
আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা দুর্লভ সব প্রত্নসম্পদ নিয়ে প্রাচীন ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাজশাহী বরেন্দ্র জাদুঘর। রাজশাহী মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র হেতমখাঁ সদর হাসপাতালের সামনে অবস্থিত প্রাচীন সংগ্রহশালা বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, যা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা এবং বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর।
প্রাচীনতম এই জাদুঘরটি শুধু শিল্পকলার সংগ্রহশালা হিসেবেই নয় বরং প্রাচীন ইতিহাস গবেষণায় অবদান রেখে চলেছে। বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়ামটি সকল দেশের, সকল শ্রেণিপেশার মানুষের জন্য উন্মুক্ত। প্রতি বছর এক থেকে দেড় লক্ষ দেশিবিদেশি মানুষ এই জাদুঘর উপভোগ করেন। বৃহস্পতি ও শুক্রবার এর সাপ্তাহিক ছুটির দিন।
অবিভক্ত বাংলার, বিশেষত বরেন্দ্র অঞ্চলের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা প্রত্নতাত্ত্বিক, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, সাহিত্যিক ও স্থাপত্য নিদর্শন অন্বেষণ, সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও গবেষণার মাধ্যমে প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় ইতিহাস রচনা ও পুনর্গঠন এবং আহরিত নিদর্শন জনসাধারণের জন্য প্রদর্শনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯১০ সালে প্রতিষ্ঠিত এটিই বাংলাদেশের সর্বপ্রথম এবং তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার দ্বিতীয় জাদুঘর। এই গৌরবময় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন বাংলার কীর্তিমান তিন পুরুষ-কুমার শরৎ কুমার রায়, অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় এবং রমাপ্রসাদ চন্দ। ১৯১০ সালে রাজশাহী শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত হয় বরেন্দ্র জাদুঘর। প্রথমে এর নাম ছিল ‘বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি’। পরে নাম হয় বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর।
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের উপ-প্রধান সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আব্দুল কুদ্দুস জানান, বর্তমানে এই জাদুঘরের সংগ্রহ সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার। জাদুঘরের ১১টি প্রদর্শনী কক্ষ এবং সুরক্ষিত অভ্যন্তরীণ বারান্দায় বিভিন্ন ধরনের প্রায় ১১৫০টি প্রত্ননিদর্শন সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা আছে।
জাদুঘরে প্রায় ১৭ হাজার সংগ্রহের মধ্যে রয়েছে প্রায় ছয় হাজার বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় হাতে লেখা পুঁথি বা পা-ুলিপি, খ্রিস্ট-পূর্বাব্দ যুগ থেকে শুরু করে ব্রিটিশ শাসনামল পর্যন্ত সময়ের প্রায় সাড়ে ছয় হাজার মুদ্রা, দুই হাজারের অধিক পাথরে খোদাইকৃত বরেন্দ্র স্বতন্ত্র শিল্প ঘরানায় নির্মিত বিভিন্ন ভাস্কর্য, প্রায় ১৩০০ পোড়ামাটির নিদর্শন, এক হাজারের অধিক ধাতব নিদর্শন এবং কয়েকশ অন্যান্য উপাদানে নির্মিত প্রত্নসামগ্রী।
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের উপ-প্রধান সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মিউজিয়ামকে আকর্ষণীয়, জননন্দিত, যুগপোযোগী এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। সেগুলো বাস্তবায়িত হলে এই মিউজিয়াম হয়ে উঠবে জ্ঞানার্জনের এবং বিনোদনের এক অনন্য দর্শনস্থল। এ বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি বা ব্যক্তিগত উদ্যোগ অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে ভূমিকা রাখবে, নিঃসন্দেহে।