Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

রাজাকারের তালিকায় ব্যাপক অসঙ্গতি

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ২০:৫২

রাজাকারের তালিকায় ব্যাপক অসঙ্গতি

মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে রাজাকার বা স্বাধীনতাবিরোধীদের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তাতে ব্যাপক অসঙ্গতি দেখা গেছে। একদিকে যেমন চিহ্নিত রাজাকারদের নাম নেই তেমনি আবার যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এবং এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তাদের নামও রাজাকারের তালিকায় উল্লেখ রয়েছে। এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ক্ষোভ এবং অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।

প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় রাজশাহী বিভাগের ৮৯ নম্বর তালিকায় (ক্রমিক নম্বর ৬০৬) নাম রয়েছে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপুসহ ৫ জনের নাম। অথচ এই পাঁচজন এবং তাদের পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন স্বাধীনতার পক্ষের মানুষ। 

আবার তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অ্যাডভোকেট মহসিন আলীর নামও রয়েছে সেই তালিকায়। রাজশাহী বিভাগের রাজাকারদের তালিকায় যে নামগুলো রয়েছে ৮৯ নম্বর তালিকায় থাকা ৫ জনের মধ্যে অপর দুজন হলেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবদুর রউফ ও পুলিশ কর্মকর্তা এসএস আবু তালেব।

রাজাকারের তালিকায় এসব ব্যক্তিদের নাম দেখে এটি লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অ্যাডভোকেট আবদুস সালামের পরিবারের সদস্য আরিফুল হক কুমার।

এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর তালিকায় নিজের নাম দেখে বিস্মিত-হতবাক হয়েছেন। এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় যে কাজ করেছে তা সকলের জন্য বিস্ময়কর, লজ্জাজনক। আর এর মাধ্যমে প্রমাণ হচ্ছে-মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম যথাযথভাবে হচ্ছে না। এর পরিণতিতে জিনিসটি এইভাবে হয়েছে। 

তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তালিকায় আসা নামটি তাকে মিন করেই দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় দেশের নাগরিক হিসেবে আমি লজ্জিত। মন্ত্রণালয় তাচ্ছিলের সঙ্গে এই কাজটি করেছে। এর দায়ভার তাদের নিতে হবে। 

তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রতিটি আন্দোলনে যার ভুমিকা ছিল। তাকে কারা কেন এই তালিকায় নিয়ে এসেছে এর তদন্ত করে জাতির সামনে প্রকাশ করতে হবে।

অন্যদিকে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী বাসদ নেত্রী ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তীর বাবা অ্যাডভোকেট তপন কুমার চক্রবর্তী একজন গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা। ক্রমিক নম্বর ১১২, পৃষ্ঠা নম্বর ৪১১৩। তিনি নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পেয়ে থাকেন। সদ্যঘোষিত রাজাকারের তালিকায় তিনি এখন ৬৩ নম্বর রাজাকার। 

নিজের ফেসবুক পেজে দেয়া এক পোস্টে এ ঘটনাকে নিজের ‘রাজনীতির খেসারত’ আখ্যা দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ বরিশালের সদস্য সচিব এই মুক্তিযোদ্ধা কন্যা।

তিনি লিখেন, ‘মানুষের জন্য নিঃস্বার্থ কাজ করার পুরস্কার পেলাম আজ। ধন্যবাদ আওয়ামী লীগকে। সদ্য প্রকাশিত রাজাকারদের গেজেটে আমার বাবা এবং ঠাকুমার নাম প্রকাশিত হয়েছে। আমার বাবা এড. তপন কুমার চক্রবর্তী একজন গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা, ক্রমিক নং ১১২ পৃষ্ঠা ৪১১৩। তিনি নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পেয়ে থাকেন। আজ রাজাকারের তালিকায় তিনি ৬৩ নাম্বার রাজাকার!’

মরহুম মো. মজিবুল হক। মৃত্যুর পরও স্থানীয়দের কাছে ‘নয়া ভাই’ নামে পরিচিত তিনি। বঙ্গবন্ধুর সহপাঠী ও বন্ধু ছিলেন মজিবুল হক। দীর্ঘ ৪০ বছর ছিলেন বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ছিলেন মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের সভাপতিও। এরপরও সদ্য প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় নাম এসেছে তার। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। 

পারিবারিক সূত্র ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানিয়েছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন মো. মজিবুল হক নয়া ভাই। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে পড়াশোনা করেছেন তিনি। বেকার হোস্টেলে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে থেকেছেন মজিবুল হক। মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ গঠন থেকে শুরু করে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত পাথরঘাটা সংগঠনের সভাপতি ছিলেন নয়া ভাই। পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের টানা ৪০ বছর সভাপতি ছিলেন তিনি, ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন।

এ বিষয়ে মজিবুল হকের স্ত্রী নুরহাজান বেগম (৮৭) বলেন, আমার স্বামী ২০০৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর মারা গেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। সংগ্রাম পরিষদ পরিচালনা করেছেন। যুদ্ধের সময় আমাদের বাড়িতে আশ্রয় নেয়া মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিকামী মানুষের ভরণ-পোষণ দিয়েছেন। আজ সেই মানুষটা কি করে রাজাকার হয়? এর বিচার হবে। এর বিচার করবেন শেখ হাসিনা।

নুরহাজান বেগম বলেন, বঙ্গবন্ধু আমার স্বামীর কাঁধে হাত দিয়ে হাঁটতেন। শেখ হাসিনা আমার স্বামীর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতেন। দূরে বসলে তাকে কাছে টেনে বসাতেন শেখ হাসিনা। সেই মানুষটা কি করে রাজাকার হলো, তা আমি জানতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমি এর বিচার চাই।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫