Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

মামলাবাজ চক্র: আলোচনায় রাজারবাগ পীর

Icon

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২১, ২০:৩১

মামলাবাজ চক্র: আলোচনায় রাজারবাগ পীর

রাজারবাগ দরবার শরীফ। ছবি: সংগৃহীত

দেশে মিথ্যা মামলা, ভুয়া ওয়ারেন্ট এবং ভুয়া জামিনের পেশাদার চক্র গড়ে উঠেছে৷ আর এইসব মামলায় হয়রানি ও নি:স্ব হচ্ছেন সাধারণ মানুষ৷ সম্প্রতি ‘মিথ্যা ও হয়রানিমূলক’ মামলার জন্য আলোচনায় এসেছেন ঢাকার রাজারবাগ এলাকার পীর দিল্লুর রহমান৷

গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডির তদন্তে জানা যায়, পীর দিল্লুর রহমান বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৮০০টি ভুয়া মামলা করেছেন৷ এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৪৯টি মামলা দেয়ার তথ্যও পেয়েছে তদন্ত কর্মকর্তারা৷ আর এইসব মামলার পেছনে আছে সাত হাজার একর জমি ও রাবার বাগান দখল৷ পীরের পক্ষে তার অনুগতরা এসব মামলা দায়ের করেছেন বলে জানা গেছে ৷

বিষয়টি দেশের সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে৷ মামলাগুলো স্থগিত করে পীরের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত৷ শুধু তাই নয়, এর আগে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন রাজারবাগ পীরের সব আস্তানা বন্ধের যে সুপারিশ করেছে, তা বাস্তবায়নের জন্যও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত৷

তবে রাজারবাগ পীরের পক্ষে এক বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ৮০০ দূরের কথা, তিনি কারুর বিরুদ্ধে একটি মামলাও করেননি৷ কিন্তু যারা মামলা করেছেন, তারা কোনো না কোনোভাবে পীরের লোক৷ পীর এখানে কৌশল অবলম্বন করেছেন৷

যারা মামলার শিকার হয়েছেন তাদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির জানান, ‘সিআইডির তদন্তে দেখা গেছে, যারা মামলা করেছেন তারা পীরের মুরিদ, আইনজীবী, কর্মচারী, বাবুর্চি৷ যারা মামলা করেছেন তারা কেউ বাদীদের চেনেন না৷ মামলার উদ্দেশ্য হলো দেশের বিভিন্ন এলাকায় পীরের অবৈধ জমি দখল করা অথবা দখল করা জমি নিজের আয়ত্তে রাখা৷’

তিনি বলেন, ‘আদালত এখন তিন ধরনের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন৷  পীরের পক্ষে করা সব মামলা একযোগে সিআইডি তদন্ত করে দেখবে৷ তারপর মামলাগুলোর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা হবে৷ পীরের কেনো জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা তদন্ত করবে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট৷ তাছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনকে পীরের সম্পদের তদন্ত করতে বলা হয়েছে৷’

তবে রাজারবাগের পীরের এসব মামলাই দেশের একমাত্র ঘটনা নয়৷ দেশে মিথ্যা মামলার একাধিক চক্র আছে বলে জানা গেছে৷ শুধু তাই নয় ভুয়া ওয়রেন্ট ও জামিনেরও চক্র আছে৷

ভুয়া ওয়ারেন্টে অনেক লোকেরই হাজতবাসের ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে৷ গত বছর হাইকোর্ট এসকল চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছিল৷ কারণ এই ধরনের চক্রে আদালতের এক শ্রেণির কর্মচারি ও আইনজীবীও জড়িত৷

আইনজীবী শিশির মনির জানান, ‘হাইকোর্টে এ নিয়ে একজন আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা চলছে৷ আর মূল কথা হলো আমাদের বিচার ব্যবস্থার যে সিস্টেম তাতে মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করা সহজ৷ দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলার পর মামলা দিয়ে জীবন অতিষ্ট করে তোলা হয়৷ পঞ্চগড়ে মামলায় জামিন পেলে, কক্সবাজারে মামলা হয়, সেখানে জামিন পেলে ঢাকায় মামলা হয়৷ এভাবে চলতে থাকে৷’

আর বাংলাদেশের আইনেই মিথ্যা মামলার করার ফাঁক আছে বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু৷ তিনি জানান, ‘১৯৪৪ সালের পুলিশ প্রবিধানেই বলা আছে সত্য বা মিথ্যা যে অভিযোগই করা হোক না কেন তা মামলা হিসেবে থানাকে রেকর্ড করতে হবে৷ আর কোনো মামলা মিথ্যা প্রমাণের আগে তাকে মিথ্যা বলার সুযোগ নাই৷’

অবশ্য আদালতের রায়ের আগে তদন্ত পর্যায়েও মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হতে পারে৷ তবে তা হতে হবে পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে৷ তদন্ত পর্যায়ে যদি পুলিশ দেখে মামলা মিথ্যা তাহলে তদন্ত কর্মকর্তা আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেবেন৷ আর তখন ম্যাজিস্ট্রেট চাইলে বাদীকে শোকজ করে তাৎক্ষণিকভাবে সিআরপিসির (দণ্ডবিধির) ২৫০ ধারায় ছয় মাসের কারাদণ্ড দিতে পারেন৷ আবার মামলার রায়ে যদি আসামি নির্দোষ প্রমাণিত হন তখনো বাদীর বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিতে পারেন৷

তিনি বলেন, ‘তবে মিথ্যা মামলার এই প্রতিকার পাওয়ার তেমন কোনো নজির নাই৷ এটা অনেকটাই আদালতের ওপর নির্ভর করে৷’

এদিকে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মিথ্যা মামলার ব্যাপারে আলাদাভাবে প্রতিকারের ব্যবস্থা আছে৷ মামলা মিথ্যা প্রমাণ হলে সাত বছরের কারাদণ্ডের বিধান আছে৷


Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫