চট্টগ্রামের নতুন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২১, ০১:৫৮

বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নতুন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ (নৌকা প্রতীক) মনোনীত প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন পেয়েছেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট।
বুধবার (২৭ জানুয়ারি) রাতে নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়াম হলে ফলাফল ঘোষণা শুরু হয়।
এ নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ। মোট ৭৩৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭৩৩টি কেন্দ্রের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। সংঘর্ষের কারণে বাকি দুটি কেন্দ্রের ফল স্থগিত রয়েছে।
এর আগে সকাল ৮টায় শুরু হয়ে বিকেল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়। প্রথমবারের মতো পুরো নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়েছে ইভিএমের মাধ্যমে।
ভোটকেন্দ্র দখল নিতে প্রকাশ্যে গোলাগুলি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ-সহিংসতা, প্রাণহানি, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ভাঙচুর, বর্জনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ও ভোটার খরার মধ্য দিয়ে ভোটগ্রহণ শেষ হয়।
সকাল ৯টায় নগরের বহদ্দারহাট এখলাছুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী। অন্যদিকে সকাল ১০টার দিকে বাকলিয়া টিচার্স ট্রেনিং কলেজের প্রশাসনিক ভবন কেন্দ্রে ভোট দেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন।
ভোট দেয়ার পর রেজাউল করিম নগরজুড়ে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ চলছে দাবি করে বিপুল ভোটে জয়ের আশা ব্যক্ত করেন। তবে ভোট দেয়ার পর ডা. শাহাদাত গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে অভিযোগ করেন, নির্বাচনে সব ভোটকেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্টদের মেরে বের করে দেয়া হয়েছে।
এর আগে সকাল ৮টায় নির্বাচনকে ঘিরে প্রাণহানি হয়। নগরের পাহাড়তলীতে আপন ভাই সালাউদ্দিন কামরুলের ছুরিকাঘাতে নিহত হন তার ভাই নিজামউদ্দীন মুন্না। নিহত মুন্না ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী সাবের আহম্মদের কর্মী ছিলেন। অন্যদিকে কামরুল একই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল আমিনের কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন।
পরে সকাল ১০টার দিকে নগরের খুলশী থানার ইউসেপ আমবাগান কেন্দ্রে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে আলাউদ্দিন আলো (২৮) নামে এক পথচারী নিহত হন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডের জেএম সেন স্কুল ও কলেজ ভোটকেন্দ্র দখল নিয়ে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী মো. ইসমাইল বালী ও আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী পুলক খাস্তগীরের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ইভিএম ভাঙচুরের জেরে দুটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
দুপুর ২টার পর আকবর শাহ থানাধীন বিশ্ব কলোনির পি ব্লকে ৯নং ওয়ার্ডের কোয়াক স্কুল ভোটকেন্দ্র দখলে নিতে প্রকাশ্যে গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়া ১৬ নং চকবাজার ওয়ার্ডসহ কিছু এলাকায় বিচ্ছিন্ন সহিংসতা-সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়।
নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিকেল ৩টার দিকে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে ভোট বর্জনের কথা জানান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ জান্নাতুল ইসলাম ও বিএনপি মনোনীত সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী মনোয়ারা বেগম মনি।
মেয়র পদে মোট সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম চৌধুরী, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবুল মনজুর, মোমবাতি প্রতীকে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হাতি প্রতীকে খোকন চৌধুরী, চেয়ার প্রতীকে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ এবং হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম।
নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১৯ লাখ ১৭ হাজার ৯৭৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৭২৩ ও নারী ভোটার ৯ লাখ ৫২ হাজার ৩২৯ জন। চট্টগ্রাম নগরের মেয়র এবং ৪১টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন ২২৬ জন। এর মধ্যে ৩৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন ১৬৯ জন। প্রার্থীর মৃত্যুসহ বিশেষ কারণে বাকি দুই ওয়ার্ডে ওই পদে নির্বাচন হচ্ছে না। সংরক্ষিত ১৪টি ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে নামেন ৫৭ জন।