Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

সন্তানের বিচারের আকুতি নিয়ে অজয় রায়ের চিরবিদায়

Icon

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৪:১৫

সন্তানের বিচারের আকুতি নিয়ে অজয় রায়ের চিরবিদায়

অধ্যাপক ড. অজয় রায় ও ছেলে অভিজিৎ রায়।

সন্তানের খুনিদের বিচারের আকুতি নিয়ে চলে গেলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের বরেণ্য অধ্যাপক ড. অজয় রায় (৮৫)।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুর পৌনে ১টার দিকে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

তার মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।

প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে তাকে বারডেম হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।  জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত ২৫ নভেম্বর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। ধীরে ধীরে শ্বাসকষ্ট বাড়লে দুইদিন পর তাকে কৃত্রিম শ্বাস দেয়া শুরু হয়।

শিক্ষা আন্দোলন মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক অজয় রায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাতাদেরও একজন। তিনি নির্মূল কমিটির উপদেষ্টাও ছিলেন।

চার বছর আগে সন্ত্রাসীদের হাতে প্রাণ হারানো বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায়ের বাবা অজয় রায় গত ২৮ অক্টোবর আদালতে গিয়ে ছেলে হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। তার জীবনের শেষ চাওয়া ছিলো মৃত্যুর আগে সন্তানের খুনিদের শাস্তি দেখে যাওয়া।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে অধ্যাপক অজয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী নৃশংস গণহত্যা শুরু করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসস্থল ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। এরপর কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে যান এবং পরিবার রেখে ফিরে আসেন রণাঙ্গনে।

যুদ্ধের মধ্যেই কলকাতায় ডাক পড়ে অজয় রায়দের। সেখানে গিয়ে শতাধিক শিক্ষক মিলে গড়ে তোলেন ’বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি’। প্রয়াত শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এ আর মল্লিককে সভাপতি করে গঠিত প্রবাসী ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন অধ্যাপক অজয় রায়। শিক্ষকদের এই মোর্চা বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল।

ড. অজয় রায় ১৯৩৫ সালের ১ মার্চ দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুল ও কলেজজীবনে অজয় রায় পড়াশোনা করেছেন দিনাজপুরে। ১৯৫৭ সালে এমএসসি পাস করে যোগ দেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। তিনি ১৯৫৯ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডের লিডস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৭ সালে সেখানেই করেন পোস্ট ডক্টরেট। ১৯৬৭ সালে শিক্ষক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় যোগদান করেন এবং অবসর নেয়ার আগপর্যন্ত সেখানেই কর্মরত ছিলেন।

একুশে পদকপ্রাপ্ত পদার্থবিদ অজয় রায়ের দুটি গবেষণা নোবেল কমিটিতে আলোচিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অবসরে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির ইউজিসি অধ্যাপকও ছিলেন তিনি।

অধ্যাপক অজয় রায়ের লেখা বইয়ের মধ্যে ‘Concepts of Electricity and Magnetism’,  ‘বাঙালির আত্মপরিচয়: একটি পুরাবৃত্তিক ও নৃতাত্ত্বিক আলোচনা’, ’আদি বাঙালি: নৃতাত্ত্বিক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ’, ‘বিজ্ঞান ও দর্শন’, ’জড়ের সন্ধানে’ অন্যতম।

চার খণ্ডের পদার্থবিদ্যা এবং বাংলা একাডেমির বিজ্ঞান বিশ্বকোষ রয়েছে তার সম্পাদিত বইয়ের মধ্যে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫