
ছবি: ঝালকাঠি প্রতিনিধি
ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলায় অনাবৃষ্টিতে পানি সংকটের কারণে লোকসানের মুখে পড়েছেন বাঙ্গী, তরমুজসহ রবি মৌসুমের বিভিন্ন ধরনের রবিশস্য চাষিরা।
প্রচণ্ড রোদ ও অনাবৃষ্টির কারণে খালবিলের পানি কমে যাওয়ায় ফসলের ক্ষেত ফেটে খা খা করছে। এতে বাঙ্গী, তরমুজসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের গাছ শুকিয়ে গেছে। এসব কারণে আশানুরূপ ফলন পাওয়া সম্ভব নয় বলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র মতে, এ উপজেলায় চলতি রবি মৌসুমে পাঁচ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে রবিশস্যের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে জেলার শুক্তাগড় ও মঠবাড়ি ইউনিয়নে আবাদ বেশি।
উপজেলার একেশ্বারা ও বামনকাঠি এ দুই গ্রামে প্রায় ২৫ বিঘা জমির রবিশস্য পানির অভাবে রোদের তাপে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে এলাকার কৃষকরা কয়েক লাখ টাকা লোকসানের মুখে পড়েছেন।
বামনকাঠি ও একেশ্বারা গ্রামের শাখাওয়াত ফরাজি, আজিজ হাওলাদার, খলিল হাওলাদার, দেলোয়ার হাওলাদার ও এনামুল হোসেনসহ একাধিক কৃষক বলেন, কৃষি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ব্র্যাক,আশা, গ্রামীণ ব্যাংক, শক্তি ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন এনজিও থেকে বিভিন্ন পরিমাণে লোন নিয়ে তারা এ বছর ১০ বিঘা জমিতে বাঙ্গী, চার বিঘা জমিতে সূর্যমুখী, চার বিঘা জমিতে তিল, দুই বিঘা জমিতে মুগ ডাল, এক বিঘা জমিতে ছোলা, ১৫ কাঠা জমিতে ঢেড়শ, পাঁচ কাঠা জমিতে মরিচসহ অন্যান্য রবিশস্য চাষ করা হয়েছে। কৃষকরা প্রায় তিন লক্ষাধিক টাকা বিনিয়োগ করেছেন। ঠিকমতো সময় বৃষ্টি হলে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকার ফসল উৎপাদন হতো।
শেষ সময়ে পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ভয়ে উঁচু এলাকা নির্বাচন করা হয় রবিশস্যের জন্য। এবছর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত রাজাপুরে কোনো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ও কাছাকাছি পানি না পাওয়ার কারণে পরিমাণ মতো পানি সেচ দেয়া সম্ভব হয়নি। তাই কাঙ্খিত ফলন উৎপাদন হয়নি।
যে ফলন হয়েছে তাতে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পাওয়া যেতে পারে। এ বছর ওই এলাকার কৃষকদের লাখ লাখ টাকা লোকসান হতে পারে। লোকসান পুষিয়ে উঠতে কৃষকেরা সরকারের কাছে বিশেষ প্রণোদনা পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
কৃষক সাখাওয়াত বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের আওতায় কোনো প্রদর্শনী ক্ষেত করলে সে বিষয়ে মোটামুটি খোঁজখবর নেন কৃষি কর্মকর্তারা। কিন্তু ব্যক্তিগত উদ্যোগে কৃষি চাষ করলে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কোনো যোগাযোগ করা হয় না। গত বছরে আমার প্রায় ১৩ বিঘা জমির রবিশস্য জোয়ারের পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো কিন্তু কৃষি কর্মকর্তারা একবারও খোজ নেয়নি। এবারেও আমার প্রায় ১৪ বিঘা জমির রবিশস্য রোদের তাপে ক্ষতি হয়েছে। এ পর্যন্ত কোনো খোঁজখবর নেয়নি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উল্লাহ বাহাদুর বলেন, কৃষকদেরকে ফসলের শত্রু পোকা নিধন ও প্রয়োজনীয় সেচের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ওই এলাকায় কাছাকাছি খাল না থাকায় তুলনামুলক ফসল উৎপাদন কম হতে পারে। উপজেলায় সার্বিক দিক থেকে এ বছর আবাদ বেশি হয়েছে ও গত কয়েক বছরের তুলনা ফলনও ভালো হয়েছে। এ বছর জোয়ারের পানিও দেড়িতে এসেছে। পর্যাপ্ত সেচের অভাবে দু/এক জায়গায় সমস্যা হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্থরা স্থানীয় মেম্বর ও চেয়ারম্যানদের সাথে যোগাযোগ করলে যাচাই বাছাই করে তাদেরকে প্রণোদনা দেয়া হবে।