এমপি শিমুলের স্ত্রীর নামে কানাডায় বাড়ি: জানতে চান হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২১:৪৬

হাইকোর্ট ও সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল
নাটোর-২ (সদর-নলডাঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের স্ত্রী শামীমা সুলতানা জান্নাতীর নামে কানাডায় বাড়ি আছে কিনা তার সুনির্দিষ্ট তথ্য জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। নাটোরের সানরাইজ সমাজ কল্যাণ সংস্থার সভাপতি মো. রেজাউল চৌধুরীকে এই তথ্য ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর কপি দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের কাছেও দাখিল করতে বলা হয়েছে।
রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালকুদার ও বিচারপতি এসএম মজিবুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশ দিয়েছেন।
দ্বৈত নাগরিকের তালিকায় নাটোর-২ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম শিমুল ও তার স্ত্রী শামীমা সুলতানা জান্নাতীর নাম না থাকার অভিযোগ করে সংশ্লিষ্ট মামলায় পক্ষভুক্ত হতে রেজাউল চৌধুরীর আবেদনে এ আদেশ দেন হাইকোর্ট। আদালত তার আবেদন নিষ্পত্তি আদেশ দেন। তারপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. আবদুর রাজ্জাক ও মো. বেলাল হোসেন। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিনউদ্দিন মানিক।
হাইকোর্ট গতবছর ২১ ডিসেম্বর এক আদেশে অর্থ পাচার ও দুর্নীতির মাধ্যমে যারা বিদেশে বাড়ি নির্মাণ করেছে অথবা কিনেছে, যেসব বাংলাদেশির দ্বৈত নাগরিকত্ব ও পাসপোর্ট আছে এবং যারা দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দেশে-বিদেশে আসা-যাওয়া করছেন, তাদের তালিকা চান।
এ নির্দেশে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) কার্যালয় থেকে রাষ্ট্রপক্ষকে গত মার্চে জানানো হয় যে, দুই দেশের নাগরিক হিসেবে ১৩ হাজার ৯৩১ বাংলাদেশির তথ্য পাওয়া গেছে। এরা বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের অন্য একটি দেশের নাগরিক। সে হিসেবে তারা দ্বৈত পাসপোর্টধারী। হাইকোর্টে দাখিলের জন্য পাঠানো প্রতিবেদন অনুযায়ী সর্বমোট ১০৪ দেশের নাগরিক তারা। এর মধ্যে আমেরিকারই ১০ হাজার ৭৭৪ জন। এই তথ্য আদালতকে জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। এ অবস্থায় ওই তালিকায় নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল ও তার স্ত্রীর নাম নেই অভিযোগ করে আদালতে মামলায় পক্ষভুক্ত হওয়ার আবেদন করেন রেজাউল চৌধুরী।
‘স্ত্রীর নামে কানাডায় বাড়ি কিনেছেন এমপি শিমুল’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়, কানাডার টরন্টো থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরত্বের নিরিবিলি শহর স্কারবোরো। শহরটির হেয়ারউড সড়কের ৭৩ নম্বর বাড়িটির মালিক একজন বাংলাদেশি নাগরিক। নাম শামীমা সুলতানা জান্নাতী। গত বছরের শুরুর দিকে প্রায় দুই মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার খরচ করে ডুপ্লেক্স ওই বাড়িটি কেনেন তিনি। বাংলাদেশি পাসপোর্ট অনুযায়ী তার পেশা 'গৃহবধূ' হলেও শামীমা কোনো সাধারণ নারী নন, নাটোরের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের স্ত্রী তিনি।
প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়- টরন্টোর ল্যান্ড রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল বলছে, ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি পাঁচ রুম, পাঁচ বাথ এবং তিনটি পার্কিংসহ ওই বাড়িটির মালিকানা বদল হয়। সঞ্চিত এবং সুধীর মদন নামের দুই ব্যক্তির কাছ থেকে ১৪ লাখ ৫৬ হাজার কানাডিয়ান ডলারে বাড়িটি কেনেন শামীমা সুলতানা জান্নাতী। ওই দিনই দুই লাখ ৭০ হাজার ডলার ট্যাক্সও পরিশোধ করেন তিনি। সব মিলিয়ে বনেদি বাড়িটি কিনতে তার খরচ হয় প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়- সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল এবং তার স্ত্রী শামীমা সুলতানা জান্নাতীর সব সম্পদের বিবরণসহ ঘোষণা আছে দশম এবং একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায়। সেই হলফনামা বিশ্নেষণে দেখা যায়, ২০১৩ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য শিমুল উল্লেখ করেছেন, নগদ ১১ লাখ টাকাসহ তার এবং গৃহবধূ স্ত্রীর নামে সাকুল্যে ৫১ লাখ ৩৭ হাজার টাকার সম্পদ রয়েছে। আর ২০১৮ সালের বিবরণীতে দুইজনের সম্পদের মূল্য দেখানো হয় ছয় কোটি ৫৬ লাখ টাকা। মাত্র পাঁচ বছরে সম্পদ বৃদ্ধির এই হার প্রায় ১৩ গুণ।
সরকারি খাতায় ব্যক্তিগত আয়-ব্যয়ের হিসাবে শামীমার সম্পদের এমন ঊর্ধ্বগতির সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যাখ্যা যেমন নেই, তেমনি মোট সম্পদের প্রায় দ্বিগুণ মূল্যে কেনা কানাডার বাড়িটিরও কোনো উল্লেখ কোথাও নেই বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়।