বিজয়ের তিনদিন পরে হানাদার মুক্ত হয়েছিল মেহেন্দিগঞ্জ

বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২০, ১১:০২

বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ পাক-হানাদার মুক্ত হয়েছিল বিজয়ের তিনদিন পরে অর্থাৎ ১৯ ডিসেম্বর।
বাংলাদেশের সর্বশেষ স্বাধীন হওয়া থানাগুলোর মধ্যে অন্যতম মেহেন্দিগঞ্জ। এই এলাকার বীর যোদ্ধাদের স্বাধীনতা পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে আরো তিনটি দিন।
১৬ ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সমগ্র মেহেন্দিগঞ্জে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পাক-বাহিনী, তাদের দোষর, দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল-শামস ও স্বাধীনতা বিরোধীদের চারদিক থেকে ঘিরে থানায় তিনদিন যাবৎ আটকে রাখা হয়।
তৎকালীন থানার দ্বিতীয় অফিসার পাক-বাহিনীর দোসর এই শক্ত অবস্থান ধরে রাখেন। ১৯ ডিসেম্বর বিকেলে এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাক-বাহিনীর ক্যাম্প মুসলিম হাইস্কুল, থানা জামে মসজিদ ও থানা ক্যাম্পসহ ঘাঁটি গুলো ঘেরাও করে এলোপাতাড়ি বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে শুরু করে। এক পর্যায়ে পাক-বাহিনীর দোসর থানার সেকেন্ড অফিসার একদিনের শিশু সন্তানসহ তার স্ত্রীকে পাঠিয়ে আত্মসমর্পণের অনুরোধ জানায়।
তখন তার স্ত্রীকে বন্দুক তাক করে ফেরত যেতে বাধ্য করা হয়। এক পর্যায়ে অকুতোভয় মুক্তিপাগল দামাল ছেলেরা থানা ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়েন। অবশেষে থানায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে মেহেন্দিগঞ্জ হানাদার মুক্ত হয়।
মুক্তিযোদ্ধারা জানান, থানার মূল ভবনের দক্ষিণে ও পশ্চিমে খাল, পূর্ব উত্তরে মসজিদ ও স্কুল থাকায় এই প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষার জন্য এই বিলম্ব হয়। ১৯ ডিসেম্বর মেহেন্দিগঞ্জে প্রায় ২৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা, ৮৬ জন রাজাকার ও ২০ জন পুলিশ সদস্যদের সাথে দীর্ঘক্ষণ যুদ্ধ করে এই বিজয় অর্জন করেন।
একদিকে বিজয়ের আনন্দ অপরদিকে প্রতিশোধের নেশায় থানায় আটককৃতদের মধ্যে থেকে ২৪ জন রাজাকারকে উত্তেজিত জনতা ঘটনাস্থলেই পিটিয়ে হত্যা করে। এর মধ্যে পাক বাহিনীর দোষর থানার সেকেন্ড অফিসারও ছিলো। এই গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদিক্কুর রহমান খোকন, আব্দুল বাতেন, মকিম তালুকদার, সরদার আনিছুর রহামান, আব্দুল হামিদ, মজিবুর রহমান সানু, আব্দুল খালেক জমাদ্দার, আব্দুল রবসহ আরো অনেক মুক্তিযোদ্ধা।
যাদের মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে এ বিজয় অর্জিত হয়েছে সেই শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবরগুলো পড়ে আছে অযত্ন আর অবহেলায়। সরকারি ও দলীয়ভাবে নানা কর্মসূচি পালিত হলেও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থানে কেউ আসেনি একটু ফাতেহা পাঠের জন্য- এমন অভিযোগ শহীদ পরিবারগুলোর।
মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবর সরকারের পক্ষ থেকে সংরক্ষণ করা ও সমগ্র মেহেন্দিগঞ্জে যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন তাদের নাম সম্বলিত স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে তুলতে মেহেন্দিগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহবান জানান এলাকার সুধী সমাজ।