Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

ইভ্যালির চেয়ারম্যান-এমডির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২১, ১১:৫৬

ইভ্যালির চেয়ারম্যান-এমডির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. রাসেল। ফাইল ছবি

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. রাসেলের দেশত্যাগের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।

আজ শনিবার (১৭ জুলাই) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর এ তথ্য জানিয়ে বলেন, গত ১৫ জুলাই (বৃহস্পতিবার) মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন।

এর আগে তারা যেন বিদেশ যেতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা নিয়েছিল দুদক। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, তারা বিদেশ চলে যেতে পারেন- এমন তথ্য জানার পর দুদক ব্যবস্থা নেয়। তখন এখতিয়ার সম্পন্ন কোর্ট খোলা ছিল না। বৃহস্পতিবার এখতিয়ার সম্পন্ন কোর্ট থেকে নিষেধাজ্ঞার আদেশ এসেছে।

সূত্র জানায়, দুদক অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায় অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশত্যাগ করলে সার্বিক অনুসন্ধান কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে বলে প্রতীয়মান হওয়ায় গত ৮ জুলাই  ইভ্যালির এমডি ও চেয়ারম্যানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে সংস্থাটি।

গত ৮ জুলাই গ্রাহক ও মার্চেন্টের ৩৩৯ কোটি টাকার হদিস না থাকার বিষয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক। সংস্থাটির দুই কর্মকর্তাকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, গ্রাহক ও মার্চেন্টের টাকাগুলো আত্মসাৎ অথবা পাচার হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে এই তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

এদিকে ইভ্যালির সাথে চুক্তিবদ্ধ বেশ কিছু পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাউচারের বিপরীতে পাওনা অর্থ পরিশোধ না করায় তারা পণ্য দিচ্ছে না। সম্প্রতি ইভ্যালির গিফট ভাউচারে কেনাকাটার নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছে।

এর আগে নানা অনিয়মের কারণে ইভ্যালিসহ ১০টি অনলাইন মার্চেন্টে ক্রেডিট, ডেবিট ও প্রি-পেইড কার্ডের লেনদেন স্থ‌গিত করেছে বেশ কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংক। এর মধ্যে ডাচ বাংলা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এম‌টি‌বি), ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া ও ঢাকা ব্যাংক একই নিষেধাজ্ঞা দেয়। পাশাপাশি ইউসিবি ও সিটি ব্যাংকও তাদের গ্রাহকদের এসব অনলাইন মার্চেন্টে লেনদেনের বিষয়ে সতর্ক করেছে।

ইভ্যালির সম্পদের চেয়ে ছয় গুণ বেশি দেনা বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনে উঠে আসে ইভ্যালির মোট দায় ৪০৭ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম নিয়েছে ২১৪ কোটি টাকা, আর মার্চেন্টদের কাছ থেকে বাকিতে পণ্য নিয়েছে ১৯০ কোটি টাকার। স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে কমপক্ষে ৪০৪ কোটি টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা। কিন্তু সম্পদ আছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকা।

এছাড়া গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালির নেয়া অগ্রিম ৩৩৯ কোটি টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এ টাকা আত্মসাৎ বা অবৈধভাবে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার আশঙ্কা রয়েছে।

ইভ্যালির ওপর করা বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিদর্শন প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে ৪ জুলাই অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের ৪ প্রতিষ্ঠানকে চিঠি পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠান চারটি হচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।

দুদক চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক ইভ্যালির বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৪ মার্চে ইভ্যালির মোট সম্পদ ৯১ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার ৮৪৬ টাকা ( চলতি সম্পদ ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা) এবং মোট দায় ৪০৭ কোটি ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৯৯৪ টাকা। এ সময় গ্রাহকের কাছে ইভ্যালির দায় ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টের কাছে দায় ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকা। গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়া ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টদের কাছ থেকে ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকার মালামাল নেওয়ার পর স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ৪০৩ কোটি ৮০ লাখ ১ হাজার ৯১৪ টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ রয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা।

এছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ইকমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মনীতির মধ্যে আনতে গত ৪ জুলাই দেশে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা জারি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, ক্রেতা-বিক্রেতা একই শহরে অবস্থান করলে ক্রয় আদেশ দেওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে, ভিন্ন শহরে থাকলে ১০ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করতে হবে। পণ্য সরবরাহে ব্যর্থ হলে, মূল্য পরিশোধের ১০ দিনের মধ্যে ক্রেতার পুরো টাকা ফেরত দিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই গ্রাহকের পণ্য বা সেবা বুঝিয়ে না দিয়ে বিক্রয় মূল্য পাবে না জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পেমেন্ট নির্দেশনা জারি করে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫