
মৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সেহেরীন মাহবুব সাদিয়া
চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী সোমবার রাত ১০টার দিকে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় পা পিছলে পাশের একটি নালায় পড়ে যান। এর প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর তার মরদেহ উদ্ধার করেছে চট্টগ্রাম দমকল বাহিনী। সবজি ব্যবসায়ী সালেহ আহমদের পর সেহেরীন মাহবুব সাদিয়ার মৃত্যুতেও দায় নিতে চাইছে না সিটি করপোরেশন কিংবা সিডিএ। সরকারি দুটি সংস্থাই একে অন্যকে দোষ দিচ্ছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বলছে, দুদিকে ফুটপাত করলেও খালের মুখটি অরক্ষিত রেখেছে সিডিএ। তাই এর দায় সিডিএর।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ বলছে, খালের মালিকানা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের। তাই খালের মুখে সুরক্ষা নিশ্চিতের দায়িত্বও তাদের।
নালা-খালে একের পর এক মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ নগরবাসী। তারা বলছেন, দায় এড়ানোর এই প্রবণতা প্রমাণ করে সেবা সংস্থার মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো স্বাচ্ছন্দ্যের পরিবর্তে নগরবাসীর ‘মৃত্যুফাঁদে’ পরিণত হয়েছে।
চট্টগ্রামের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের আগ্রাবাদ শাখার সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ এনামুল হক বলছেন, তিনি নিজে ঐ উদ্ধার অভিযানে ছিলেন। মেয়েটি রাতে হেঁটে ওই নালার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ পা পিছলে পড়ে যান। ফায়ার সার্ভিস প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা উদ্ধার অভিযান চালিয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করে।
চট্টগ্রামে অগাস্ট মাসের ২৫ তারিখে মুরাদপুরে আরেকজন ব্যক্তি নালার মধ্যে পড়ে যান। এক মাসের বেশি সময় পার হতে চলেছে কিন্তু এখনো ওই ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া যায়নি।
দমকল বাহিনী বলছে তারা হাল ছেড়ে দেন নি। এখন একটি টহল টিম কাজ করছে। এছাড়া আশেপাশের এলাকার লোকজনকে জানানো হয়েছে তারা যদি কোন আলামত দেখেন তাহলে কর্তৃপক্ষকে জানানোর জন্য।
এদিকে জুন মাসে আরো দুজন ব্যক্তি নালায় পড়ে যান। তাদেরকে পরে উদ্ধার করা হয়। এই তিনটা উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন মোহাম্মদ এনামুল হক। তিনি বলছিলেন, শহরের মধ্যে এই শাখা নালাগুলো বেশ প্রশস্ত এবং উন্মুক্ত। এই নালাগুলো রাস্তা থেকে বেশ গভীর, বর্জ্যে ঠাসা। একই সাথে এগুলো গিয়ে মিশেছে মূল নালার সাথে, যা প্রধান সড়কের নিচে। সুতরাং এখানে কেউ পড়লে বড় দুর্ঘটনার শঙ্কা থেকে যায়।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামে যখন বৃষ্টি হয় তখন রাস্তা এবং নালাগুলো আলাদা করা যায় না। ওই তিনটি ঘটনার সময় প্রচণ্ড বৃষ্টি ছিলো এবং পানির স্রোত ছিলো। উদ্ধারকাজে যারা ছিলেন তারা বেশিক্ষণ সেখানে থাকতে পারেন নি। কারণ এতে করে তাদের ঝুঁকি তৈরি হতো।
চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নতুন কিছু নয়। একটু বৃষ্টি হলেই শহরের প্রধান প্রধান সড়কে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। আগ্রাবাদের একজন বাসিন্দা ফারজানা ইয়াসমিন ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, এই ড্রেনগুলো এখন মৃত্যুফাঁদ হয়ে উঠেছে। আমরা রিকশায় থাকি কিম্বা হেঁটে যাই - যেভাবেই রাস্তা দিয়ে যাই না কেন অন্যান্য দুর্ঘটনার পাশাপাশি এখন এই ড্রেনে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও বিরাট ভয়ের কারণ হয়ে উঠেছে।
শহরের আরেকজন বাসিন্দা নূপুর মন্ডল বলেন, গতকালের ঘটনা খুব ভয়াবহ। একবার পড়লে নিমিষে তলিয়ে যাচ্ছে মানুষ। যদি ড্রেনগুলো ঢাকা থাকে তাহলে হয়ত দুর্ঘটনা ঠেকানো যেত।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহীদুল আলম বলছেন, শহরের মধ্যে এই ড্রেনগুলোর বর্জ্য পরিষ্কার, জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য প্রকল্প চালু আছে। এই কাজগুলো শেষ হলে ড্রেন বা নালাগুলো ঢেকে দেয়ার কাজ করা হবে পর্যায়ক্রমে।
তবে শহরে এমন ঝুঁকিপূর্ণ কতগুলো নালা আছে তার কোনো হিসেব দিতে পারেন নি তিনি।