
ছবি: খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের পাহাড়ি নারীরা। গৃহস্থালী কাজের পাশপাশি কৃষি, ক্ষুদ্র ব্যবসা, উদ্যোক্তা ও কর্মক্ষেত্রে সফল পাহাড়ে নারীরা।
তবে অর্থনীতিতে সমান অবদান থাকলেও পাহাড়ের নারীরা সম্পত্তির মালিকানা পায় না। এমনকি নিজের অর্জিত সম্পত্তির মালিকানাও পায় না তারা।
দুর্গম ও পিছিয়ে পড়া জনপথ হওয়ায় পাহাড়ে একজন নারীকে নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে হয়। ভূ-প্রাকৃতিক গঠনের কারণে পাহাড়ের নারীদের কঠোর সংগ্রাম করতে হয়। গৃহস্থালী কাজ, জুম চাষ, উৎপাদিত ফসল বিকিকিনি, ক্ষুদ্র ব্যবসা নানা কাজে সম্পৃক্ত হয় একজন পাহাড়ি নারী। সম্প্রতিককালে কর্মক্ষেত্রেও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। এছাড়া অনেকে নারী নিজের ব্যবসা করেও সফল হয়েছে। কর্মজীবী নারীরাও তাদের সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত। তারা তাদের মা-বাবার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন না। এরফলে বৈষম্য ও পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তারা। এমনকি নিজের অর্জিত সম্পত্তির উপরও অধিকার নেই তাদের।
খাগড়াছড়ির নারী অধিকার কর্মী ও উদ্যোক্তা শাপলা ত্রিপুরা জানান, পাহাড়ের নারী অনেক পরিশ্রমী। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নারীর হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেন। পুরুষের পাশাপাশি আমরা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের অর্থনীতিতে সমান অবদান রেখে যাচ্ছি। অর্থনীতে অবদান থাকলেও অর্জিত সম্পদ বলি ও উত্তরাধিকার বা পৈত্রিক সম্পদ বলি- নারীরা সব সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।
তিনি বলেন, বংশ পরম্পরায় আমাদের সুনিদিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। ফলে পিতার সম্পত্তি ছেলেরা বংশ পরম্পরায় ভোগ করে আসছে কিন্ত মেয়েরা সেই সুযোগ পাচ্ছে না। এছাড়া সংসারে স্বামী-স্ত্রী দুইজন আয় করে সম্পত্তি অর্জন করলেও যদি বিবাহ বিচ্ছেদ হয় সেক্ষেত্রে নারীরা নিজের অর্জিত সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হতে হয়। এমনকি বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার পর নিজের অর্জিত সম্পত্তির উপর নারীর অধিকার থাকে না।
বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়া বীণা ত্রিপুরা নামে এক নারীর কথা উল্লেখ করে শাপলা বলেন, বিচ্ছেদের পর বীণা কোনো সহায়তা পাননি। কোনো ক্ষতিপূরণও পাননি। আমি সেকারণে সমাজ, রাষ্ট্র ও প্রথাগত নেতাদের কাছে অনুরোধ করবো যাতে ছেলে-মেয়েরা সমানভাবে সম্পত্তির অধিকার পায়। কারণ নারীদের পিছিয়ে রেখে সমাজ এগুতে পারবে না।
স্কুল শিক্ষিকা প্রতিভা ত্রিপুরা জানান, এখানে নারীরা অনেক বেশি পরিশ্রমী। কর্মজীবী নারীরা সম্পত্তির অর্জন করলেও সেটার মালিকানা তারা পায় না। কেবলমাত্র ছেলেদেরকে সম্পত্তির অধিকার দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের মধ্যে একটা বৈষম্য তৈরি হয়। ছেলেমেয়েদের মধ্যে যাতে সমানভাবে সম্পত্তির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় সেভাবে আইন প্রণয়ন করা উচিত।
তিনি আরো বলেন, এছাড়া নারীরা কেবলমাত্র প্রথাগত সংস্কারের উপর নির্ভর করে নারী-পুরুষ বিবাহ বন্ধনে লিপ্ত হয়। প্রচলিত আইনে রেজিস্ট্রি না হওয়ায় বিবাহ বিচ্ছেদ হলে নারীরা ন্যায় বিচার পান না। প্রথাগত সামাজিক রীতিতে বিয়ের পাশাপাশি প্রচলিত আইনে বিয়ের নিবন্ধনের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে কোনো কারণে বিচ্ছেদ হলে নারীরা আইনের আশ্রয় নেয়ার সুযোগ পাবে।
বঞ্চনা ও বৈষম্য দূর করে সম্পত্তির উপর নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রথাগত আইন সংস্কার করে করার দাবি জানিয়েছে নারী অধিকারকর্মীরা। খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতির সভানেত্রী শেফালিক ত্রিপুরা বলেন, উত্তাধিকার সূত্রে নারীরা কোনো সম্পত্তির মালিকানা পায় না। তারা নিজের পরিবারের বঞ্চিত, স্বামীর পরিবারেও বঞ্চিত। নারীরা সম্পত্তির সমান দূরে থাক আংশিকও পায় না। সম্পত্তির উপর নারী অধিকার নিশ্চিত করতে প্রথাগত আইন সংস্কার করে নারী নীতিমালা অর্ন্তভুক্ত করতে হবে।
খাগড়াছড়ি মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের উপপরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সমতলের চেয়ে পাহাড়ি নারীরা অনেক বেশি পরিশ্রমী। কিন্ত উত্তরাধিকার বা নিজের অর্জিত সম্পত্তির পাহাড়ি নারীদের অধিকার নেই। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পাহাড়ি সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্যের নিরসন এখন সময়ের দাবি।