বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিন
দীর্ঘ যানজট আর অফিস যাত্রীদের ক্ষোভ

মাহমুদ সালেহীন খান
প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২১, ১৩:০৭

ছবি: সংগৃহীত
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে এক সপ্তাহের সর্বাত্মক বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিন আজ বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল)। লকডাউনের প্রথম দিন ফাঁকা থাকলেও আজ রাজধানীর চিত্র ছিলো ভিন্ন।
রাস্তায় গাড়ির চাপ না থাকায় বেশির ভাগ সড়ক ফাঁকা থাকলেও পুলিশের চেক পোস্টের কারণে কোনো কোনো সড়কে যানজটেরও সৃষ্টি হয়েছে।
আজ থেকে ব্যাংক খোলা ছিল; কিন্তু গ্রাহক সংখ্যা কম ছিলো বলে জানিয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। তবে বিপাকে পড়েছেন চাকুরিজীবিরা। অনেকে দ্বিগুণ রিকশাভাড়া দিয়ে অফিসে যেতে হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় মৃতের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৯৬ জনে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার যেভাবে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এটি ভুল পদক্ষেপ। গণপরিবহন বন্ধ রেখে ব্যক্তিগত পরিবহন খোলা রেখে মানুষকে বাইরে বের করার সুযোগ দিয়ে লকডাউনের সুফল পাওয়া যাবে না।
এদিকে মানুষের চলাচল কমাতে রয়েছে পুলিশের তৎপরতা। প্রথম দিনের মতোই দ্বিতীয় দিনেও রাজধানীর মোড়ে মোড়ে পুলিশের তল্লাশি চোখে পড়েছে। তবে খানিকটা ঢিলেঢালা ভাব দেখা গেছে রাস্তায়।
আজ সকাল থেকে খিলক্ষেত-বনানী-এয়ারপোর্ট রোডে প্রায় দেড় কিলোমিটার জুড়ে ট্রাক, বাস, প্রাইভেটকারের দীর্ঘ যানজট চোখে পড়েছে। জানা গেছে, পুলিশের চেকপোস্ট ও কঠোর তল্লাশির ফলে সৃষ্টি হয়েছে এ যানজট। এছাড়া প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিন ‘মুভমেন্ট পাস’ বেশি সংখ্যক ইস্যু করাতে মানুষ ও যানবাহনের চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আজ সকালে রাজধানীর বিভিন্ন ব্যাংকে গ্রাহকের তেমন চাপ লক্ষ্য করা যায়নি। কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, সাধারণ গ্রাহকের চাপ কম থাকলেও অন্যান্য গ্রাহকের উপস্থিতি রয়েছে। আমদানি ও রফতানিসংক্রান্ত কাজ চলছে। মতিঝিল ও গুলশান-বনানীর কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, জরুরি লেনদেন ছাড়া অন্য কাজে ব্যাংকে কেউ আসছেন না। যারা এসেছেন, তাদের বেশির ভাগই ব্যবসা সংক্রান্ত ও টাকা তোলার জন্য।
লকডাউনে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ব্যক্তিগত যানবাহন নিয়ে বের হওয়াও বারণ। তবে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করে কিছু প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার। কিন্তু কর্মীদের যাতায়াতের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা রাখেনি এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই। ফলে সকালে অফিসগামী মানুষ পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।
সহজলভ্য পরিবহন রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশা পাওয়াটাই যেন সোনার হরিণ। এ সুযোগে রিকশাচালকরা ভাড়া নিচ্ছেন দ্বিগুণের বেশি। সকালে অফিস টাইমের আগে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় এমন চিত্র দেখা গেছে।
রিকশা না পেয়ে খিলগাঁও রেলগেট থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত হেঁটে এসেছেন আরমান হোসেন। তিনি জনতা ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় কাজ করেন। তিনি বলেন, এই পথটুকুর ভাড়া চাওয়া হচ্ছে দেড়শ টাকা। অথচ ফাঁকা রাস্তায় ১৫ মিনিটের পথ এটি। ৮০ টাকা বলার পরেও রাজি হচ্ছে না। অন্যসময় ৭০-৮০ টাকা দিয়েই যাতায়াত করতাম।
এসময় অফিসগামী বহু মানুষকে পরিবহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। পরিবহন না পেয়ে ভাড়া ভাগাভাগি করে একসাথে দুইজন যাত্রীকেও রিকশায় উঠে যাতায়াত করতে দেখা গেছে। লকডাউনের প্রথম দিন রিকশায় দুই যাত্রীকে একসাথে যাতায়াত করতে দেয়া না হলেও দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার দুই থেকে তিনজন করে যাত্রী পরিবহন করতেও দেখা গেছে। এসময় মোড়ে মোড়ে দায়িত্বপালনকারী পুলিশের সদস্যরা বাধা দেননি।
মালিবাগ রেলগেটের চিত্রও একই। দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেও রিকশার সন্ধান পাননি অফিসগামী বহু মানুষ। এসময় যানবাহন না পেয়ে হেঁটেই গন্তব্যে যাত্রা দিতে দেখা গেছে কর্মজীবী মানুষদের।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধূরী বলেন, আসলে যে কায়দায় লকডাউন হচ্ছে, এভাবে সুফল পাওয়া যাবে না। লকডাউনের প্রথম দিনেই করোনায় মৃতের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৯৬। সরকার যদি এখনো সববেশির ভাগপ্রতিষ্ঠান খোলা রেখে মানুষ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে তাহলে এর পরিণাম আরো ভয়াবহ হবে।