ফরিদপুরে পৌরসভার নির্বাচনে সাংবাদিকের ওপর হামলা

ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২০, ২০:৩৬

গুলি, সংঘর্ষ, সাংবাদিকের উপর হামলা, দুই কাউন্সিলর প্রার্থী আহত হওয়ার মধ্য দিয়ে ফরিদপুর পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা ২৭টি ওয়ার্ডের বর্ধিত এ পৌরসভার ৬৭টি কেন্দ্রে নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হয়।
ভোট গ্রহণকালে সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটে দুপুর পৌনে তিনটার দিকে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে ফরিদপুর শহরের সরকারি ইয়াছিন কলেজ কেন্দ্রে। ওই কেন্দ্রে দুই কাউন্সিলর প্রার্থী মো. ইকবাল হোসেন ফয়সাল (ডালিম) এবং মো. আরিফুল ইসলামের (গাজর) সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষে কাউন্সিলর প্রার্থী আরিফুল ইসলাম আহত হন। পুলিশ প্রথমে লাঠিপেটা ও পরে শটগানের পাঁচটি গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ওই কেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পূরবী গোলদার বলেন, দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মারামারির ঘটনায় এক উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ওই সময় পুলিশ শটগানের পাঁচটি গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
দুপুর পৌনে ১টার দিকে শহরের সাজেদা কবির উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নায়াব ইউসুফ পরিদর্শন করতে গিয়ে ভোটের পরিবেশ নিয়ে আপত্তি তোলে। এসময় প্রিজাইডিং অফিসার ও উপস্থিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে তার বাদানুবাদ হয়। খবর পেয়ে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গেলে তাদের ওপর হামলা করা হয়। দৈনিক দিনকাল প্রতিনিধি নূরুল ইসলাম আঞ্জুকে কিল ঘুষি মেরে আহত করা হয়। নূরুল ইসলামের মুঠোফোনটিও ছিনিয়ে নেয় ছাত্রলীগের কর্মীরা। বাধা দিতে গেলে আরেক সাংবাদিক ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম আহত সাংবাদিকের কার্ড ছিনিয়ে নেয়। এসময় বিএনপির মেয়র প্রার্থী নায়াব ইউসুফের সাথে ছাত্রলীগ কর্মীদের সাথে ধ্বস্তাধস্তি হয়। নায়ব ইউসুফের মুঠোফোনটিও ছিনিয়ে নেয়া হয়।
এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, এ ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। ওই সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন। তিনি অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানান। পরে ভোট গ্রহণ শেষে সন্ধ্যা ৬ টার দিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অমিতাভ বোস প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান।
দুপুর দেড়টার দিকে শহরের আল আমিন পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই কাউন্সিলর প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনান (ডালিম) ও মো. বাহালুল দিনার সাঈদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষে ছয়জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় দুই জনকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
শহরের কমলাপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম মৃধা কাউন্সিল পদে নির্বাচন করেন ২২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। সকাল ৯টার দিকে তিনিসহ তার সমর্থকদের হামলায় আহত হন অপর কাউন্সিলর প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর নাসির উদ্দিন আহমেদ মিলার ও তার দুই সমর্থক। তাদের ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
এছাড়া শহরের চুনাঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ও পূর্বখাবাসপুর শহীদ সালাহউদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গোলযোগের খবর জানা গেছে।
এদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নায়াব ইউসুফ পৌরসভার নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে শহরের কমলাপুরস্থ নিজ বাসভবন ময়েজ মঞ্জিলে নায়াব ইউসুফ এক সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন। তিনি এ নির্বাচনী ফলাফল বাতিল করে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি জানান।
নায়াব ইউসুফ বলেন, এটি ছিল একটি স্থানীয় নির্বাচন। এ নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হবে না। কিন্তু আওয়ামী লীগ প্রতিটি কেন্দ্রে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। তিনি নিজেও একটি কেন্দ্রে গিয়ে নাজেহাল হয়েছেন। তার মুঠোফোন কেড়ে নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমি আবেদন জানাই নির্বাচন কমিশনার কাছে, এ নির্বাচন বাতিল করে অবাধ ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করা হোক।
একই সময়ে ফরিদপুর মধুখালী পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে নয়টি কেন্দ্রের মধ্যে আটটি কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক কেন্দ্রে হাঙ্গামার ঘটনা ঘটেছে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও নির্বাচনের পরিবেশ ছিলো শান্তিপূর্ণ। বিপুল সংখ্যক ভোটার উপস্থিত হয়ে আনন্দ উদ্দীপনার সাথে ভোট দিয়েছেন। তিনি বলেন, বিএনপি মেয়র প্রার্থী নায়াব ইউসুফ আমাদের কাছে যদি কোনো লিখিত অভিযোগ দেন তবে তা খতিয়ে দেখা হবে।