বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। ফাইল ছবি
বিশ্ব ফুটবলের সঙ্গে তালমিলিয়ে এগোতে পারেনি বাংলাদেশের ফুটবল। আর তাইতো দেখা যায়, ফুটবলে অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশ পিছিয়ে আমরা। এমনকি বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে দুর্বল অঞ্চল দক্ষিণ এশিয়াতেও আমরা ক্রমেই পেছনের দিকে ধাবিত হচ্ছি। এখন সাফ ফুটবলের শিরোপা জেতাও আমাদের জন্য অনেক দুরূহ হয়ে পড়েছে।
ফুটবলে আমাদের এগিয়ে যেতে হলে সর্বপ্রথম এই সাফ ফুটবলের শিরোপা জেতাটা জরুরি হয়ে পড়েছে। এবার সাফ ফুটবলের আসর বসবে ১ সেপ্টেম্বর মালদ্বীপে। ১৬ সেপ্টেম্বর শেষ হবে টুর্নামেন্ট। এবারের সাফ ফুটবলে অংশ নিচ্ছে না পাকিস্তান ও ভুটান। বাংলাদেশ ছাড়া আসরের বাকি চারটি অংশগ্রহণকারী দেশ হলো ভারত, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও নেপাল।
এবারের সাফ ফুটবলে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র শ্রীলঙ্কা ছাড়া বাকি তিন দেশই বিশ্ব ফুটবল র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে ওপরে অবস্থান করছে। ভারত রয়েছে ১০৫ নম্বরে, যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৮ নম্বরে। মালদ্বীপও বাংলাদেশের চেয়ে অনেক ভালো পজিশনে। তাদের র্যাংকিং পজিশন ১৫৮ নম্বরে। নেপালের মতো দেশ রয়েছে ১৬৮ নম্বরে। শুধু শ্রীলঙ্কার অবস্থান বাংলাদেশের তুলনায় খারাপ। তারা রয়েছে ২০৫ নম্বরে।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ২৭টি ম্যাচ খেলেছে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট, আন্তর্জাতিক প্রীতি লড়াইসহ নানা পর্যায়ে। এর মধ্যে বাংলাদেশ মাত্র ৩টি ম্যাচে জয়লাভ করেছে। দুই দল ড্র করেছে ১১টি ম্যাচে। আর বাকি ১৩টি ম্যাচই জিতেছে ভারত।
মালদ্বীপের কাছে বাংলাদেশ ৩টি ম্যাচে হেরেছে, জিতেছে ৪টিতে। দুই দলের মধ্যকার মোট ১২টি ম্যাচের মধ্যে ড্র হয়েছে বাকি ৫টি।
বাংলাদেশ ও নেপাল এখন পর্যন্ত ২৭টি ম্যাচে অংশ নিয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ জিতেছে ১৪টি ম্যাচ, হেরেছে ৮টিতে, আর ড্র করেছে ৫টি।
শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশ ১৮টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে। তাতে বাংলাদেশ ১২টি ও শ্রীলঙ্কা ৪টিতে জয়লাভ করেছে। দুই দলের মধ্যকার বাকি ২টি ম্যাচ ড্র হয়েছে।
বাংলাদেশ একমাত্র সাফ শিরোপা জিতেছে ২০০৩ সালে। ভারত মোট ৭ বার জিতেছে সাফ শিরোপা। ২০০৮ সালে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথ আয়োজনে এবং ২০১৮ সালে বাংলাদেশের মাটিতে মালদ্বীপ শিরোপা জিতেছে। শ্রীলঙ্কা ১৯৯৫ সালে নিজেদের মাটিতে সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ১৯৯৯ ও ২০০৫ সালে বাংলাদেশ রানার্সআপ হয়েছে। ওই দুই বারই বাংলাদেশ ফাইনালে হেরেছে ভারতের কাছে।
একসময় বাংলাদেশের ফুটবল ছিল দারুণ সম্ভাবনাময় ও জনপ্রিয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর ঢাকা লিগ অসম্ভব আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। ঢাকা লিগ ছাড়াও প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ ও আগা খান গোল্ডকাপ ছিল দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে দর্শকপ্রিয় লিগ। এই দুটি আসরে ভারত, পাকিস্তান, ইরান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের জাতীয় ও প্রধান প্রধান ক্লাব দল অংশগ্রহণ করত। মোটকথা, ঢাকা ছিল ফুটবল বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র। এইসব এখন অতীত স্মৃতি।
১৯৭৩ সালের ২৬ জুলাই বাংলাদেশ প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচে অংশ নেয় থাইল্যান্ডের সঙ্গে। ওই ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হয়েছিল। ১৯৮০ সালে এএফসি কাপে বাংলাদেশ কাতারের কাছে ০-৪ গোলে হারলেও ৪-১ গোলে আফগানিস্তানকে পরাজিত করে। ১৯৮৪ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ দুটি প্রীতি ম্যাচে অংশ নেয়। তাতে তারা ৫-০ গোলে মালদ্বীপকে এবং একই ব্যবধানে নেপালকে হারিয়ে দেয়। আর এখন বাংলাদেশ ওই মালদ্বীপ ও নেপালের সঙ্গে খেলতে গেলে হতাশা ছাড়া কিছুই অর্জন করতে পারে না। আর ওই অবস্থায় বাংলাদেশ কবে ফিরতে পারবে সেটাও অনিশ্চিত। ফলে সাফ ফুটবলের মতো সাধারণ মানের আসরের শিরোপা লাভও এখন স্বপ্নের মতো মনে হয়।