Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

সরকারি প্রকল্পের দুর্নীতিতে জড়িতদের শাস্তি হোক

Icon

হাসান হামিদ

প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২১, ১৫:৩৮

সরকারি প্রকল্পের দুর্নীতিতে জড়িতদের শাস্তি হোক

প্রতীকী ছবি

করোনাভাইরাসের তাণ্ডব এক শ্রেণির মানুষকে স্পর্শই করতে পারেনি। তাদের প্রমোশন, ইনক্রিমেন্ট-বোনাস সবই ঠিকঠাক হচ্ছে। তারা হলেন- আমাদের দেশের সরকারি কর্মচারী; কিন্তু এতসব সুবিধার পরও এই মহামারিতে প্রকল্পের টাকা লুটপাটেও তাদের একটি অংশ দারুণ তৎপর।

পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে দেশের ২২ জেলার অন্তত ৩৬টি উপজেলায় ঘর নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোথাও ঘর নির্মাণের পর তা ভেঙে যাচ্ছে, আবার কোথাও দেখা দিয়েছে ফাটল। ঘর দেওয়ার নামে টাকা নেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। প্রকল্পের কাজে দুর্নীতির এ খবর নতুন নয়। কখনোই শাস্তি না পাওয়া, ঠিকমতো দেখভাল না করা, সরকারের সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতায় আজকের এ হাল হয়েছে।

আশ্রয়ণ প্রকল্প মূলত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন একটি সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প, যার মাধ্যমে গৃহহীন এবং বাস্তচ্যুত মানুষদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ করা হয়। এই প্রকল্পের ইতিহাস খুব পুরনো নয়। ১৯৯৭ সালে কক্সবাজারসহ পার্শ্ববর্তী জেলার বেশ কিছু এলাকায় ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল। তখন সেখানকার বহু পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই এলাকাগুলো পরিদর্শনে গিয়ে সেখানকার মানুষের দুর্দশা দেখে অত্যন্ত সহানুভূতিশীল হয়ে পড়েন এবং সব গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেন। এরপর সে বছরই ‘আশ্রয়ণ’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩৮৪০.৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ লাখ ৯৮ হাজার ২৪৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন-অসহায়-ছিন্নমূল পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আয়বর্ধক পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৬৫৬ জনকে। আর ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭১৮টি পরিবারকে ঋণ প্রদান করা হয়েছে। 

জানা যায়, সবুজায়নের লক্ষ্যে প্রতিটি প্রকল্পগ্রামে ফলদ, বনজ ও ঔষধি বৃক্ষরোপণ করা হয়ে থাকে। তাছাড়া প্রকল্পগ্রামে বসবাসরত উপকারভোগীদের জীবনমান সহজীকরণের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান, সুপেয় পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে ‘নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ কর্মসূচি’র আওতায় ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭৭৭টি পরিবারকে তাদের নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের জন্য ২৩৪টি টং ঘর ও বিশেষ ডিজাইনের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য অতি মহৎ; কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্তদের দুর্নীতিতে এই মহৎ উদ্দেশ্য ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। 

মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উপহার হিসেবে গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবারগুলো পাচ্ছে দুর্যোগসহনীয় একটি বাড়ির মালিকানা। এর মধ্যে ১ লাখ ১৮ হাজার ৩৮০ ভূমিহীন পরিবারকে বাড়ি করে দিয়েছে বর্তমান সরকার। অভিযোগ আছে, এসব ঘর তৈরিতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি অনেক ঘরের জানালার পাল্লা পর্যন্ত লাগানো হয়নি। ঘরের দেয়াল ফেটে যাচ্ছে। আর ঘর হস্তান্তরের শুরু থেকে কারও কারও ঘরে ছিল না পানি ও বৈদ্যুতিক সংযোগের ব্যবস্থা। আরও নানা অভিযোগ আছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য অনুযায়ী যেখানে এসব ঘর কেবল সমাজের হতদরিদ্রদেরই পাওয়ার কথা, সেখানে দেশের কোনো কোনো স্থানে তা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, তাদের আত্মীয়স্বজন এবং এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বরাদ্দ নিয়েছেন। ২২ জেলার ৩৬টি উপজেলায় ঘর নির্মাণে নানা অভিযোগ পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগে প্রশাসনের পাঁচ কর্মকর্তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ক্ষেত্রে, মনিটরিং ব্যবস্থা ঠিক থাকলে শুরুতেই এই অনিয়ম ঠেকানো যেত। মুজিব শতবর্ষে উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী গৃহহীনদের এসব ঘর দিয়েছেন। তাই শুধু ওএসডি করলে হবে না, যারা এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। দুদকেরও এটা দেখা উচিত। দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিচার হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ করতে অন্যরা সাহস পাবে না। 

মাঠ পর্যায়ে কাজটির দায়িত্ব দেওয়া হয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নেতৃত্বাধীন একটি কমিটিকে। এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন উপজেলা প্রকৌশলী, এসিল্যান্ড, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। যেহেতু কমিটিতে শুধু ইউএনওরা ছিলেন না, তাই বাকিদেরও আইনের আওতায় আনা দরকার। এই প্রকল্পের কাজই হলো ঘর বানানো। আর ঘর নির্মাণ একটি টেকনিক্যাল কাজ। এ ধরনের টেকনিক্যাল কাজ ইউএনওদের মাধ্যমে করাতে হলো কেন, সেটা একটা প্রশ্ন। উপজেলা পর্যায়ে ইউএনওরা সব কাজেরই সমন্বয় করেন। টেকনিক্যাল কাজটি তো প্রকৌশল বিভাগের। তাদের মূল দায়িত্ব দেওয়া যেত। গরিবদের নাম ভাঙিয়ে সরকারের টাকায় দুর্বৃত্তদের ভাগ বসানো কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়।

লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫