স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ, ৫ লাখ টাকায় মীমাংসা

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২১, ১০:১৫

ছবি: রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি
রাঙ্গামাটি জেলা শহরে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে তার ফুফা জুয়েল চাকমার বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) রাতে জুয়েলের বাসাতেই ধর্ষণের ঘটনা ঘটনা বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী।
তবে ঘটনার দুইদিন পর গতকাল রবিবার (২৮ মার্চ) জেলা শহরের বনরূপা এলাকায় অবস্থিত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) প্রোগ্রেসিভ কার্যালয়ে ৫ লাখ টাকায় ধর্ষণের ঘটনার দফারফা করা হয়েছে!
জুয়েল চাকমা বিজিবি সদস্য বলে জানা গেছে। জুয়েল বর্তমানে চুয়াডাঙায় কর্মরত আছেন।
ভুক্তভোগী কিশোরী জানায়, গত ২৫ মার্চ ছুটি কাটাতে চুয়াডাঙা থেকে রাঙ্গামাটির জেলা শহরের নিজ ভাড়া বাড়িতে আসেন আমার ফুফা জুয়েল। ফুফু চাকুরির কারণে সেদিন বিলাইছড়ি উপজেলায় অবস্থান করছিল। সেদিন রাত ১০টার দিকে রাতের খাবার শেষে ফুফা চুয়াডাঙা থেকে আনা বেলের জুস আমাকে শরবতের সাথে মিশিয়ে খাওয়ায়। আমি ও আমার ফুফাতো বোন এটি খাই। এটি খাওয়ার সাথে সাথে সাথে মাথা ঘুরালে আমার রুমে যাই। যেতেই ঘুমিয়ে পড়ি। পরে রাত ২টার দিকে ঘুম ভাঙলে আমি নিজেকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখতে পাই। লাইট জ্বালানোর পর ফুফাকে আমার রুমে দেখি। পরদিন পাশের বাড়িতে আমার স্কুল শিক্ষিকার নিকট গিয়ে বিষয়টি খুলে বলি ও আমার মা-বাবাকে খবর দিই। এ ঘটনার জন্য জুয়েলের শাস্তি দাবি করেন ভুক্তভোগী কিশোরী।
এদিকে ভুক্তভোগী ছাত্রীর স্কুল শিক্ষিকা বলেন, গত ২৬ তারিখ মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের জন্য খুব সকালে মাঠে চলে যাই। দুপুরে ঘরে ফিরে আমার মেয়ের কাছে ঘটনাটি শুনে তাকে ডেকে বিষয়গুলো জেনেছি। ভুক্তভোগী কিশোরীটি আমার মেয়ে ক্লাসমেট। পরে তাদের পারিবারিক সমঝোতা হয় বলে জেনেছি। আমাদের আর কোনো কিছু বলা হয়নি।
জুয়েল বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এটি পারিবারিক সমস্যা, পারিবারিকভাবেই বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে।
ভুক্তভোগীর মা বলেন, রবিবার রাতে রাঙামাটি শহরে প্রোগ্রেসিভ এনজিও অফিসে সালিশ হয়। সালিশে তার দোষ স্বীকার করে সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থন করেন এবং কিশোরীটির পড়াশুনার খরচ চালানোর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। মেয়ের নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকা করে মোট ৫ লাখ টাকা দেয়া হবে। একদিকে আত্মীয় আর আমরাও গরীব মানুষ। তাই মেনে নিয়েছি।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এ- সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) আইনজীবী অ্যাডভোকেট জুয়েল দেওয়ান এই সালিশে কাগজ লেখালেখির কাজ করেছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীর মা।
তবে অ্যাডভোকেট জুয়েল বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘যারা নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে তারাই এটি করেছে, আমাকে বিষয়টি অবহিত করেছে মাত্র। ওখানে নারীনেত্রী সুগন্দী চাকমা ও অনিতা দেব বর্মন ছিল বলে শুনেছি।’
নারীনেত্রী সুগন্দী চাকমা বলেন, ‘মেয়ের পরিবার মামলা করতে রাজি হয়নি। যেহেতু তারা উভয়ে আত্মীয়। আমরা তো কোনো সমাধান দিতে পারি না। আমরা শুধু রাস্তা দেখিয়ে দিতে পারি মাত্র। ওখানে মেয়ের দাদু উপস্থিত ছিল; তিনিই সমাধান দিয়েছেন। সিদ্ধান্ত হলো- মেয়েটি অন্য কোথায় থাকবে আর মেয়েটির লেখাপড়ার জন্য প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকা করে মোট ৫ লাখ টাকা দেয়া হবে।’
তবে এসব বিষয়ে ‘এখনো পর্যন্ত পুলিশ কিছুই জানানো হয়নি’ বলেই জানিয়েছেন রাঙ্গামাটি কোতয়ালী থানার ওসি কবির হোসেন।