Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

আয় বৈষম্যের ভোগান্তিতে ঢাকা

Icon

এ আর সুমন

প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:২০

আয় বৈষম্যের ভোগান্তিতে ঢাকা

রাজধানী ঢাকায় আয় বৈষম্য দিনকে দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। বর্তমানে ঢাকায় ১০ শতাংশ ধনী লোকের হাতে রয়েছে মোট আয়ের ৪১.১৯ শতাংশ, আর সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ গরিব মানুষের হাতে মাত্র ০.৯৬ শতাংশ। 

ঢাকার ৫০ শতাংশ মানুষের হাতে রয়েছে মোট আয়ের ১৭.৯৮ শতাংশ। ধনী-গরিবের মাঝে আয়ের এ বৈষম্য নগরে প্রভাব ফেলছে। এই বৈষম্য ঢাকার অধিবাসীদের ঠেলে দিচ্ছে বৃহত্তর শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার দিকে। 

বলা হচ্ছে, রাজধানীর ৩.৫ শতাংশ মানুষ এখনো তিন বেলা খেতে পায় না। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। 

বিআইডিএস তাদের বার্ষিক গবেষণা সম্মেলন-২০২০ এর সমাপনী অধিবেশনে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। গবেষণা উপাত্ত উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান গবেষক জুলফিকার আলী। 

তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের জুন-জুলাই মাসে ঢাকার ১২ হাজার ৪৬৮ জন মানুষের ওপর চালানো এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকার ১০ শতাংশ ধনীর আয় ঢাকাবাসীর মোট আয়ের ৪১ শতাংশ। এছাড়া একেবারে গরিব ১০ শতাংশ মানুষের আয় ঢাকাবাসীর মোট আয়ের ১ শতাংশেরও কম। ফলে এখানকার সাড়ে ৩ শতাংশ মানুষ তিন বেলা খেতেও পাচ্ছে না।’ 

গবেষণা প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিশাল আয়ের বৈষম্যের কারণে ঢাকার ৭১ শতাংশ মানুষ বিষন্নতায় ভুগছেন, ৬৮ শতাংশ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন। আয় বৈষম্য প্রতিনিয়তই প্রকট আকার ধারণ করছে, যা নিয়ে বিশেষজ্ঞরাও শঙ্কিত। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের এক তৃতীয়াংশ মানুষ এখন শহরে বাস করেন। যার সংখ্যা পাঁচ কোটি। এর মধ্যে ৩৬ শতাংশ মানুষ ঢাকা শহরে বসবাস করেন। 

ধনী-গরিবের এই বৈষম্য কেবল বাংলাদেশে নয়, বিশ্বজুড়েই বিদ্যমান। বিশ্বের সম্পত্তি গুটিকয়েক মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত হওয়ার বিষয়টি সামনে এনেছে দাতব্য সংস্থা অক্সফাম। 

সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি জানায়, বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের (৩৮০ কোটি) মোট সম্পত্তির সমান সম্পদ রয়েছে বিশ্বের ২৬ শীর্ষ ধনীর কাছে। বিশ্বের ধনকুবেররা আরো ধনী হয়েছে, দরিদ্ররা হয়েছে দরিদ্রতর। সম্পত্তির এই বিশাল ব্যবধানের কারণে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। 

যদি শীর্ষ ধনীদের আয়ের ১ শতাংশ সম্পদ কর আরোপ করা হয়, তাহলে বছরে ৪১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার অর্থ আসবে। এই অর্থ দিয়ে স্কুলে যাচ্ছে না এমন শিশুদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে ৩০ লাখ মৃত্যু এড়ানো সম্ভব। 

অক্সফামের মতে, বিশ্বের ধনকুবেরদের সম্পত্তি বৃদ্ধির হার ১২ শতাংশ। বিপরীতে বিশ্বের দরিদ্র অর্ধেক মানুষের সম্পত্তি কমেছে ১১ শতাংশ। এর ফলে বিশ্বের অর্ধেক মানুষের সমান সম্পত্তি জমা হয়েছে বিলিওনিয়ারদের হাতে। 

ওই প্রতিবেদনে আরো উঠে এসেছে, আর্থিক মন্দার পর গত ১০ বছরের বিলিওনিয়ারদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। 

অক্সফামের প্রচার ও নীতিবিষয়ক পরিচালক ম্যাথিউ স্পেনসার বলেন, ‘চরম দারিদ্র্যে বাস করা মানুষের সংখ্যা কমে আসা গত শতকের শেষার্ধের বড় অর্জন। কিন্তু ক্রমবর্ধমান অসমতা ভবিষ্যতে এই খাতের অগ্রগতিকে জটিল করে তুলছে। আমাদের অর্থনীতি যে পথে চলছে, তাতে সম্পত্তি ক্রমবর্ধমান ও অন্যায্যভাবে কয়েকজনের কাছে জমা হচ্ছে।’  

তিনি বলেন, ‘সবাইকে বেঁচে থাকার সুযোগ দেয়ার পর্যাপ্ত সম্পদ রয়েছে পৃথিবীতে। সরকারগুলোর উচিত সম্পদ ও ব্যবসায়ীদের কর বাড়ানো। যাতে করে তারা জনগণের জীবন পরিবর্তনের জন্য উন্নতমানের সরকারি সেবা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখতে পারে।’

বিআইডিএসের ‘আ গ্লিম্পসেস ইনটু দ্য লাইফস অব দ্য পিপল ইন ঢাকা সিটি’ শীর্ষক আরেক গবেষণায় দেখা যায়, গত ১০ বছরে বরিশাল বিভাগ থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ ঢাকায় এসেছে, যা প্রায় ২১ শতাংশ। এরপর রয়েছে ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, ভোলা। সবচেয়ে কম মানুষ এসেছে শরীয়তপুর থেকে। ঢাকায় এখন দুই কোটি মানুষ বসবাস করছে। তবে গত পাঁচ বছরে ঢাকায় আসা মানুষদের বেশির ভাগ এসেছে কিশোরগঞ্জ, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও ভোলা থেকে। 

গবেষণায় আরো জানা যায়, ঢাকায় মানুষ সবচেয়ে বেশি জ্বরে আক্রান্ত হন। ক্রনিক ডিজিসের (দীর্ঘমেয়াদি রোগ) মধ্যে রয়েছে ডায়বেটিস। মানুষজন রোগের চিকিৎসার জন্য মাসে ব্যয় করছেন গড়ে সাত হাজার ৪১৭ টাকা। ঢাকা শহরের ৯১টি ওয়ার্ডের মধ্যে দৈবচয়ন (র‌্যানডম স্যাম্পলিং) পদ্ধতিতে ৩১ ওয়ার্ডকে এই গবেষণায় ব্যবহার করা হয়েছে। ঢাকার ১০০টি খানা সাক্ষাৎকার ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা শহরের ৭২ ভাগের বেশি মানুষ ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। শহরের প্রধান সমস্যা হচ্ছে যানজট। এর পরেই রয়েছে যথাক্রমে বায়ুদূষণ, বিশুদ্ধ পানি, রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, বিদ্যুতের লোডশেডিং, ধারাবাহিক গ্যাস সরবরাহের বিঘ্ন, নিরাপত্তা ও যৌন হয়রানি। 

বায়ুদূষণের কারণে ঢাকায় অনেক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। বিআইডিএসের অপর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকায় বছরে যেসব মানুষ মৃত্যুবরণ করেন তার মধ্যে  ১০.৮ শতাংশ মানুষ মারা যাচ্ছেন বায়ুদূষণে, অসংক্রামক রোগে। এর মধ্যে শ্বাসকষ্টে মারা যান ৮ শতাংশ, কিডনি রোগে ২.৩ শতাংশ ও ফুসফুসের রোগে মারা যাচ্ছেন ০.৫ শতাংশ মানুষ। 

‘অ্যাটমোসফেয়ারিক পারটিকুলেট ম্যাটার অ্যান্ড ব্লাক কার্বন ইন ঢাকা সিটি এ কন্ট্রিবিউটর টু ক্লাইমেট চেঞ্জ’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন গবেষক মিথিলা পারভীন। 

তিনি বলেন, ‘ঢাকায় বর্তমানে বায়ুতে কার্বনের উপস্থিতি রয়েছে ৬৫ মাইক্রো গ্রাম কিউবিক মিটার। কিন্তু সহনীয় মাত্রার কার্বন থাকা প্রয়োজন ২৫ মাইক্রো গ্রাম কিউবিক মিটার।’ 

বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে প্রত্যাশিত গড় আয়ু থেকে ২২ মাসের বেশি কমে যাচ্ছে বলেও মত প্রকাশ করেন এই গবেষক।


Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫