অভিজিৎ হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিতে ডাকা হয়নি: বন্যা

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২০, ২২:৫৩

সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মঙ্গলবার বলেছেন ব্লগার অভিজিৎ রায় মামলায় উল্লেখ করা ঠিকানায় তার স্ত্রীর কাছে আদালতের সমন পাঠানো হয়েছিল। এ দাবিকে মিথ্যা বলছেন রাফিদা আহমেদ বন্যা। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত ব্লগারের হত্যা মামলার শুনানিতে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য কোনো সমন পাঠানো হয়নি।
ওই সাক্ষাৎকারে বন্যা বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ সরকার, পুলিশ বা দূতাবাসের কেউ কখনই তার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্লগার অভিজিৎ রায় বাংলাদেশে আসেন এবং একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের আক্রমণে তিনি নিহত হন। এ সময় তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও গুরুতর আহত হন। তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রে আছেন।
আদালতের সমন প্রসঙ্গে বন্যা বলেন, গত ছয় বছরে আমার সঙ্গে আসলে বাংলাদেশ থেকে কেউ যোগাযোগ করেনি। কোনো দিনই না। বাংলাদেশ দূতাবাস থেকেও না, বাংলাদেশ সরকারেরও কেউ নয়।
কখনো আদালতে গিয়ে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য বলা হয়েছে কি না, তা জানতে চাইলে বলেন, প্রশ্নই আসে না। কোনভাবেই না। আমি তো দেখলাম যে বলা হচ্ছে, আমার সঙ্গে নাকি তারা ফোনে কথাও বলেছে বিশেষ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এগুলো সবই মিথ্যা কথা। ২০১৫ সালে আমি যখন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ব্রিফিং এর জন্য যাই, সিনেটরদের সামনে, তখন বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাঁচ হতে সাতজনকে পাঠানো হয়েছিল আমি কী বলছি শুনতে।
এমনকি সেই সময়েও তারা কেউ আমার সঙ্গে অফিশিয়ালি কথা বলেনি। আমি আমেরিকায় থাকি, আমি পাবলিকলি অনেক কিছু লেখালেখি করি। আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা কোনো কঠিন ব্যাপার নয়। কিন্তু কোনোদিন কেউ কোথাও থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। শুধুমাত্র এফবিআই আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখে।
তিনি বলেন, তার নিরাপত্তার কথা ভেবেই এফবিআই তাকে বলেছিল সাবধানে থাকতে। কোথাও গেলে তাদের অবহিত করতে। তিনি এই ঘটনার তদন্ত এবং বিচার চেয়ে অনেকবার লিখেছেন, অভিযোগ করেছেন। তার সঙ্গে যে কেউ কখনো যোগাযোগ করেনি বাংলাদেশ থেকে, সে কথাও জানিয়েছেন।
এমনকি দেশে যাদের ডাকা হচ্ছে সাক্ষী দেওয়ার জন্য, তাদেরও আমি বলেছি বলার জন্য কেন আমার কাছ থেকে কখনো কিছু জানতে চায়নি কেউ। এবং কেন আমাকে কখনো বাংলাদেশ থেকে কেউ কিছু জানায়নি, বলেন বন্যা।
ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন সাক্ষী হওয়ার পরও এটা কেন ঘটছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তার কোনো ধারণাই নেই। আর বাংলাদেশের কাজকর্ম নিয়ে আসলে যৌক্তিকভাবে কোনো কিছু চিন্তা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ওরা এমন আচরণ করে, মনে হয় আমার কোনো অস্তিত্বই নেই।
নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সাক্ষ্য দিতে যাচ্ছেন না, এমন যেসব খবর বেরিয়েছে, সেগুলো কতটা সঠিক— এই প্রশ্নে বন্যা বলেন, এ রকম মিথ্যা কথা যদি কেউ বলে কর্তৃপক্ষ থেকে, তাহলে তো আর কিছু বলার নেই। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা। আমার সঙ্গে কেউ কখনো, কোনোদিন যোগাযোগ করেনি। সেখানে নিরাপত্তার কথা বলে না যাওয়ার প্রশ্ন তো উঠতেই পারে না।
এ রকম পরিস্থিতিতে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার পাবেন বলে কি মনে করেন- এমন প্রশ্নের জবাবে বন্যা বলেন, আমি প্রথম থেকেই বলে এসেছি যে, বাংলাদেশ থেকে বিচার আমি আর আশা করি না। আমার হিসেবে যদি ভুল হয়ে না থাকে, প্রধান যে দুজন আসামি, মেজর জিয়া এবং অন্য আরেকজন, তাদের কে কখনো ধরা হয়নি, তারা কোথায় কেউ জানে না। অথচ এই মেজর জিয়া নাকি সেদিন সশরীরে ছিল সবকিছুর ব্যবস্থা করতে, ওই আক্রমণের ব্যবস্থা করতে।
রাফিদা আহমেদ বলেন, সেই ২০১৫ সাল থেকে শুনছি এই ঘটনায় সাতজনকে ধরা হয়েছে, ছয়জনকে ধরা হয়েছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন খবর এসেছে। তারপর আবার দেখা গেছে, সে খবর উল্টেও যাচ্ছে। শরীফ নামে একজনকে ধরে তারা বললো সে নাকি মাস্টারমাইন্ড ছিল এই হামলার । অথচ দুইমাস পর তাকে জেলে রেখে ক্রসফায়ারে দিয়ে মেরে ফেলা হলো। তো আপনি এরপর এদের কাছ থেকে আর কী বিচার আশা করবেন।