
জুমক্ষেতে ধান কাটায় ব্যস্ত চাষিরা। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল
বান্দরবানে সবুজ পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে এখন সোনালি রঙের পাকা জুম ধান দেখা যাচ্ছে। এটি কাটার ধুম পড়েছে সবখানে। সম্পূর্ণ প্রকৃতির ওপর নির্ভর সনাতন পদ্ধতির চাষে এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।
পাহাড়ি জমিতে মার্চে জঙ্গল পুড়িয়ে, এপ্রিলে রোপণ করা ধান সেপ্টেম্বরে পেকে ওঠে। চার মাস উদয়াস্ত পরিশ্রমের পর এখন জুমক্ষেতে ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। নতুন ধান ঘরে ওঠার এই সময়ে আনন্দের শেষ নেই জুমিয়া পরিবারে। এরপর কেউ কেউ নিজেদের মতো পালন করেন নবান্নের উৎসবও।
বান্দরবান সদর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে চিম্বুক পাহাড়ে যামিনী পাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, একটি জুমক্ষেতে জুম ধান কাটছিলেন চারজন ম্রো নারী। সবার পিঠে রয়েছে কাটা ধান জমা করার একটি করে থুরুং (ঝুড়ি)।
ধান কাটতে কাটতে জুমচাষি চামপয় ম্রো বলেন, তিন হাঁড়ি (এক হাঁড়ি ১০ কেজি) বীজ ধান লাগানো হয়েছে। গত বছরের তুলনায় ফলন ভালো হয়েছে। আবহাওয়া ভালো ছিল। ছেলে-মেয়ে নিয়ে ছয়জনের সংসারে বছর খোরাকি ধান পাওয়া যাবে।
তিনি আরও জানান, জুমে শুধু ধান পাওয়া যায় না। তরকারি ও বিভিন্ন সবজি পাওয়া যায়। বিশেষ করে ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, মারফা, মরিচ, আখ, তুলা, তিল, ঢেঁড়স, বেগুন আরও বিভিন্ন ফসল পাওয়া যায়। একটা জুমক্ষেত থাকলে বাজার থেকে তেল আর লবণ ছাড়া অন্য কিছু কিনতে হয় না।
জুমচাষি লেংপাউ ম্রো ও তাইলেং ম্রো বলেন, এ বছর ফলন নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। তবে চিম্বুক পাহাড়ে আগে যে পরিমাণে জুমচাষ হতো, এখন তা কমে আসছে। আম, পেঁপে ও বিভিন্ন জাতের কুলসহ লাভজনক ফসলের বাগান করছেন অনেকেই। তবে জুমক্ষেতে একসঙ্গে অনেক ফসল পাওয়া যায় বলে কেউ কেউ এখনো জুমচাষ করেন।
বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ও জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা এম এম শাহনেওয়াজ জানান, জুমচাষ প্রাকৃতিক আবহাওয়া ও জলবায়ুর ওপর নির্ভরশীল। এপ্রিলে এক পশলা বৃষ্টির পর জুমতে প্রস্তুত করা হয় এবং বিভিন্ন বীজ বপন করা শুরু করেন জুমিয়ারা। এ বছর দেরিতে বৃষ্টিপাত হলেও, নিয়মিত ব্যবধানে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে জুমের ফলন এবং বিভিন্ন ফসল ভালো হয়েছে। এখন পুরোদমে জুমের ধান কাটা চলছে। পাশাপাশি আনুষঙ্গিক আরও বিভিন্ন ফসল সংগ্রহ করা হচ্ছে।