
বিদেশি চ্যানেল
১ অক্টোবর থেকে দেখা যাচ্ছে না বিদেশি চ্যানেল। বাংলাদেশে ভারতীয় যেসব চ্যানেলের নাটক-সিরিয়ালে পারিবারিক বিরোধ, সামাজিক কূটচাল, স্বামী-স্ত্রী, বউ-শাশুড়ির কলহ, অশ্লীলতা প্রদর্শন করতো সেসব চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধের দাবি দীর্ঘ দিনের। আমাদের সামাজিক বন্ধন, পারিবারিক সম্পর্ক-সম্প্রীতি, শ্রদ্ধা-ভালবাসা নষ্টের মূলে দায়ী করা হয় এসব চ্যানেলের অনুষ্ঠানকে। দেরিতে হলেও এসব চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।
খেলাধুলা, সংবাদ, কার্টুন, জিওগ্রাফির মতো চ্যানেলও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই বন্ধের উদ্যোগকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধুবাদ জানাচ্ছেন নেটিজেনরা। অন্যদিকে সংবাদ, খেলা ও কার্টুন চ্যানেলগুলো বন্ধ করে দেয়ায় ক্ষুব্ধ অনেক দর্শক।
দর্শকদের অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভারতীয় নাটক-সিরিয়ালের চ্যানেল আর বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা কিংবা খেলার চ্যানেলগুলো এক নয়। এদেশে প্রচুর দর্শক আছেন যারা আন্তর্জাতিক খবর, খেলাধুলা দেখে থাকেন এসব চ্যানেলে। যা কোনভাবেই সমাজ কিংবা পরিবারের জন্য ক্ষতিকর নয়। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তোলেন দর্শকরা।
শিবলি নামে একজন লিখেছেন, ভারতীয় টিভি সিরিয়ালগুলোর কারণে বাংলাদেশের পারিবারিক বন্ধন নষ্ট হয়েছে, স্বামী-স্ত্রী, বউ-শাশুড়িদের মধ্যে সন্দেহ, অবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে। অনেক পরিবার ভেঙে গেছে, স্বামী-স্ত্রীর সংসার ভেঙেছে। এসব চ্যানেল বন্ধ করে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। একই সাথে সংবাদভিত্তিক চ্যানেল বন্ধের প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এদিকে সরকার কোন চ্যানেল বন্ধ করেনি জানিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সরকার কোনো চ্যানেল বন্ধ করেনি। বিজ্ঞাপনমুক্তভাবে যেহেতু তারা ‘ক্লিন ফিড’ দিচ্ছে না, তাই এসব চ্যানেলের যারা বাংলাদেশে অপারেটর, তারাই সম্প্রচার বন্ধ করেছেন। বাংলাদেশে বিজ্ঞাপনসহ অনুষ্ঠান প্রচার করে-এমন সব বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার বাংলাদেশে বন্ধ করে দিয়েছে কেবল অপারেটররা।
বিজ্ঞাপনসহ বিদেশি চ্যানেল বাংলাদেশে সম্প্রচার করা যাবে না- তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এসব চ্যানেলের দেশিয় পরিবেশকদের। বাংলাদেশে বিদেশি টিভি চ্যানেল সম্প্রচার সংক্রান্ত আইনে বলা আছে, যেসব বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেখানো হয়, সেসব চ্যানেল বাংলাদেশে প্রদর্শন করা যাবে না। সরকার বলছে, যাদের মাধ্যমে দর্শক বিদেশি চ্যানেল দেখতে পাচ্ছেন, তারা ওই বিদেশি চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপন ছাড়া সম্প্রচার করবে। বিজ্ঞাপন ছাড়া বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচারের ক্ষেত্রে সরকারের কিছু করার নেই। সরকারের নির্দেশনা যারা মানবে না তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণাও আগেই ছিলো। শুক্রবার থেকে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠে কাজ করছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, কেউ যদি উদ্দেশ্যমূলকভাবে জনগণকে বিক্ষুব্ধ করার জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত আসা চ্যানেল বন্ধ রাখেন, তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, বিজ্ঞাপনসহ অন্যান্য আয়োজন চালানোর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ হয় না। সেটি থেকে দেশ বঞ্চিত হয়, মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রি বঞ্চিত হয়, সাংবাদিকেরাও বঞ্চিত হন। সে কারণে আমরা যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি, সেটাকে টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন, সম্প্রচার জার্নালিস্ট ফোরামসহ সবাই অভিনন্দন জানিয়েছেন।
মন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করব, বিদেশি চ্যানেলগুলো শিগগিরই বিজ্ঞাপনমুক্তভাবে বাংলাদেশে ‘ক্লিন ফিড’ পাঠাবে। তাহলে এখানে সম্প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকবে না। বিবিসি, সিএনএনসহ বহু চ্যানেল আছে যেগুলো বাংলাদেশে বিজ্ঞাপনবিহীন প্রদর্শিত হচ্ছে।
গণমাধ্যম বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন ছাড়া অনুষ্ঠান বা ক্লিন ফিডের যে দাবি জানাচ্ছে সেটা পেতে হলে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাবের শিক্ষক প্রফেসর সুমন রহমান বলেন, বিজ্ঞাপনগুলো বিদেশি চ্যানেল না পেলে সেটা যে লোকাল টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে চলে আসবে বিষয়টা এতো সহজ না। কারণ লোকাল টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিকে সক্ষমতা থাকতে হবে।
দর্শকরা বলছেন, এই সমস্যার সমাধান করবে কে? টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপনমুক্ত হবেই বা কিভাবে? সরকার বলছে তাদের করণীয় কিছু নেই। বিজ্ঞাপনসহ চ্যানেলের সম্প্রচার দেশের জন্য ক্ষতির কারণ হচ্ছে।
অন্যদিকে ক্যাবল অপারেটররা বলছেন, বিজ্ঞাপন ছাড়া (ক্লিন ফিড) চ্যানেলের সম্প্রচার করা তাদের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ক্লিন ফিডের মানে হচ্ছে অনুষ্ঠানের ফাঁকে কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন দেখানো যাবে না। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপালেও ক্লিন ফিড বা বিজ্ঞাপন ছাড়া বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার হয়।
ক্যাবল অপারেটরদের এসোসিয়েশন বলছে, সরকারের পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত চ্যানেলগুলো বন্ধ থাকবে। এসোসিয়েশনের
সভাপতি এসএম আনোয়ার পারভেজ বলেন, ফলে চ্যানেল ক্লিন ফিড করে চালানো ক্যাবল অপারেটরদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের দিক থেকে যেহেতু করার কিছু নেই, তাই সরকার পরবর্তীতে যেটা করতে বলবে, সেটাই করা হবে। একইসাথে তিনি বলেন, ৫ লাখ মানুষ এ খাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। সরকারকে এই দিকটাও বিবেচনা করা দরকার।