দেশে করোনায় বেকার হয়েছেন ৩১ শতাংশ কর্মজীবী নারী

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২১, ২১:১০

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখনো থেমে নেই। এর মধ্যে দেশে কর্মজীবী নারীদের এক-তৃতীয়াংশ বেকার হয়েছেন করোনা মহামারির সময়।
খুলনার খালিশপুরে একটা পাটকলে কাজ করতেন আলেয়া বেগম। গত বছর বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে তার কাজও চলে যায়।
আলেয়া বেগম বলছেন, গত বছরের জুলাই মাস থেকে এখনো তিনি বেকার রয়েছেন। জমি কেনার জন্য ৯০,০০০ টাকা ঋণ করেছিলেন, সেই ঋণ শোধ করা থেকে শুরু করে দিন যাপন করাই এখন তার জন্য বড় কঠিন বিষয়।
দেশের দুটি বেসরকারি সংস্থার বলছে, করোনা মহামারির সময়ে আলেয়া বেগমের মত কাজ হারিয়েছেন এমন বহু নারী।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার ও ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের এর জরিপে বলছে, গত বছর জুন মাসে ৩২ শতাংশ নারী কাজ হারিয়েছে এবং চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে নেমে এসেছে ৩১ শতাংশে।
ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন বলছেন, যারা কাজ হারিয়েছেন এবং কাজে ফিরতে পারেন নি তারা মূলত কল-কারখানা, ঘর-গৃহস্থলী এবং দিনমজুরের কাজ করতেন।
মহামারির কারণে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নানান শ্রেণিপেশার মানুষ। এদের মাঝে আছে হত-দরিদ্র এবং মাঝারি দরিদ্র শ্রেণির মানুষ।
এদের অবস্থান দারিদ্র সীমার নিচে। এছাড়া রয়েছে দরিদ্র নয় কিন্তু ঝুঁকিতে থাকা এক শ্রেণির মানুষ যাদের বলা হচ্ছে ভালনারেবল নন পোর বা ভিএনপি।
দেখা গেছে, দারিদ্রসীমার উপরে কিন্তু মধ্যম জাতীয় আয়-সীমার নিচে থাকা এই শ্রেণির মানুষদের অবস্থা পরিবর্তিত হচ্ছে সবচেয়ে ধীরগতিতে।
গত জুনে দরিদ্র নয় কিন্তু সেই ঝুঁকিতে থাকা এই মানুষদের ৭২ শতাংশ দারিদ্রসীমার নিচে অবস্থান করছিলো। তাদের আখ্যায়িত করা হয়েছিল নতুন দরিদ্র হিসেবে।
সেই নতুন দরিদ্রদের ৫০ শতাংশ এখনো ঝুঁকিতে থাকা মানুষের তালিকায় বিদ্যমান। এই হার শহরে ৫৯ শতাংশ এবং গ্রামে ৪৪ শতাংশ। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে ১৪.৮ শতাংশ নতুন দরিদ্রদের এই হার বিগত বছরের জুনে ছিলো ২১.২ শতাংশে।
দেশে করোনা সংক্রমণের পর বিভিন্ন সেক্টরে প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে সরকার। মাঝারি এবং ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তারা যাতে ঘুরে দাঁড়ান সেজন্য দেয়া হয়েছে সরকারি সহায়তা। কিন্তু একেবারে তৃনমূলে যেসব নারী কর্মীরা রয়েছেন তারা পড়েছেন বিপাকে।
অর্থনীতিবিদ এবং গবেষকরা বলছেন সরকার যে প্রণোদনা দিয়েছে সেটা এই ব্যক্তি পর্যায়ে নারীদের জন্য নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সায়মা হক বিদিশা বলছেন, যেসব নারীরা বেকার রয়েছেন তাদের কাজে ফেরাতে তাৎক্ষণিক এবং স্বল্প মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে।
২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত যৌথ গবেষণার তৃতীয় ধাপে কভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট দারিদ্র্যের গতিপ্রকৃতি এবং স্বল্প আয়ের মানুষদের মাঝে এর প্রভাব সম্পর্কে গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি।
এ বছরের মার্চ পর্যন্ত যেখানে শহরাঞ্চলে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৫৯ শতাংশ, সেখানে গ্রামাঞ্চলে ৪৪ শতাংশ।