-610cf16589423.jpg)
বনবিবির বটতলা
সবুজের সমারোহ। বাতাসে ভেসে আসে পাখির কলকাকলি। গাছের পাতায় বাতাসের শব্দ আর ডালে বসা পাখির ডাক মিলে তৈরি হয় প্রশান্তির এক আবহ। ছড়িয়ে থাকা একেকটি শাখাকে তখন মনে হয় পরম মমতায় বাড়িয়ে দেয়া হাত। গাছের নিচে বসলে আর উঠতে ইচ্ছে করে না। অচেনা এক মায়া যেন টেনে ধরে।
প্রকৃতি আর মানবমনের এ অদৃশ্য যোগসূত্রের দেখা মিলবে সাতক্ষীরার দেবহাটার বনবিবির বটতলায়। শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে দেবহাটা উপজেলা সদর। সেখানেই রয়েছে হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া ৪০০ বছর বয়সী এই বটগাছ। এটিই ‘বনবিবির বটতলা’ নামে পরিচিত।
প্রায় সাড়ে তিন একর জমির ওপর দাঁড়িয়ে আছে বটগাছটি। গাছের শাখা-প্রশাখা থেকে নেমে আসা অংশ মাটির সাথে তৈরি করেছে আঙ্গিক সম্পর্ক। ধারণা করা হয়, বহু পুরনো বটতলাটি একসময় সাধু ও ঋষিদের ধ্যানের জায়গা ছিলো। এখানে বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা-অর্চনা হতো। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালিত হতো। কথিত আছে, কারও মনের বাসনা পূরণের জন্য এখানে এসে বনবিবিকে স্মরণ করলে এবং তার কাছে চাইলে মনের আশা পূরণ হতো।
বর্তমানে এখানে আর সাধু-ঋষিদের ধ্যান করতে দেখা যায় না। তবে বিনোদনের জন্য অনেক নারী-পুরুষ এখানে ভিড় জমায়। ঘুরতে আসা দর্শনার্থী রুহুল আমিন জানান, ‘বটতলা জায়গাটি অনেক ঐতিহ্যবাহী। এখানে প্রতিবছর হাজুত-মানত মেলা হয়। মেলায় হিন্দু, মুসলিম–সব ধর্মের মানুষ অংশ নেয়। আমরাও মেলায় আসি, অনেক মজা হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘গাছটি কত বছরের পুরনো কেউ বলতে পারে না। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক হলো, কেউ বলতে পারে না এর মূল গোঁড়া কোথায়? আমি শুনেছি, কেউ গাছটি কাটার চেষ্টা করলে তার বা তার পরিবারের সদস্যদের কোনো না কোনো ক্ষতি হয়। তাই কেউ কাটে না।’
এই বটতলাতেই ভারত-বাংলাদেশের যৌথ ছবি শঙ্খচিলের অনেক দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ইত্যাদি অনুষ্ঠানেও এটি নিয়ে পর্ব প্রচারিত হয়। উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে প্রতিবছর এই বটতলায় পয়লা বৈশাখ উদযাপিত হয়। পান্তা-ইলিশ খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে।
স্থানটির চারপাশে এখন বসতি গড়ে উঠেছে। তাই ধীরে ধীরে এই বটতলাটি নিজস্ব স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলছে। কিন্তু উপজেলার ঐতিহ্য আজও ধরে রেখেছে বনবিবির বটতলা। ছায়া সুনিবিড়, পাখির কুজনে মুখরিত, শ্যামল ও নয়নাভিরাম এই স্থানটিতে অবসরের কিছুটা সময় বসে থাকলে মনের সকল ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। মনটা সতেজ হয়ে ওঠে। প্রকৃতির অপূর্ব দৃশ্য দেখতে দেখতে সময় কেটে যায়।
বেড়াতে আসা আব্দুস সালাম জানান, ‘জায়গাটি অনেক নিরিবিলি এবং খুবই সুন্দর হওয়ায় মাঝে মাঝে বেড়াতে আসি। কিন্তু এখানে বসার কোনো স্থান নেই। কোথাও কোনো পরিপাটি নেই। জায়গাটি যদি সুন্দর ব্যবস্থাপনা করা যায়, তাহলে এখান থেকে সরকার রাজস্ব আদায় করতে পারবে। সবাই এসে সময় কাটাতে পারবে।’
দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাছলিমা আক্তার বলেন, ‘বনবিবি বটতলা ঘিরে আমাদের অনেক উদ্যোগ রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি কাটলে প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু কাজ করা হবে।’