-5fe960bd39b0c.jpg)
ছবি: আশিক বিন রহিম
একটা সময় যেখানে মাটি পুড়িয়ে তৈরি করা হতো ইট, সেখানে এখন ফলছে দেশি-বিদেশি বাহারি ফল। পরিত্যক্ত ইটভাটাকে ‘ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রো’ নামে রূপান্তর করে এমন অসাধ্যকেই সাধন করেছেন আলোচিত কৃষি উদ্যোক্তা হেলাল উদ্দিন।
তিনি ব্যক্তি মালিকানাধীন ইটভাটার জমিতে বাণিজ্যিকভাবে সম্পূর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষ করছেন উন্নত জাত ও মানের বিভিন্ন জনপ্রিয় বিদেশি ফল। এই এগ্রো প্রকল্পে প্রথমবারেই বাম্পার ফলন হয়েছে আম, পারসিমন, ব্লাড অরেঞ্জ, গ্রেপফ্রুটস, হলুদ ও লাল ড্রাগন, নতুন জাতের মাল্টা, কমলা, স্ট্রবেরিসহ বিখ্যাত ক্যান্টালোপ বা রকমেলন।
চাঁদপুর সদর উপজেলার মৈশাদী ইউনিয়নের শাহতলী এলাকার অবস্থিত এই ‘ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রো’র সাফল্যের খবরে দেশজুড়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ইটখোলার জমিতে বিদেশি ফলের এমন ফলন দেখে অবাক হয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারাও। দুর্লভ জাতের ও স্বাদের এসব বিশ্বখ্যাত ফল দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ ছুটে আসছেন ফ্রুটস ভ্যালিতে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রো প্রকল্পের মালিক কৃষি উদ্যোক্তা হেলাল উদ্দিন পেশায় একজন সিনিয়র সাংবাদিক। তিনি প্রায় ৬০ বছরের পারিবারিক দুটি লাভজনক ইটভাটা বন্ধ করে সে জমিতে বিদেশি ফল চাষের উদ্যোগ নেন। মাটি পুড়িয়ে ইট তৈরির চিমনির বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় এ এলাকায় এর আগে বিদেশি ফল দূরের কথা, স্বাভাবিক ফসল উৎপাদনই ছিল প্রায় অসম্ভব। মাত্র চার মাস আগে সর্বাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুটি ইটভাটাকে তিনি পরিবেশবান্ধন এগ্রো প্রকল্পে রূপ দেন। বালুময় মাঠে জৈব সার মেশানো মাটির কৃত্রিম টব তৈরি করে বিশ্বখ্যাত ফল চাষ শুরু করেন।
এখানে পানি সেচের জন্য ব্যয়বহুল ড্রিপ-ইরিগেশন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এতে করে প্রতিটি গাছের গোড়ায় নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে।
এখানে এমন অনেক জাতের ফল চাষ করা হয়েছে যা এদেশে প্রথম বাণিজ্যিক চাষ। কয়েক জাতের রকমেলন বা সাম্মাম, আইসবক্স ইয়েলো (উপরে সবুজ ডোরাকাটা ভেতরে গাঢ় হলুদ) ও হানিডিউ নামের মেলন। ভেতরে বিচিহীন হলুদ তরমুজ যা আইসবক্স ইয়েলো নামে পরিচিত।
ফল চাষের পাশাপাশি প্রায় দেড় একর আয়তনের ইটভাটার আরেকটি পতিত নিচু জমিতে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন জাতের বিদেশি সবজি। যার মধ্যে আছে বিভিন্ন রঙের ক্যাপসিকাম, ব্রুকলি, চার জাতের চেরি টমেটো, কালো টমেটো, হলুদ টমেটো, ইতালিয়ান জাতের বিচিহীন শসাসহ নানা ধরনের নতুন জাতের ফসল।
প্রকল্পের মালিক সাংবাদিক ও কৃষি উদ্যোক্তা হেলাল উদ্দিন জানান, লাভজনক ইটভাটার ব্যবসা বন্ধ করে দুষ্প্রাপ্য বিশ্বখ্যাত কিছু ফলের বাণিজ্যিক চাষের ঝুঁকি নিয়েছি। এসব ফলের জাত সংগ্রহ করতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। জাতগুলো বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী কি না নিশ্চিত হতে হয়েছে। আমি মনে করি ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রো প্রকল্পটি হবে এদেশের একটি মডেল ফল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। এখানে এমন সব বিদেশি ফলের চাষ হচ্ছে যা, ইতিপূর্বে দেশের কোথাও বাণিজ্যিক চাষ হয়নি। আমি সফল হলে পুরো দেশেই ছড়িয়ে দেয়া হবে এসব উন্নতমানের ফলের চারা। এতে করে বিদেশি ফলের আমদানি নির্ভরতা কমবে বলে তিনি আশা করেন।
চাঁদপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আয়শা আক্তার বলেন, এখানে সম্পূর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে আনকমন বিদেশি সুস্বাদু ফল উৎপাদন করা হচ্ছে। উদ্যোক্তা চেষ্টা করেছেন বিদেশি আনকমন ফল এদেশের মাটিকে উৎপাদনের। তিনি সফলও হয়েছেন। ইতিমধ্যে এখানে উৎপাদিত ফলন ঢাকার বেশ কয়েকটি বড় শপিংশপে সরবরাহও করা হয়েছে।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, এটি একটি অসাধারণ উদ্যোগ। একটি পরিত্যক্ত ইটভাটাকে সবুজে রূপান্তর করে উদ্যোক্তা হিসেবে হেলাল উদ্দিন প্রশংসনীয় কাজ করেছেন। অদম্য ইচ্ছাশক্তি, ধৈর্য, পরিশ্রম ও সৃজনশীলতা থাকলে যেকোনো কাজে সফল হওয়া যায়, তা আবারো প্রমাণিত হলো।