
আজ ৯ ডিসেম্বর (বুধবার), মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়ার ১৪০তম জন্ম ও ৮৮তম প্রয়াণ দিবস।
নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত ১৮৮০ সালের আজকের এই দিনে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দের এক নিভৃত পল্লীতে জন্ম নেন এবং ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর দিনটিতেই মৃত্যুবরণ করেন।
এবার করোনাভাইরাসের কারণে নারী জাগরণের অগ্রদূতের জন্ম ও প্রয়াণ দিবসে নারী মুক্তির আন্দোলন বেগবান করার দৃপ্ত শপথে সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনে আয়োজন সীমিত করা করেছে।
দিবসটি উপলক্ষে এবার রাজধানী ঢাকাসহ বেগম রোকেয়ার জন্মস্থান রংপুরের মিঠাপুকুর পায়রাবন্দে ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন করোনা সংক্রমণ ঝুঁকির কারণে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নানা আয়োজন করেছে। প্রতিবছর বেগম রোকেয়ার জন্মস্থান পায়রাবন্দে মেলা বসলেও এবছর করোনার কারণে তা হচ্ছে না।
নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠায় বেগম রোকেয়ার মতো নারী সমাজকে স্বনির্ভর জাতি গঠনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে বেগম রোকেয়ার চেতনা, নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে নারীমুক্তি আন্দোলন বেগবান করার আহ্বান জানান তারা।
সমাজসেবায় বিভিন্ন অবদানের জন্য এ বছর পাঁচজন নারীকে বেগম রোকেয়া পদক ২০২০ দেয়া হবে। আজ সকাল ১০টায় রাজধানীর বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবন থেকে অনলাইনে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেবেন।
বেগম রোকেয়া পদক ২০২০ এর জন্য মনোনিত পাঁচজন নারী ব্যক্তিত্ব হলেন- নারী শিক্ষায় প্রফেসর ড. শিরীন আখতার, পেশাগত উন্নয়নের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে কর্নেল (ডা.) নাজমা বেগম, নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মঞ্জুলিকা চাকমা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে নারী জাগরণের ক্ষেত্রে বেগম মুশতারী শফি (বীর মুক্তিযোদ্ধা) ও নারী অধিকারে অবদানের ক্ষেত্রে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদা আক্তার।
পদকপ্রাপ্ত নারী ব্যক্তিত্ব বা তার পরিবারের প্রতিনিধি উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার কাছ থেকে সম্মাননা পদক, সনদ ও চেক গ্রহণ করবেন।
দিবসটি উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র, পোস্টার, বুকলেট ও স্যুভেনির প্রকাশ করা হয়েছে।
মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়া রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার ব্যবস্থায় নারীর সমান অধিকারের জন্য আমৃত্যু লড়াই করেছেন। রোকেয়া তার মতিচূর, সুলতানার স্বপ্ন, পদ্মরাগ, অবরোধবাসিনী ইত্যাদি কালজয়ী গ্রন্থে ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে ধর্মীয় গোঁড়ামি, সমাজের কুসংস্কার ও নারীর বন্দিদশার স্বরূপ উন্মোচন করেছেন। বাল্যবিবাহ, যৌতুক, পণ প্রথা, ধর্মের অপব্যাখ্যাসহ নারীর প্রতি অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে তিনি রুখে দাঁড়িয়েছেন।
মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে নারীকে গৃহকোণে আবদ্ধ রাখার ধ্যান-ধারণা পাল্টাতে তিনি ছিলেন সদা সোচ্চার। তার দেখিয়ে দেয়া পথ ধরেই নারীমুক্তি আন্দোলন চলছে।