সোনাগাজীতে ২৩ মুক্তিযোদ্ধার মানবেতর জীবনযাপন

প্রতিনিধি, ফেনী
প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৬:৪০

ফেনীর সোনাগাজীতে ৮ মাস সম্মানী ভাতা না পেয়ে ২৩ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ১১ বছর রাষ্ট্রকতৃক স্বীকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতাপ্রাপ্তির পরও উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক এখতিয়ার বর্হিভূতভাবে ২৩ মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতা স্থগিত করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, গত ১৮ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধোরা ফেনী জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ দাখিল করলে জেলা প্রশাসক কার্যালয় সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দ্রুত মতামত প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ, গত ১১ বছর আমরা রাষ্ট্রকতৃর্ক স্বীকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যাচাই-বাচাইয়ের মাধ্যেমে সনদ প্রাপ্ত হয়। ২০১৩ সালের মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রকর্তৃক গেজেটভুক্ত ভাতা নীতিমালা অনুযায়ী সম্মানী ভাতা পেয়ে আসছি। গত ১৯ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিপত্র নং- ৪,০০,০০০০,০০০,৯৯,০০১,১৮,২২০-এর মাধ্যেমে জারি হয় যে, যে সকল জেলা ও উপজেলায় বর্তমানে মন্ত্রণালয় কতৃর্ক নির্ধারিত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাচাই কমিটি রয়েছে এবং উক্ত যাচাই বাচাই কমিটির মাধ্যমে যারা গ’-তালিকাভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে (ভাতাপ্রাপ্তদের মধ্যে) চিহ্নিত হবেন (চাঁরটি শর্তের মাধ্যমে) তাদের জামুকা বরাবরে আপিল করতে হবে। এবং তাদের ভাতা আপাতত জামুকার সিদ্ধান্তের পূর্ব পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।
এছাড়াও জামুকার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাচাই নির্দেশিকা-২০১৬ এর নির্দেশনার বাহিরে এখতিয়ার বর্হিভূতভাবে যাচাই-বাচাইয়ের মাধ্যমে কোনো বীর মক্তিযোদ্ধার নাম উল্লেখিত মহানগর/উপজেলা যাচাই-বাচাই কমিটি কর্তৃক প্রদত্ত না মঞ্জুরকৃত আবেদনের তালিকা ও সিদ্ধান্ত প্রতিবেদন (গ-তালিকা) উল্লেখ করা হলে সূত্রোক্ত সম্পর্কে নির্দেশনা অনুযায়ী যদি তিনি গেজেটভুক্ত হন তাহলে সংশ্লিষ্ট মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা বন্দ হবে না।
অথচ সোনাগাজী উপজেলায় উপজেলা প্রশাসন এখতিয়ার বর্হিভূতভাবে বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়কর্তৃক নির্ধারিত কোনো মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাচাই কমিটি না থাকা সত্ত্বেও ২০১৩ সালের মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা নীতিমালার (গেজেটভুক্ত) অনুসরণ না করে (যাচাই-বাচাইয়ের মাধ্যমে কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম গ’ তালিকাভুক্ত না থাকলেও) বর্তমান পরিপত্রের যথাযথ অনুসরণ না করে অদৃশ্য কারণে রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত সনদপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধোদের সম্মানী ভাতা স্থগিত করে হয়রানি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রতিকারের জন্য আমরা জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করেছি। জেলা প্রশাসক উপজেলা প্রশাসনকে মতামত প্রেরণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধারা জানান, যারা অন্যায়ভাবে আমাদের সম্মানী ভাতা স্থাগিত করেছেন তারা কিভাবে যথাযথ মতামত দিবেন?
অন্যদিকে ভাতা স্থগিততের বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখায় যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, আপনাদের মন্ত্রণালয় কতৃর্ক নির্ধারীত মুক্তিযোদ্ধো যাচাই-বাচাই কমিটি না থাকলে আপনাদের সম্মানী ভাতা স্থগিত হবে না। এবং সে আলোকে মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখা সোনাগাজী উপজেলার সকল মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা পূর্বের ন্যায় বাজেট দিয়ে যাচ্ছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর ইসলাম জানান, উপজেলা সমাজ সেবা ভারপ্রাপ্ত অফিসার নাছির উদ্দিন আমাদেরকে সম্মানী ভাতা স্থগিতের বিষয়ে কিছু না বলে প্রথমে আপিল করতে বলে। আপিল করলে শুনানির কথা বলে সু-কৌশলে মৌখিক ভাতা স্থগিত করে দিয়ে অদৃশ্য কারণে আমাদের হয়রানি করছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের ভাতা বন্ধ হয়নি। উক্ত সম্মানী ভাতার টাকা না পেয়ে ২৩ বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিমল জানান, মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখা থেকে একেক সময় একেক রকমের পরিপত্র জারি করায় অফিসগুলোতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। আর এতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিভ্রান্তির মধ্যে রেখে এক শ্রেণীর সুবিধাভোগীরা সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে।
মুক্তিযোদ্ধা শাহাব উদ্দিন ও শামছুল হক জানান, সম্মানী ভাতার টাকা দিয়ে আমরা জীবনযাপন করে থাকি। আমার ছেলে মেয়েরা তাদের স্বল্প আয় দিয়ে আমাদের দায়িত্ব নিতে অক্ষম। আমরা অসুস্থ্য এবং এ সম্মানী ভাতা দিয়ে আমাদের চিকিৎসা ব্যয় মিটিয়ে থাকি। এ অবস্থায় সম্মানী ভাতা না পেয়ে আমাদের বেঁচে থাকা হুমকির মুখে পড়েছে।
এ বিষয়ে সোনাগাজী উপজেলা বর্তমান বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নাছির উদ্দিন জানান, উক্ত ২৩ জন মুক্তিযোদ্ধা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। এরা গত ১১ বছর ভাতা পেয়ে আসছেন। বর্তমানে ভাতা স্থগিতের বিষয়টি এদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। যেখানে সুনির্দিষ্ট কমিটি নেই, সেখানে পরিপত্রের আদেশ কার্যকর হয় কিভাবে?
তিনি বলেন, আমি বার বার বিষয়টি কতৃপর্ক্ষকে বলার পরও বিষয়টি শুনছেন না। এরা রাষ্ট্রকর্তৃক স্বীকৃত সম্মানী ভাতা পাবেন। উপজেলার অপর বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার শাহজাহান বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক।
এ বিষয়ে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত সমাজসেবা কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন জানান, মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রের কারণে বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা স্থগিত রাখা হয়েছে। যাচাই-বাচাই কমিটির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সোনাগাজী উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাচাই কমিটি হাইকোটের একটি রির্টের কারণে স্থগিত রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অজয় দেব জানান, জামুকার সিদ্ধান্ত ব্যতিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা প্রদান করা যাচ্ছে না।