
মানব ও অর্থ পাচারের দায়ে কুয়েতে দণ্ডপ্রাপ্ত লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের রায় পর্যালোচনা শুরু করেছে জাতীয় সংসদ কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) কুয়েতের আদালতের রায়ের কপি সংসদে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, রায়ের কপি আমাদের কাছে পৌঁছেছে। এটা পর্যালোচনা করে সংবিধান ও কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো আইনপ্রণেতা নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হল সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবে না এবং মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি আর সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হন না। ওই অনুচ্ছেদেই বলা আছে, কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিলে কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করলে আর এমপি হিসেবে থাকতে পারবে না।
তবে এই সংসদ সদস্য পদ বাতিলের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া আছে। সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে বলা আছে, সংসদ সদস্য কোনো ফৌজদারি অভিযোগে গ্রেফতার হলে বা আদালতে দণ্ডিত হলে বা কোনো নির্বাহী আদেশ আটক হলে, গ্রেফতারকারী বা দণ্ডদানকারী বা আটককারী কর্তৃপক্ষ বা জজ বা ম্যাজিস্ট্রেট বা নির্বাহী কর্তৃপক্ষ যথাযথ ফরমে গ্রেফতার, দণ্ডাদেশ বা আটকের কারণসহ পুরো বিষয় স্পিকারকে জানাবে। একইভাবে গ্রেফতার হয়ে দণ্ডপ্রাপ্তির পর আপিলের বিবেচনা সাপেক্ষে জামিনে মুক্ত হলে বা অন্যভাবে মুক্ত হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একইভাবে স্পিকারকে অবহিত করবে।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, সংবিধানে যা বলা হয়েছে, সে ব্যাপারে সংসদকে ব্যবস্থা নিতে হবে। সংসদের কাছে রেকর্ড পৌঁছালে ৬৬ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ আসন শূন্য ঘোষণা করবে।
কোনো আইনপ্রণেতা গ্রেপ্তার, আটক বা আদালতের রায়ে সাজা পেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তা স্পিকারকে জানাতে হয়। পাপুল গ্রেপ্তার এবং সাজা পাওয়ার পর তা নিয়ম অনুযায়ী স্পিকারকে না জানানোয় সংসদ এতদিন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
সংসদ সচিব জাফর আহমেদ খান বলেন, মামলার রায়ের কপি সংসদ পেয়েছে। এ বিষয়ে কাজও শুরু হয়েছে। স্পিকার মহোদয় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। সংবিধানে আছে নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের দণ্ড হলে তার সদস্যপদ থাকবে না। লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সদস্যের চার বছরের দণ্ড হয়েছে। তার সদস্যপদ থাকার কথা নয়। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন স্পিকার।
২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন পাপুল। শুধু তাই নয়, নিজের স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করে আনেন তিনি। গত বছর ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে পাপুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ আনে কুয়েতি প্রসিকিউশন। সেই অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়ে দণ্ডিত হয়েছেন তিনি।