
তালশাঁস বিক্রেতা
তাল একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ফল। তালের শাঁসকে নারিকেলের মতই পুষ্টিকর বলে বিবেচনা করা হয়। গরমের এই দিনে অনেকের হাতে পৌঁছে যায় কচি তালের শাঁস। মিষ্টি স্বাদের মোহনীয় গন্ধে ভরা তালের শাঁস গ্রীষ্মের দুপুরে, প্রচণ্ড গরমে শরীর যখন ক্লান্ত, তখন খুব দ্রুত প্রশান্তি এনে দিতে পারে।
এর মোহনীয় ঘ্রাণ এবং সুমিষ্ট স্বাদ আমাদের অনেকেরই প্রিয়। সাধারণত গ্রীষ্মকালে দেশের বাজার গুলোতে কচি তাল দেখতে পাওয়া যায়। আর এলাকা ভেদে একটি তালের দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা।
কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর, হাসপাতাল মোড়, জেলখানা মোড়, মঙ্গলবাড়ীয়া বাজার, ছয় রাস্তা মোড়, থানা ট্রাফিক মোড়, কাটাইখানা মোড়, সিঙ্গার মোড়, মজমপুর গেট, চৌড়হাসমোড় সহ বিভিন্ন এলাকায় এসব তালশাঁস বিক্রি করতে দেখা গেছে।
শহরের কাটাইখানা মোড়ের তালশাঁস বিক্রেতা আরিফ আলী। তিনি কুমারখালী উপজেলার বানিয়াকান্দি এলাকার বাসিন্দা। বছরের অন্যান্য সময় ইটভাটায় কাজ করলেও এখন তিনি আর একজন সহকারী মিলে তালের শাঁস বিক্রি করেছেন। এতে পাঁচ-সাতশ’ টাকা লাভ থাকে, যা দিয়ে আরিফ ও তার সহযোগীর সংসার মোটামুটি ভালোভাবেই চলে যায়।
মিরপুর উপজেলার মশান বাজারের তালশাঁস বিক্রেতা রমজান আলী জানান, একটি তাল থেকে দুটি বা তিনটি শাঁস হয়। প্রতি পিস এখন ৫ টাকায় বিক্রি করছি। অথচ গত বছরে তিন থেকে চার টাকায় বিক্রি করেছি। এই দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গ্রামে গ্রামে ঘুরে এসব কচি তাল কিনে আনতে হয় আর তালের সংকট থাকায় এর দাম বেড়েছে।
প্রতিদিন দুই হাজার টাকার তাল শাঁস বিক্রি করেন তিনি। এতে সব খরচ বাদ দিয়ে ৫০০ টাকা আয় হয়।
তাল শাঁস কিনতে আসা ক্রেতা আক্তার হোসেন বলেন, গত বছরের থেকে এবার তাল শাঁসের দাম অনেকটাই বেশি। গত বছর যে তালের শাঁস ৩-৪ টাকায় কিনেছি এবার সেই তাল শাঁস ৫-৬ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তারপরও মৌসুমি ও সুস্বাদু হওয়ায় এর প্রতি আগ্রহের কমতি নেই বলেও জানান তিনি।
কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন এ এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, তাল শাঁস একে সুস্বাদু, অন্যদিকে কচি তালের শাঁসে জলীয় অংশ বেশি থাকায়, তা দেহের পানিশূন্যতা অনেকটাই পূরণ করে। ফলে জ্যৈষ্ঠের এ গরমে কুষ্টিয়ার হাট-বাজারে বেশ কদর বেড়েছে তাল শাঁসের।
কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ শ্যমাল কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘এবার তালের ফলনটাও ভালো হয়েছে। এছাড়া নতুন নতুন গাছ থেকে এই তাল সংগ্রহ করা হচ্ছে।’ তালগাছ বজ্রপাত রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে বলেও জানান তিনি।
আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বজ্রপাত রোধে জেলার বিভিন্ন উপজেলার সড়কের ধারে ও খালের পাড়ে তালের গাছ রোপণ করে থাকি। কৃষি অফিসসহ সামাজিক ও বিভিন্ন সংগঠনের আলাদা আলাদা দল এই তালের গাছ রোপণ করে আসছে বলেও জানান তিনি।