রী, ইকুইপমেন্ট ইত্যাদি ২০১১ সাল থেকে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে এসব যন্ত্রপাতির কার্যক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। এসব যন্ত্রের প্রতিস্থাপন, আপগ্রেডেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্পন্ন না হলে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ডাটাসেন্টার হুমকির সম্মুখীন হবে এবং পরিচিতি সেবা ব্যাহত হবে, বিধায় প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় সার্ভারের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ নতুন ইকুইপমেন্ট সংগ্রহের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
৫. ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত এবং নিবন্ধনযোগ্য সব নাগরিকের ১০ আঙুলের ছাপ ও আইরিশ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, বায়োমেট্রিক ম্যাচিং সম্পন্ন করার মাধ্যমে দ্বৈততা পরিহারকরণ, খসড়া ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রস্তুত।
৬. নিবন্ধন, সংশোধন, স্থানান্তরজনিত দলিল স্ক্যান করে সেগুলোর হার্ড ও স্ক্যান কপি সংরক্ষণের জন্য ডাটা ওয়্যারহাউজ প্রস্তুত।
৭. আইডি কার্ডে ১০ ডিজিট-বিশিষ্ট ইউনিক পরিচিতি নম্বর প্রদান করাসহ ইউনিক আইডি নম্বর বিভিন্ন সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত করার কার্যক্রম চলমান। জন্ম নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে একটি শিশুর জন্মের পরপরই তাকে এই ১০ ডিজিটের ইউনিক আইডি নম্বর দেয়া হবে। ফলে আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে শুধুমাত্র পরিচিতিই নয় বরং ব্যক্তির সামগ্রিক অধিকার রক্ষা ও আমৃত্যু সামাজিক সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করবে।
৮. তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠানকে ই-কেওয়াইসি সেবা প্রদান এবং এ কার্যক্রমে নির্ভরযোগ্য তথ্য হিসেবে এনআইডি ডাটাবেজের ব্যবহার অব্যাহত রাখা।
৯. প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের দ্রুততম সময়ে নিবন্ধন, পরিচয়পত্র প্রদান এবং প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি।
১০. এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দুর্নীতি হ্রাস পাবে, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রে সকল পরিসেবা যথাযথভাবে নিশ্চিত হবে এবং সরকারি সেবায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে যা সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
১১. প্রকল্পটি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে তা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে মূল প্লাটফর্ম হিসেবে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
এছাড়াও আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ প্রকল্প ) প্রকল্পে যেসব কার্যক্রম চলমান থাকবে সেগুলো হলো-
১. প্রকল্পের আওতায় ৯ কোটি নাগরিকের তথ্য ধারণ এবং ৪টি প্রতিষ্ঠানকে পরিচিতি যাচাই সেবা প্রদানে সক্ষমতা সম্পন্ন ডাটাসেন্টার, ডিজাস্টার রিকভারি সিস্টেম স্থাপনের লক্ষ্য নির্ধারিত থাকলেও বর্তমানে ১১ কোটি নিবন্ধিত নাগরিকের তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে এবং এখন পর্যন্ত ১৩৭টি প্রতিষ্ঠানকে নিরবচ্ছিন্ন পরিচিতি যাচাই সেবা দেয়া হচ্ছে।
২. প্রকল্পের আওতায় ৯ কোটি স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ, পারসোনালাইজেশন ও বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিলো। বিদেশি কোম্পানির ব্যর্থতা এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় তথ্যভাণ্ডারের নিরাপত্তা বিবেচনায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্মার্ট কার্ড পারসোনালাইজেশন শুরু করা হয়। ইতোমধ্যে ৭.৭৩ কোটি স্মার্ট কার্ড পারসোনালাইজেশন করে বিতরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিদেশি কোম্পানির পরিবর্তে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্মার্ট কার্ড উৎপাদন ও বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে দেশীয় প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা সৃষ্টি, নিজস্ব দক্ষ জনবল সৃষ্টি, আমদানির পরিবর্তে রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি এবং সরকারি অর্থের অপচয় রোধ সম্ভব হয়েছে।
৩. দেশব্যাপী নির্বাচন কমিশনের মাঠ পর্যায়ের কার্যালয়গুলোতে (৫১৯টি উপজেলা/থানা, ৬৪ জেলা ও ১০টি আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়) যথাযথভাবে ভিপিএন কানেক্টিভিটি দেয়া হয়েছে এবং দেশব্যাপী পরিচিতি সেবা বিকেন্দ্রীকরণসহ অনলাইন এনআইডি সেবা চালু করা হয়েছে।
৪. বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, ত্রাণ সহায়তাসহ ৫টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধাভোগী চিহ্নিত করতে পরিচিতি যাচাই সেবার প্রচলন করা হয়েছে।
৫. জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ, মাঠ পর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তা/কর্মচারী ও প্রকল্পের প্রায় ২২৪০ জন কর্মকর্তা/কর্মচারীকে প্রশিক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত থাকলেও প্রায় ৪২৬০ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষতার উন্নয়ন করা হয়েছে।
৬. বেতন নির্ধারণ, পেনশন প্রাপ্তি, টিআইএন নিবন্ধন, মোবাইল সিম নিবন্ধন/পুনঃনিবন্ধন, বেওয়ারিশ লাশের পরিচিতি নির্ণয়, অপরাধী সনাক্তকরণের ক্ষেত্রে জাতীয় তথ্যভাণ্ডার ব্যবহারের ফলে দ্বৈততা পরিহার ও ভুয়া সুবিধাভোগী চিহ্নিতকরণ সম্ভব হয়েছে। ফলে সামাজিক সমতা, সঠিক সুবিধাভোগী নির্ধারণ ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অধিকতর উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
৭. দেশব্যপী এনআইডি সেবা বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগে অনুমোদিত ৭১ জন জনবল অত্যন্ত অপ্রতুল বিধায় প্রকল্পের ১৪৬৩ জন জনবলের সহায়তায় এ সেবা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হচ্ছে।
৮. এনআইডি উইংয়ের চলমান কার্যক্রম সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে স্বচ্ছতার সঙ্গে সেবা নিশ্চিতকরণ, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দুর্নীতি হ্রাস, সুশাসনসহ সময়, শ্রম ও অর্থের অপচয় রোধ করছে। এছাড়াও, অনলাইন এনআইডি সেবা প্রচলনের মাধ্যমে নাগরিকের হাতের মুঠোয় সেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়েছে।
৯. জাতীয় তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করে নির্বাচনে ইভিএম এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণসহ ডেটাবেজ ব্যবহার সংক্রান্ত উদ্যোগসমূহ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের মূল প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।