
এইচএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করে কৃষিতে ঝুঁকে পড়েন দুলাল, অনেকটা শখের বশে কাজ শুরু করলেও সেই নেশাকেই এখন পেশায় পরিণত করে এলাকার রোল মডেল হয়েছেন। মাত্র ২ বিঘা জমি নিয়ে বাগান শুরু করে পরিশ্রমের ফলে এখন তা ১০ বিঘার অধিক বিস্তৃত হয়েছে। তার অভাবের সংসারে এখন স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। এমন সফল ফলচাষি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার উকিয়ারা গ্রামের মো. দুলাল মিয়া। তার বাবার নাম মেহের আলী।
মানিকগঞ্জ জেলার সফল ফলচাষি দুলাল মিয়া মাত্র ২০ বছরের ব্যবধানে ১০ বিঘা জমি বাড়িয়েছেন। থাকার জন্য সুন্দর একটি বসতবাড়ি তৈরি করেছেন। বর্তমানে নিজের ও লিজ নেওয়া মিলে ১০-এর অধিক বিঘা জমিতে বিভিন্ন ফলের চাষ রয়েছে তার।
এ বছর তিনি ভারতীয়, কাশ্মীরি, নারিকেল, আপেল, বাউ ও থাই কুলের চাষ করেছেন। ইতিমধ্যেই বরই পাকা শুরু করেছে, বাগান থেকেই পাইকারি দরে মণ হিসাবে ব্যাপারিদের কাছে বিক্রি করেন। দুলালের বরই বাগানে গেলে দেখা যায়, মাটির সামান্য ওপর থেকেই সব কুলগাছের ডালপালা চারদিক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিটি ডালে প্রচুর পরিমাণে কুল ধরে মাটিতে নুয়ে পড়ছে। অবস্থাটা এমন, গাছের পাতার চেয়ে কুল বেশি দেখা যাচ্ছে।
কৃষক দুলাল জানান, সাংসারিকজীবনে অভাবের তা-বে খুব কষ্ট করেছেন; কিন্তু তার বিশ্বাস ছিল পরিশ্রম করেই সফল হবেন। অর্থ না থাকলেও আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে ২০০০ সালে প্রথমে কিছু ধারদেনার মাধ্যমে দুই বিঘা জমিতে বরই চাষ শুরু করেন, সেখান থেকেই শুরু এখন তার পাঁচটি বাগান। এর বাহিরে তার লিচু বাগান ও ধানের প্রজেক্টও রয়েছে।
তিনি আরও জানান, এ পর্যন্ত জীবনে যত ফল ও ফসলের চাষ করেছেন, প্রায় সবটাতে লাভবান হয়েছেন। কিন্তু বেশি সাড়া জাগিয়েছে বল সুন্দরী ও আপেল জাতের কুলে। ক্ষেতে যে পরিমাণে কুল ধরেছে, তা দেখতে মানুষ আসছে। অন্য কৃষকও উৎসাহিত হচ্ছেন। গাছের শাখা-প্রশাখায় তারার মতো ধরে আছে বরই। অবস্থাটা এমন, পাতার চেয়ে বরই বেশি।
একই গ্রামের সমাজসেবক ইদ্রিস আলী জানান, দুলালের বাগানে আম লিচুসহ সব মৌসুমের ফল থাকলেও বরই চাষে আলোড়ন তুলেছে, তার পাঁচটি বাগানে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোক আসছে বাগান দেখতে। বাজারে আপেল কুলের চেয়েও দুলালের বাগানের কুল অনেকটি বেশি মিষ্টি ও সুস্বাদু। দুলাল বেকার যুবকদের আশান্বিত করেছেন, তার দেখাদেখি অনেকেই এখন কৃষিতে ঝুঁকে পড়েছেন।
এতসব সফলতার মাঝেও দুলালের কষ্ট আছে, ক্ষোভ নিয়ে জানান, প্রায় ২০ বছর যাবত বাগান করছি, আমি জেলার সবচেয়ে বড় এবং সফল চাষি হলেও কৃষি অফিস কখনো কোনো খোঁজখবর অথবা সহায়তা করে না। বঙ্গবন্ধু পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার দেবার কথা বলে প্রতি বছর কাগজপত্র নিলেও আজ অবধি কোনো সহায়তা বা পুরস্কার পাননি, কখনো তাদের শরণাপন্ন হলে তাদের আচরণ অত্যন্ত বাজে প্রকৃতির হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এর সত্যতা পাওয়া যায় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার আচরণে, বারবার ফোন দিয়ে ও অফিসে গিয়েও উপজেলা কৃষি অফিসার আফতাব উদ্দিনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার আমিনুল ইসলাম বলেন, দুলাল মিয়া নিজে একসময়ে কষ্ট করেছেন। আর এখন হয়েছেন এলাকার মধ্যে একজন আদর্শ কৃষক। কৃষিকাজ করে যে ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটানো যায়, এ কৃষক তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।