Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

ভয়ংকর মাদকে সর্বনাশ ডেকে আনছে অভিজাত পাড়ায়

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২১, ১৩:২৭

ভয়ংকর মাদকে সর্বনাশ ডেকে আনছে অভিজাত পাড়ায়

মাদকদ্রব্য

করোনার কারণে মানুষের এখন ঘরবন্দি জীবন। অনলাইনে চলছে কেনাকাটার ধুম। সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা। করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারিও মাদককে রুখতে পারছে না বরং করোনাকালে বেপরোয়া মাদক ব্যবসায়ীরা। চলছে অনলাইনে মাদক বেচাকেনা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন পেজ, গ্রুপ এবং ব্যক্তিগত আইডি খুলে অনলাইনে মাদকের হাট বসানো হয়েছে। ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমেও বেচাকেনা হচ্ছে মাদক। অনলাইনে মাদকের অর্ডার করলেই নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে। দেয়া হচ্ছে সব ধরনের মাদকের হোম ডেলিভারি। আর হোম ডেলিভারিতে নিজস্ব ডেলিভারিম্যানের পাশাপাশি প্রচলিত ডেলিভারি সার্ভিস এবং কুরিয়ার ব্যবহার করারও অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি অনলাইন অর্ডারের ডেলিভারি দেয়ার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কয়েক জনকে আটক করেছে। তবে বাহক ধরা পড়লেও গডফাদাররা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। অনলাইনে মাদক বেচাকেনার কারণে রাজধানীর অভিজাত আবাসিক এলাকার পাশাপাশি গ্রামে-পাড়া-মহল্লায় অনেকের হাতেই এখন মাদক। 


মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান নিয়মিত চলছে বলা হলেও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে মূলত এখন মাদকবিরোধী অভিযান খুব কমই হচ্ছে। অতীতেও মাদকবিরোধী অভিযান কিছু দিন চলার পর তা ঝিমিয়ে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। অভিভাবকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সাথে নিয়ে সেই জিরো টলারেন্স নীতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাাহিনী বাস্তবায়ন করলেই মাদক নির্মূল করা সম্ভব। তবে মাদক ব্যবসার সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণির সদস্য, স্থানীয় এক শ্রেণির রাজনৈতিক নেতা জড়িত রয়েছেন। সেসব রাজনৈতিক নেতাদের এখন পকেটভর্তি টাকা। এ কারণেই মাদকবিরোধী অভিযান সফল হচ্ছে না।

আর এই মাদকের ফলে রাজধানীর অভিজাত পাড়ায় সর্বনাশ ডেকে আনছে। নিজেদের ভাড়া করা বাড়িতে ভয়ংকর চক্র মাদকের আসর বসাচ্ছে। করছে ব্ল্যাকমেল। এসব অপকর্মের জন্য গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায় নাইট ক্লাবের আদলে গড়ে উঠেছে অসংখ্য সিসাবার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এসব আস্তানা। এসব স্থানে হাউস পার্টি বা ডিজে পার্টির আয়োজন করা হয়। চক্রের খপ্পরে পড়ে বিত্তশালীর সন্তানরা পার্টিতে গিয়ে বিপথে চলে যাচ্ছে।


আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের পর একে একে এই চক্রের সাথে জড়িত শতাধিক নাম বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। মাদকের আস্তানা, নাইট ক্লাব আর সিসাবারগুলো গুঁড়িয়ে দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জিরো টলারেন্স অবস্থান নিয়েছে। ব্ল্যাকমেলিংয়ের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান এখন কঠোর। এসব ঘটনার আলামত হিসেবে উদ্ধার করা অডিও-ভিডিও ফুটেজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে এই ভিন্ন জগতের আদ্যোপান্ত।

উল্লেখ্য, মাদক ব্যবহার ও ব্ল্যাকমেলিংয়ের অভিযোগে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয় আলোচিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা, মরিয়ম আক্তার মৌ, চিত্রনায়িকা পরীমণি, নজরুল রাজ, মিশু, জিসান এবং জিমিকে। এদের প্রত্যেকের বাসায় রয়েছে মিনিবার। উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, সিসা, এলএসডি, ইয়াবা, আইসসহ পর্নো ছবি তৈরির বিভিন্ন সামগ্রী। পার্টির নামে বিত্তবানদের বাসায় ডেকে এনে মদ ও ড্যান্স পার্টির ব্যবস্থা করত। এরপর আপত্তিকর ছবি তুলত এরা। বিত্তবানদের সন্তান, ব্যবসায়ী, ব্যাংকারসহ সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ডেকে নিয়ে ব্ল্যাকমেলিং করার আপত্তিকর ভিডিও ও ছবি গোয়েন্দারা খুঁজে পায়।


সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, হাউস পার্টির নামে মাদক কারবার, অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত শোবিজের শতাধিক মডেল-নায়িকার নাম পেয়েছে গোয়েন্দারা। তাদের অন্তত ১২ জনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। যাচাই করা হচ্ছে হাউস পার্টির ফ্ল্যাটগুলোও। এসব চক্রের মাদক কারবারের নেটওয়ার্ক নিয়েও শুরু হয়েছে তদন্ত। দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, মাদকের পার্টির ও প্রতারণার পেছনে যারা আছেন তারা প্রভাবশালী হলেও আইনের আওতায় আনা হবে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ গণমাধ্যমকে বলেন, যারা গ্রেফতার হয়েছেন, তারা ইতিমধ্যে স্বীকার করেছে তারা ব্ল্যাকমেলিং চক্রের সদস্য। এ রকম শত শত রয়েছে চক্রের সদস্য। এরা দুটি কাজ করছে। একটা হলো তরুণ-তরুণীদের মাদকে আসক্তি করছে। আরেকটি হলো রাতে পার্টি আয়োজন করে অশ্লীল ছবি তুলে সেগুলো তার পরিবারের কাছে পাঠিয়ে হুমকি দিত। এদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। যারা এখনো গ্রেফতার হয়নি, তাদের ধীরে ধীরে আইনের আওতায় আনা হবে।


গোয়েন্দা সূত্র আরো জানায়, পিয়াসার নেটওয়ার্কে ২০-২৫ জন সুন্দরী রমণী রয়েছে। পালাক্রমে তাদের মাধ্যমেই বসানো হয় মাদকের জমজমাট আসর। সেই আসরে আমন্ত্রণ জানানো হতো গুলশান, বনানী, বারিধারায় বসবাসকারী ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও তাদের সন্তানদের। এতে তিন ধরনের ফায়দা হাসিল করত সে। আসরে আমন্ত্রিতদের বুঁদ করতে যে মাদক ব্যবহার করা হতো তার বিল পেত পিয়াসা। এছাড়া রমণীরা উদাম নৃত্যের সময় তাদের ওপর যে টাকা ছিটানো হতো তার বড় অংশও পিয়াসা নিত। আর গোপন ক্যামেরায় আসরে আগন্তুকদের ছবি তুলে ব্ল্যাকমেল করত। এছাড়া রমণীদের সাথে রাত কাটানো অতিথিদের পরদিন গুলশানের একটি ডায়মন্ড জুয়েলারি শপ থেকে লাখ লাখ টাকার জুয়েলারি উপহার দিতে বাধ্য করত। পরে ওই জুয়েলারি ফেরত দিয়ে নগদ টাকা নিয়ে নিত পিয়াসা। তার সাথে ওই ডায়মন্ড জুয়েলারি মালিকেরও ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। আর পিয়াসার নেটওয়ার্কে থাকা সদস্যদের ইয়াবার চালান আসত টেকনাফ থেকে। অভিনব কায়দায় সংগ্রহ করা হতো ওই চালান। যা গোয়েন্দাদের কাছেও অনেকটা অজানা। 


সূত্রে জানা যায়, কয়েকজন বন্ধুর সহযোগিতায় একটি গরুর ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেছে পিয়াসা। ওই ফার্মের জন্য টেকনাফ থেকে বার্মিজ গরু আনার সময় গরুর পেটে ঢুকিয়ে আনা হতো ইয়াবার চালান। এ কাজে পিয়াসার প্রধান সহযোগী হলো জিসান ও মিশু। 

সূত্র জানায়, ঢাকার অভিজাত এলাকায় অর্ধশতাধিক ফ্ল্যাটের সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দারা। এসব পার্টিতে ধনী পরিবারের সন্তানদের আমন্ত্রণ করে নিয়ে ক্ষতিকর মাদকে আসক্ত করা হয়। কতিপয় বিতর্কিত মডেল-নায়িকাদের দিয়ে আয়োজন করা হলেও অনৈতিক কারবারির সাথে যুক্ত। পার্টির নামে ধনাঢ্যদের সাথে সম্পর্ক করে এবং প্রতারণার ফাঁদে ফেলে টাকা আদায়ের নেশায় কতিপয় মডেল-নায়িকা এই চক্রে জড়িয়ে পড়েছে। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫